শান্তিনিকেতনে জমে উঠেছে বিকিকিনি। শুক্রবার ছবি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
একসময় নন্দলাল, রামকিঙ্কর আর তাঁদের ছাত্রছাত্রীরা পৌষউৎসব এলে মেলার মাঠে নেমে পড়তেন মেলা সাজাতে। কেবল কলাভবন নয়, গ্রামীণ শিল্পের ছোঁয়ায় মেলা সাজাতে হাত লাগাত সারা শান্তিনিকেতন। বাউলের আখড়া আর কীর্তনের আসরের ফাঁকে দিব্য রাঙামাটির শিল্পের পসরা নিয়ে এসে বসতেন শিল্পীরা। সে সব হারিয়ে যাওয়া শিল্পের ছোঁয়া নিয়েই নিজস্ব চরিত্রে ফিরতে চাইছে শান্তিনিকেতন পৌষমেলা। এ বারের মেলাতেও সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াচ। বিভিন্ন স্টলের নান্দনিক বিন্যাস এবং মেলার সার্বিক উপস্থাপনা দর্শক ও পর্যকটকদের আনন্দ দিয়েছে। এ বার অনেকেরই দাবি, চোখের আরাম দিয়েছে এ বারের পৌষমেলা। কেউ কেউ বলছেন, মেলা সাজানোর দায়িত্ব কলাভবনের হাতে দিলেই হয়।
‘‘শান্তি নিকেতনের পৌষমেলাকে সাজানোর দায়িত্ব কলাভবনের হাতে দিলে মেলাটি বৈচিত্রময় দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠবে। পৌষমেলা তো মূলত গ্রামীণ মেলা। এবং গ্রামীণ শিল্প ও সংস্কৃতি এই মেলার বিশেষ অঙ্গ। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ওই মেলাতে বহুজাতিক সংস্থা নানা স্টল দিয়েছে। সেগুলি বাদ দিলে ভাল হয়।’’ বলছিলেন বিশ্বভারতী কলাভবনের প্রাক্তন অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ তথা বিশিষ্ট চিত্রকর যোগেন চৌধুরী।
পৌষ মেলাকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলার দায়িত্ব পেতেন শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু। তাঁর ছাত্র রামকিঙ্করও বহুদিন পৌষ মেলা সাজানোর কাজে হাত লাগিয়েছিলেন। পৌষমেলায় নন্দলালের পোস্টকার্ড প্রদর্শনীর কথা মেলে ১৩৩০ বঙ্গাব্দের মেলায়। সে বার পৌষমেলায় কলাভবনে ভারতীয় শিল্পকলার একটি প্রদর্শনী হয়েছিল। প্রাক্তন ছাত্রদের সভার পরে নন্দলাল অতিথিদের পোস্টকার্ড ও ছবি দেখান। তাঁরা কলাভবনের মেয়েদের তৈরি শিল্প সামগ্রীর প্রশংসা করেন। কলাভবনের এমন উদ্যোগেরই আরও বেশি করে ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন কেউ কেউ।
এ বছর পৌষমেলায় কোনও বহুজাতিক সংস্থাকে ষ্টল করতে দেওয়া হয়নি।
বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, এবারে নিয়ম মেনে মেলার ষ্টলগুলির দূরত্ব বজায় রাখা হয়েছে। যোগেনবাবুদের পরামর্শ অনেকদিন পর বাস্তবায়িত হতে চলেছে। এ বার মেলায় বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ভবন ও বিভাগের চোদ্দোটি প্রদর্শনীর স্টল সাজিয়েছে কলাভবন। স্টলের এলাকায় একটি বড় ফাঁকা জায়গায় খোলা আকাশের নীচে পরিবেশ ভিত্তিক দুটি ভাস্কর্য রয়েছে। একটি হল খড়ের তৈরি এক মহিলার ভাস্কর্য। অন্যটি হল সুতোর কাজ করা ফুল ও প্রজাপতির ভাস্কর্য। দুটি ভাস্কর্যই দর্শকদের দৃষ্টি কেড়েছে। কলাভবনের ছাত্র মাসুদ আলি ওই ভাস্কর্য দুটি তৈরি করেছেন।
কলাভবনের অধ্যাপক শিশির সাহানা প্রদর্শনীর স্টলগুলি সাজাতে পেরে আনন্দিত। খুশি পৌষমেলা সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক তথা বিশ্বভারতীর কর্মীসভার সভাপতি গগন সরকারও। তিনি বলেন, ‘‘আগামীতে এই মেলাকে আরও দৃষ্টিনন্দন করে তোলার জন্য কলাভবনের সাহায্য নেওয়া হবে।’’
অন্যদিকে মেলার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে গতবছর জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছিলেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। তিনি এ দিন টেলিফোনে বলেন, ‘‘পৌষমেলা যাতে তিনদিনের বেশি না থাকে সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে নজর রাখতে হবে। পরিবেশ আদালতের নির্দেশ ঠিকমতো মানা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’