Panchayat Election 2018

তৃণমূলের পঙ্‌ক্তিভোজে বিজেপি, সিপিএম

নপাড়ার বাসিন্দা পাগল কালিন্দী বলেন, ‘‘আমি সিপিএমের কর্মী। আমার স্ত্রী এই গ্রামেই পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। কিন্তু গ্রামের সকলকে নিয়ে এই আয়োজনে আমিও যোগ দিয়েছি। এখানে আমরা সকলেই সমান।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৮ ০৪:১৭
Share:

পাত-পেড়ে: পুঞ্চার নপাড়া গ্রামে চলছে খাওয়াদাওয়া। নিজস্ব চিত্র

ভোট পর্বে পুঞ্চা দেখেছে সৌহার্দ্যের রাজনীতি। ভোটের পরে রবিবার সেই পুঞ্চায় তৃণমূলের পঙ্‌ক্তিভোজনেও দেখা মিলল রাজনৈতিক সৌজন্যের। তৃণমূল কর্মীদের পাশে বসেই বিজেপি কর্মী থেকে সিপিএমের কর্মীরা পাত পেড়ে ভাত-মাংস খেলেন। যা দেখিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করলেন, এটাই পুঞ্চার রাজনৈতিক সংস্কৃতি।

Advertisement

বাস্তবিক পুরুলিয়া জেলাতেই ভোটের সময় বোমা-বারুদের ইতিহাস ছিল না বললেই চলে। কিন্তু, এ বার পঞ্চায়েত ভোটে অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে পুরুলিয়াবাসীর। মনোনয়ন পর্বে বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা বাসুদেব আচারিয়ার উপরে হামলা থেকে ভোটের দিন রঘুনাথপুরে গুলি চলা, বাঘমুণ্ডিতে ভোটলুট থেকে রঘুনাথপুরে পুনর্গণনা দেখেছে এই জেলা।

কিন্তু, যে সব এলাকা এর মধ্যে ব্যতিক্রম থেকে গিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম পুঞ্চা। এখানে মনোনয়ন থেকে ভোট পর্যন্ত কোনও গোলমালের অভিযোগ তোলেননি বিরোধীরা। শুধু, গণনাকেন্দ্র চত্বরেই সিপিএমের প্রতীকে ছাপ দেওয়া কিছু ব্যালট পড়ে থাকা নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এলাকার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংস্কৃতিক ছায়ায় যা নেহাত ব্যতিক্রম বলেই মনে করছেন খোদ বিরোধীরাও।

Advertisement

প্রয়াত সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক নকুল মাহাতোর খাসতালুক পুঞ্চার সেই নপাড়ায় এখন তৃণমূলের আধিপত্য। জেলা তৃণমূলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় এখান থেকেই জেলা পরিষদের আসনে ১০ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছেন। এলাকাতেও তৃণমূলের ফল ভাল। সেই খুশিতেই স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরাই ওই পঙ্‌ক্তিভোজনের আয়োজন করেছিলেন।

স্থানীয় তৃণমূল নেতা অপরূপ সিংহ, কুণাল সেন প্রমুখ বলেন, ‘‘এ বারে আমরা নপাড়ায় তিনটি বুথেই জিতেছি। সে কারণেই এলাকার সবাইকে নিয়ে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেছিলাম। ভোট মিটে গিয়েছে। ব্যালটের লড়াই ব্যালটেই শেষ হয়েছে। এখন গ্রামে আমরা সকলেই সমান। বিরোধীদেরও আমরা সম্মানের সঙ্গেই এ দিন আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।’’

গ্রামের বিজেপি কর্মী গৌরাঙ্গ মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা গ্রামের ২ নম্বর বুথে তৃণমূলের কাছে হেরে গিয়েছি বটে, তবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছি। কিন্তু ভোটের লড়াই অন্য। এটা গ্রামের সবাইকে নিয়ে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। সেখানে সকলেই এসেছেন। আমিও এসেছি।’’ নপাড়ার বাসিন্দা পাগল কালিন্দী বলেন, ‘‘আমি সিপিএমের কর্মী। আমার স্ত্রী এই গ্রামেই পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। কিন্তু গ্রামের সকলকে নিয়ে এই আয়োজনে আমিও যোগ দিয়েছি। এখানে আমরা সকলেই সমান।’’

সেই সৌহার্দ্যের সুর শোনা গিয়েছে সুজয়বাবুর বিরুদ্ধে থাকা বিজেপি প্রার্থী নীলৎপল সিংহের গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘এই এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ নেই। মনোনয়ন থেকে প্রচার, ভোটের দিন থেকে গণনা কোথাও শাসকদলের কাছে বাধা পাইনি।’’ পুঞ্চার ব্লক কংগ্রেস সভাপতি বারিদবরণ মাহাতোও জানাচ্ছেন, অশান্তির পরিবেশ কোনও কালেই ভোটের সময় পুঞ্চায় ছিল না। এখনও নেই। সিপিএম নেতা তথা প্রার্থী বিপত্তারণ শেখরবাবু দাবি করেন, ‘‘সন্ত্রাসের সংস্কৃতি এখানে বাম আমলে ছিল না। এখনও নেই। তবে ভোটের পরে কারচুপি হয়েছে। প্রশাসনও তাতে সহায়তা করেছে।’’

যদিও সুজয়বাবুর কারচুপির অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি ভোটে সকলেই প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়। সেটাই হয়েছে। এই সংস্কৃতি আমাদের সবাইকে ধরে রাখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন