তিতলি বুঝি ডোবাল, শঙ্কা মণ্ডপে

গত কয়েক বছর ধরেই পুরুলিয়া জেলার বেশ কিছু মণ্ডপে পঞ্চমী ও ষষ্ঠীতেই উদ্বোধন হয়ে যাচ্ছে। ফলে সেই সব পুজোর শিল্পীদের এখন কার্যত নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। তার মধ্যে নিম্নচাপের ভ্রুকুটি রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৪৯
Share:

সতর্কতা: বৃষ্টি থেকে বাঁচতে পুরুলিয়ার রথতলা সর্বজনীনের মণ্ডপ প্লাস্টিকে মুড়ে ফেলা হল।ছবি: সুজিত মাহাতো ও অভিজিৎ সিংহ

তিতলি-আতঙ্কে পুজো উদ্যোক্তরা। মেঘলা আকাশ, মাঝে মধ্যে ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার দুই জেলার মণ্ডপ বাঁচাতে হিমশিম খেলেন পুজোর কর্মকর্তারা। প্রতিমার শেষ মুহূর্তের রঙের পোঁচ শুকোতে একই অবস্থা মৃৎশিল্পীদেরও। ঘন ঘন টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে নিম্নচাপ ‘তিতলি’-র মেজাজ আঁচের চেষ্টা চালাচ্ছেন সবাই। শুধু কি তাঁরাই? পুজোর মুখে তেড়ে বৃষ্টি এলে সব ভেস্তে যাবে বলে ইতিমধ্যেই কপাল চাপড়াতে শুরু করেছেন মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরার পরিকল্পনা করা আমজনতাও।

Advertisement

গত কয়েক বছর ধরেই পুরুলিয়া জেলার বেশ কিছু মণ্ডপে পঞ্চমী ও ষষ্ঠীতেই উদ্বোধন হয়ে যাচ্ছে। ফলে সেই সব পুজোর শিল্পীদের এখন কার্যত নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। তার মধ্যে নিম্নচাপের ভ্রুকুটি রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। নিতুড়িয়া ব্লকের ভামুরিয়া গ্রামের বাথানেশ্বর সর্বজনীনের পুজোর উদ্বোধন হবে শনিবার চতুর্থীতে। বুধবার বিকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিতে মণ্ডপসজ্জার শেষ বেলার কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান পুজো কমিটির সম্পাদক হীরালাল মাজি। পরিবেশ বান্ধব পুজো করতে গিয়ে তাঁরা মাটি ও খড় দিয়ে মণ্ডপ তৈরিতে জোর দিয়েছেন। কিন্তু, নিম্নচাপ তাঁদের ঘোর চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

নিতুড়িয়ার আর একটি বড় পুজো উদ্যোক্তা নিতুড়িয়া-দুবেশ্বরী সর্বজনীন হিমাচল প্রদেশের একটি শিবমন্দিরের ধাঁচে বিশাল আকারের মণ্ডপ গড়েছে। মণ্ডপ সজ্জায় ব্যবহার করা হচ্ছে ঝিনুক। কমিটির সম্পাদক বুলা পান্ডে জানান, পঞ্চমী কিংবা ষষ্ঠীতে তাঁদের পুজোর উদ্বোধন হবে। কিন্তু বৃষ্টিতে তাঁরাও বিপাকে। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবারের মধ্যে মণ্ডপ তৈরির কথা জানিয়েছিলেন শিল্পীরা। কিন্তু বুধবার রাতে কোনও কাজই হয়নি। শেষ পর্যন্ত কী হবে বুঝতে পারছি না!” রঘুনাথপুরের মুন্সেফডাঙা সর্বজনীনের সভাপতি তথা রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, শনিবার পর্যন্ত এই রকম চললে মণ্ডপের কাজ শেষ করাটা যথেষ্ট কষ্টকর হবে।

Advertisement

সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বড়মাপের পুজো করছে পুরুলিয়া শহরের আমডিহা সর্বজনীন। তাদের থিম— নারীশক্তির প্রকাশ ও শিশু সুরক্ষা। থিম ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন রঙে আঁকা ছবি। মণ্ডপ শিল্পী অজিত কুণ্ডু ও কমিটির কর্মকর্তা সলিলকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘রঙে আঁকা ছবি ও থার্মোকলের কাজে থিম ফুটিয়ে তোলার কাজে শেষ বেলায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বৃষ্টি।”

রথতলা সর্বজনীনের এ বার থিম কপিধ্বজ রথ। কমিটির কর্মকর্তা শ্রীমন সরকার জানান, বৃষ্টিতে রং শুকোতে শোচনীয় অবস্থা। রজত জয়ন্তীতে দেশবন্ধু রোড সর্বজনীনের থিম বিয়ে। টোপর, বরণডালা, কড়ির মতো বিয়ের সামগ্রী তৈরি করে মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে। কিন্তু, নাগাড় বৃষ্টিতে ‘বিয়ে’ পণ্ড হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন উদ্যোক্তারা। ঝালদা আনন্দবাজার সর্বজনীনের কর্মকর্তা আনন্দ কাঁদু বলেন, ‘‘খবরে দেখছি শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। মণ্ডপ শেষ করা যাবে কি না সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।”

সুবর্ণজয়ন্তীতে বাঁকুড়ার লালবাজার সর্বজনীন শহরের রাস্তায় আলোকসজ্জার বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু, বৃষ্টি দেখে পুজো কমিটির সম্পাদক গৌতম দাস বলেন, “নিম্নচাপের মেঘ কবে কাটে সে দিকেই তাকিয়ে আমরা।” সিনেমারোড সর্বজনীন পুজো কমিটির সদস্য রুদ্র চৌধুরী জানাচ্ছেন, তাঁদের মণ্ডপ তৈরির কাজ অনেকটাই বাকি। বৃষ্টিতে কাজের গতি শ্লথ হচ্ছে। হরেশ্বর মেলা দুর্গাপুজোর থিম শিল্পী বিলাস দেবনাথ বলেন, ‘‘খোলা আকাশের নীচে রয়েছে নানা মডেল। বৃষ্টিতে রং ধুয়ে গেলে সর্বনাশ হবে।’’ বিষ্ণুপুরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সর্বজনীন পুজো কমিটি শিশুদের মন টানতে এ বার সার্কাস থিম বানিয়েছে। বৃষ্টির ফলে থিমের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তাঁরাও। নিম্নচাপ জাঁকিয়ে বসলে বৃষ্টির মধ্যে প্রতিমা কী ভাবে মণ্ডপে পৌঁছবে, তা নিয়ে উদ্বেগে বাঁকুড়ার মৃৎশিল্পী শ্যামসুন্দর চন্দ ও বিষ্ণুপুরের মৃৎশিল্পী অশোক সূত্রধরেরা।

নিম্নচাপেই কিছুটা স্বস্তিতে বিষ্ণুপুরের তিলবাড়ি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সদস্যেরা। থিম বিষ্ণুপুরের রাজবাড়ি। থিমকে ফুটিয়ে তুলতেই রাজবাড়ির ছাদে কিছু গাছ বসানো হয়েছিল। রোদে গাছগুলি নেতিয়ে গিয়েছিল। পুজো কমিটির সম্পাদক শঙ্খদীপ রায় বলছেন, “থিমের কিছুটা ক্ষতি হলেও বৃষ্টিতে গাছগুলিতো বাঁচল। এটা মনে করেই কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি।” কিন্তু, সবাই চাইছেন, দূরে উড়ে যাক তিতলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন