বিরাট দুর্গা, এসি-মণ্ডপে তৈরি বাঁকুড়া

দেশপ্রিয় পার্কের সুউচ্চ দুর্গা প্রতিমা দেখতে অনেকেই বাঁকুড়া থেকে কলকাতায় গিয়েছিলেন। তবে মাত্রাধিক ভিড়ের জেরে সে বার পুজো শুরুর আগেই প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছিল দেশপ্রিয় পার্কের পুজো।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৩২
Share:

মায়াবী: সাজছে লালবাজার সর্বজনীনের মণ্ডপ। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

এ বারও নতুনত্ব নিয়ে হাজির বাঁকুড়া শহরের পুজো কমিটিগুলি।

Advertisement

দেশপ্রিয় পার্কের সুউচ্চ দুর্গা প্রতিমা দেখতে অনেকেই বাঁকুড়া থেকে কলকাতায় গিয়েছিলেন। তবে মাত্রাধিক ভিড়ের জেরে সে বার পুজো শুরুর আগেই প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছিল দেশপ্রিয় পার্কের পুজো। তাই প্রতিমা দেখার সুযোগই পাননি অনেকে। সেই খেদ মেটাতে এ বার বিশালাকায় দুর্গা প্রতিমাকেই থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে বাঁকুড়ার সিনেমা রোড সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। ওই দুর্গাপুজো কমিটির অন্যতম সদস্য রুদ্র চৌধুরী জানাচ্ছেন, বাঁকুড়ার মৃৎশিল্পী শ্যামসুন্দর চন্দ ৪০ ফুটের দুর্গা মূর্তি গড়ছেন। মূর্তি তৈরিতে সাহায্যের জন্য কৃষ্ণনগর থেকে সহযোগী শিল্পী এনেছেন তিনি।

শ্যামসুন্দরবাবু বলেন, ‘‘এত বড় দুর্গা প্রতিমা জেলায় আগে কখনও হয়নি। পুজো কমিটির উদ্যোগ খুবই অভিনব।’’ রুদ্রবাবু বলেন, ‘‘এখানকার অনেকেই দেশপ্রিয় পার্কের প্রতিমা দেখার ইচ্ছে নিয়ে কলকাতায় গেলেও ঝামেলার জন্য পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের আশা মেটেনি। অনেকের আক্ষেপ ছিল। আমাদের মণ্ডপে এলে তাঁদের সেই দুঃখ কেটে যাবে।’’

Advertisement

ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া শহর জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে এই সুউচ্চ দুর্গা। ঠাকুর দেখতে পুজো মণ্ডপে যে সাধারণ মানুষের ভিড় আছড়ে পড়তে চলেছে তা এখন থেকেই টের পাচ্ছেন পুজো কর্তারা। এ নিয়ে আগাম সতর্কতাও নিচ্ছেন তাঁরা।

পুজো কমিটির সম্পাদক গৌতম দাস বলেন, ‘‘ভিড় সামলাতে ২০০ স্বেচ্ছাসেবক রাখব আমরা। ভিড়ের চাপ সামলাতে মণ্ডপ সংলগ্ন রাস্তার আশপাশের পাঁচিল ভেঙে যতটা পারা যায় রাস্তা চওড়া করেছি আমরা। পুলিশ ও প্রশাসনও আমাদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।’’ ভিড় সামলে ওঠা যাবে বলেই আশাবাদী পুজো কর্তারা।

এ বারও অভিনবত্বে বড়সড় চমক দিতে চলেছে বাঁকুড়ার লালবাজার সর্বজনীন। ‘দৈত্য গুহা’ থিমকে সামনে রেখে প্রায় ৫০ ফুটের বিশাল আকৃতির মণ্ডপ গড়া হছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, মণ্ডপের ভিতরে থাকবে চলমান দুর্গা। যেখানে দেবী মহিষাসুরকে বধ করার দৃশ্য দেখা যাবে। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে মণ্ডপের ভিতরে বাতানুকূল মেশিনও বসাতে চলেছেন পুজো কর্তারা। পুজো কমিটির সম্পাদক মনোজ সরকার বলেন, ‘‘ভিড়ের চাপে দর্শনার্থীদের যাতে গলদঘর্ম অবস্থা না হয়, সেই দিকটি ভেবেই এ বার মণ্ডপের ভিতর শীতাতপ করছি আমরা। এই তল্লাটে এসি-মণ্ডপের চল নেই।’’

বাঁকুড়ার ইঁদারাগড়া হরেশ্বরমেলা সর্বজনীনের এ বারের থিম ‘পুরানো সেই দিনের কথা’। পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ অরিন্দম দাস জানাচ্ছেন, বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা মোবাইল গেমের জেরে মাঠে খেলাধুলো করতে বেরোতে ভুলে গিয়েছে। কিত কিত খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো বা পুতুল খেলার বদলে এখন শিশুদের হাতে-হাতে মোবাইল। এটাই থিমের মাধ্যমে তুলে আনতে চেয়েছেন তাঁরা।

অন্য দিকে, কমরার মাঠ সর্বজনীনের থিমে তুলে আনা হচ্ছে দুষণ ও বিশ্ব উষ্ণায়ণকে। রবীন্দ্র সরণী সর্বজনীনের এ বারের থিম ‘ময়ূর মহল’। পুজো কমিটির মন্দিরের মধ্যে বাহারি রঙের ময়ূরের কাঠামো গড়া হচ্ছে। প্রণবানন্দপল্লি সর্বজনীনের এ বারের থিম— ‘স্বপ্নপুরী’। মাঠের মাঝখানে তৈরি করা হচ্ছে জাল দিয়ে গড়া বাহারি নীল-সাদা রঙের বহু হাঁসে ঘেরা মণ্ডপ। পুজো কমিটির সম্পাদক পীযূষ চক্রবর্তী ও সহকারী সম্পাদক রথীনকুমার দে বলেন, ‘‘দৃষ্টি মনোরম এই মণ্ডপে রাতের আলোয় এক অন্যরকমের সৌন্দর্য ফুটে উঠবে।’’

বাঁকুড়ার মধ্য কেন্দুয়াডিহির হোগলা পাতার মণ্ডপ ও নতুনচটি সর্বজনীনের বাঁশের মণ্ডপও নজর কাড়তে চলেছে দর্শনার্থীদের। বাঁকুড়ার পোয়াবাগান সর্বজনীনের এ বারের থিম ‘লাল মাটির বাঁকুড়া’। পুজো মণ্ডপে জেলার লোক শিল্প ও পর্যটন স্থানগুলির মডেল থাকছে।

পুজোর ক’টা দিন তাই টক্কর দিতে তাল ঠুকছে পুজো উদ্যোক্তরা। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরতে প্রস্তুত বাসিন্দারাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন