মাওবাদী ও জনগণের কমিটির নামে পোস্টার পড়ল বলরামপুরের কর্মায়।
জনগণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতোর সাজার প্রতিবাদে বন্ধের ডাক দিয়ে এ বার পোস্টার পড়ল পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে। একদা মাওবাদী উপদ্রুত অঞ্চল বলে চিহ্নিত বলরামপুরের ঘাটবেড়া-কেরোয়া এলাকার বিভিন্ন গ্রামে শনিবার সকালে পোস্টারগুলি বাসিন্দাদের চোখে পড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিপিআই (মাওবাদী) ও পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটি নামাঙ্কিত পোস্টারগুলিতে লেখা ছিল, গণআন্দোলনকারী ও রাজনৈতিক আন্দোলনকারীদের দেশদ্রোহী সাজিয়ে সাজার বিরুদ্ধে আগামী সোমবার ১২ ঘণ্টা জঙ্গলমহলে বন্ধ ডাকা হয়েছে। কোনওটায় লেখা ‘ছত্রধর-সহ ছ’জনের সাজার প্রতিবাদে ২৫ মে ১২ ঘণ্টা জঙ্গলমহল বন্ধ সফল করুন’।
গত ১৫ মে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির বাগমারির জঙ্গলে ছত্রধরদের যাবজ্জীবন সাজার প্রতিবাদের বেশ কিছু সিপিআই (মাওবাদী) নামাঙ্কিত পোস্টার মেলে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের নেতাদের নামে সমালোচনা করা হয় তাতে। তবে পুলিশ জানিয়েছিল, মাওবাদীদের কাজ নয়। স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী ওই পোস্টার দিয়ে থাকতে পারে। এর কিছু দিন পরে ঝাড়গ্রামেও ছত্রধরদের মুক্তির দাবিতে পোবোস্টার পড়ে। কিন্তু কোথাও বন্ধের ডাক দেওয়া হয়নি। তাই এ দিন পুরুলিয়ায় বন্ধের ডাক দেওয়া পোস্টারে নতুনত্ব রয়েছে বলে জানাচ্ছেন পুলিশের কিছু আধিকারিক।
তবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ মোটেই এই পোস্টারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘এ দিন মাওবাদী ও পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটি নামাঙ্কিত কিছু পোস্টার মিলেছে। পোস্টরগুলিতে কী রয়েছে তা বলা যাবে না। আমরা বিষয়টি দেখছি। এলাকায় পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।’’
এ দিন সাত সকালে বলরামপুরের যুগিডি, কর্মা, উরমা স্টেশন সংলগ্ন এলাকা ও বড়উরমা মোড়ের অদূরে পুরুলিয়া-জামশেদপুর জাতীয় সড়কের পাশে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের কাছে পোস্টারগুলি চোখে পড়ে। এই কার্যালয়েই ওঠাবসা করেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। তিনি নিজেও এই এলাকার বাসিন্দা। তবে সাদা কাগজের উপর লাল ও নীল কালিতে লেখা পোস্টারগুলি কারা সাঁটিয়ে গিয়েছে তা নিয়ে সৃষ্টিধরবাবু ও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব কিছু জানাতে পারেননি। খবর পেয়ে পুলিশ কর্মীরা পোস্টরগুলি সরিয়ে নিয়ে যান। উল্লেখ্য, যখন মাওবাদী আন্দোলনে জেলা উত্তাল সে সময় বালরামপুরের ঘাটবেড়া-কেরোয়ার কিছু এলাকা ছিল মাওবাদীদের কার্যত মুক্তাঞ্চল। ফের সেই এলাকাতেই এ দিন পোস্টরগুলি চোখে পড়েছে।
গত এপ্রিলেই বলরামপুরে সভা করেন তৃণমূলের তরফে জঙ্গলমহলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। বলরামপুর বাসস্ট্যান্ডের সভায় তিনি মানুষের কাছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। ২০০৯ সালের প্রথম দিক থেকে এই বলরামপুর এলাকাতেই গড়ে উঠেছিল আদিবাসী মূলবাসী জনগণের কমিটি। আন্দোলন তীব্র হওয়ার পরেও এই এলাকায় পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জননগণের কমিটি নামে কোনও কমিটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ দিনই প্রথম এই পোস্টারে এই কমিটি নাম এখানে দেখা গেল।
এ নিয়ে সৃষ্টিধরবাবু বলেন, ‘একদা যে সব দাবিকে সামনে রেখে মাওবাদীরা এলাকায় পা রেখেছিল, আজ তার অনেকগুলিই পূরণ হওয়ার পথে। জঙ্গলমহলে কত উন্নয়নের কাজ চলছে। তবু কিছু মানুষ যাঁরা এই উন্নয়্র বিরোধী, তারাই নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে এ সব করে ঘোঁট পাকাতে চাইছে। কিন্তু মানুষ এ সব বরদাস্ত করবে না।’’
তিনি দাবি করেন, ‘‘আগেও এই রকম বন্ধে বলরামপুর সাড়া দেয়নি, এ বারও সাড়া মিলবে না।’’