দুর্ভোগে পড়লেন গ্রাহকেরা

বাতিল নোটের নিষেধাজ্ঞায় বিভ্রান্তি ডাকঘরে

ডাকঘরে বাতিল নোট গ্রহণের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রকের নিষেধাজ্ঞাকে ঘিরে বিভ্রান্তিকে দুর্ভোগে পড়লেন বাসিন্দারা। বুধবার পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন ডাকঘরে গিয়ে বাসিন্দারা বাতিল নোট নেওয়া হবে না শুনে হতাশ হন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

জমা নিল না পুরনো ১০০০ ও ৫০০ টাকা। বুধবার বাঁকুড়া ডাকঘরে অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

ডাকঘরে বাতিল নোট গ্রহণের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রকের নিষেধাজ্ঞাকে ঘিরে বিভ্রান্তিকে দুর্ভোগে পড়লেন বাসিন্দারা। বুধবার পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন ডাকঘরে গিয়ে বাসিন্দারা বাতিল নোট নেওয়া হবে না শুনে হতাশ হন। কোথাও কোথাও আবার শুধু সেভিংস অ্যাকাউন্টে বাতিল টাকা নেওয়া হয়। যদিও রাজ্য ডাকবিভাগ সূত্রে বলা হয়েছে, সেভিংস অ্যাকাউন্ট ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে ডাকঘরে বাতিল নোট নেওয়া যাবে না বলে অর্থমন্ত্রক জানিয়েছে বলে তারা শুনেছিলেন ঠিকই। কিন্তু কেন্দ্রীয় ডাকবিভাগ থেকে এমন নির্দেশ এ দিন সকালের দিকেও রাজ্য ডাকবিভাগের কাছে আসেনি। ফলে তারাও জেলায়-জেলায় ওই রকম নির্দেশ দেননি। সে ক্ষেত্রে ডাকঘরগুলি এ দিন গ্রাহকদের না ফিরিয়ে তাদের কাছ থেকে বাতিল নোট নিতে পারত।

Advertisement

পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি, গ্রামীণ, সমবায় প্রভৃতি ব্যাঙ্ক থাকলেও বহু মানুষের কাছে এখনও সঞ্চয়ের ঠিকানা কাছাকাছি ডাকঘর। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১০০০ ও ৫০০ টাকার পুরনো নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পর থেকেই দুই জেলারই ডাকঘরগুলিতে সেই নোট ভাঙানো বা অ্যাকাউন্টে জমা করার দীর্ঘলাইন দেখা গিয়েছিল। কেন্দ্র সরকার ঘোষণা করে‌ছিল, ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরনো টাকা নেওয়া হবে। সেই মতো ভিড় এড়াতে অনেকেই পরে গিয়ে টাকা জমা দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে এ দিন সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় রটে যায়, মঙ্গলবার কেন্দ্রের অর্থ দফতরের একটি নির্দেশিকায় জানিয়ে দিয়েছে, বুধবার থেকে ডাকঘরে বাতিল নোটে টাকা জমা নেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

আর এই নির্দেশকে ঘিরেই বিভ্রান্তি ছড়ায়। বাঁকুড়া জেলা ডাকঘরের এক কর্তা এ দিন সকালে দাবি করেন, ‘‘অর্থ দফতরের নির্দেশে সাফ বলা হয়েছে বাতিল হওয়া নোট ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের খাতায় জমা নেওয়া যাবে না। ফলে ওই নোট কোনও ক্ষেত্রেই এ দিন জমা নেওয়া হচ্ছে না।’’ বস্তুত এ দিন বাঁকুড়া জেলার অধিকাংশ ডাকঘরেই বাতিল নোট কোনও খাতেই জমা নেওয়া হয়নি।

Advertisement

আবার পুরুলিয়ার পোস্টাল সুপারিন্টেডেন্ট তপন চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘‘জেলা সদর-সহ ৩২টি সাব-পোস্ট অফিস থেকেই পুরনো নোট জমা এবং বদল হচ্ছে। কোথাও কোন সমস্যা নেই।’’ তিনি স্বাভাবিক ভাবে কাজ চলার দাবি করলেও গ্রামাঞ্চলের ডাকঘরগুলি ঘুরে উল্টো চিত্রই পাওয়া গিয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শোনা গিয়েছে, সেভিংস ছাড়া অন্যান্য খাতে ডাকঘরে বাতিল নোট জমা করা হচ্ছে না।

খোদ ডাকবিভাগের কর্মীরাই এ দিন চরম বিভ্রান্তিতে থাকায় দুর্ভোগ জোটে আমজনতার।

মানবাজার সাব পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার সত্যজীবন রায় গ্রাহকদের জানিয়ে দেন, ‘‘সেভিংস অ্যাকাউন্ট বাদ দিয়ে অন্যান্য সমস্ত অ্যাকাউন্টে পুরনো নোট না নেওয়ার নির্দেশ এসেছে। আমি নির্দেশ মেনেই কাজ করছি।’’ কেন হঠাৎ এই নির্দেশ, গ্রাহকদের তার সদুত্তর দিতে দিতে পোস্টমাস্টার নাজেহাল।

এ দিন মানবাজার সাব পোস্টঅফিসে গিয়ে দেখা গেল, ডাক বিভাগের কয়েকজন এজেন্ট বারান্দায় উত্তেজিত ভাবে জটলা করছেন। তাঁদের মধ্যে প্রদীপ ধবলবাবু, বিজয় দাস বলেন, ‘‘কয়েকজন গ্রাহকের স্বল্প সঞ্চয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা জমা করতে এসে শুনছি পুরনো নোট নেওয়া হবে না। আগে জানলে গ্রাহকদের কাছ থেকে পুরনো টাকা নিতাম না।’’

মানবাজারের বাসিন্দা পলাশবরণ মাহাতো বলেন, ‘‘জমিতে ধান কাটার কাজ চলছে। পোস্ট অফিসে কিছু বাতিল টাকা বদল করতে এসেছিলাম। এখানে এসে শুনছি পুরনো নোট বদল হচ্ছে না। এখন কী ভাবে কৃষিশ্রমিকদের মজুরি মেটাব বুঝতে পারছি না।’’ একই ভোগান্তির শিকার হুড়ার বাসিন্দা ঝুমা কর। হুড়া সাব-পোস্টঅফিসের পোস্টমাস্টার নিমাই মণ্ডল বলেন, ‘‘নির্দেশ পেয়েই আমরা সেভিংস ছাড়া ডাকঘরের অন্যান্য প্রকল্পে পুরনো নোট নিচ্ছি না।’’ যদিও জেলা ডাকবিভাগ জানাচ্ছেন, এমন কোনও নির্দেশ তাঁরা সাব-ডাকঘরে পাঠাননি।

বাঁকুড়া জেলার যে সব ডাকঘরে খোঁজ নেওয়া গিয়েছে, সেখানেই শোনা গিয়েছে বাতিল নোট এ দিন থেকে জমা নেওয়া বন্ধ। ফলে গ্রাহকদের বাতিল নোট নিয়ে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। এই নির্দেশের কথা শুনে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বাঁকুড়ার গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের। বড়জোড়ার কামারশোল এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলের কথায়, “আমার শুধু ডাকঘরেই অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আমি বয়স্ক মানুষ। ভেবেছিলাম ভিড় কমলে টাকা ভাঙাতে যাব। এখন ডাকঘরে বাতিল হওয়া টাকা জমা না নেয় তাহলে আমি কোথায় সেই টাকা জমা দেব?’’

একই প্রশ্ন তুলেছেন বিষ্ণুপুর শহরের এক মুদি ব্যবসায়ী। তাঁরও ডাকঘর ছাড়া কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। বাড়িতে ব্যবসার প্রায় এক লক্ষ টাকার বাতিল নোট রয়েছে। তিনি নির্দেশ ঘিরে বিভ্রান্তিতে এ দিন দুঃশ্চিন্তায় হাবু়ডুবু খান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন