Purulia Medical College

ভূতে ধরেছে রোগিণীকে! মারের পরে মৃত্যু

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির জামিন অযোগ্য ৩০৪ ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। মঙ্গলবার অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হলে দু’দিন পুলিশ হেফাজত হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪ ০৭:৪৯
Share:

পুরুলিয়া মেডিক্যালে মঙ্গলবার পুলিশের নজরদারি। —নিজস্ব চিত্র।

রোগিণীকে ভূতে ধরেছে— এমনই দাবি করে পুরুলিয়া মেডিক্যালের মহিলা ওয়ার্ডে রোগিণীর চুলের মুঠি ধরে বেদম মারধরের অভিযোগ উঠল চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীর বিরুদ্ধে। সোমবার দুপুরে ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই রোগিণীর মৃত্যু হয়। মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই পুলিশ সুকান্ত নন্দী নামে ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে গ্রেফতার করে। মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষও পৃথক তদন্ত করছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সুপার সুকমল বিষই।তবে মহিলা ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকে রোগিণীর উপরে হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে খবর, রবিবার বিকেলে মানবাজার থানার কদমা গ্রামের বাসিন্দা সবিতা সিংহ সর্দার (৪৫) জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে পুরুলিয়া মেডিক্যালে ভর্তি হন। তিনি ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে ছিলেন।

অভিযোগ, সোমবার দুপুর ৩টে নাগাদ মেডিক্যালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সুকান্ত নন্দী ওই ওয়ার্ডে গিয়ে রোগিণীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন। সেই সময় সবিতার সঙ্গে ছিলেন তাঁর আত্মীয়া ময়না সিংহ ঠাকুর। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ব্যক্তি রোগিণীদের হাত ধরে পরীক্ষা করছিলেন দেখে ভেবেছিলাম, তিনি চিকিৎসক। তাঁকে সবিতাকে দেখে যেতে বলি। সবিতার সমস্যার কথা শুনে তিনি বলে, ওকে ভূতে ধরেছে। তারপরেই উনি সবিতার চুলের মুঠি ধরে মারধর শুরু করেন। বাধা দিলে উনি বলেন, মারধর করেই ভূত তাড়াতে হবে। মাথায়, গালে, কপালে এলোপাথাড়ি চড়-থাপ্পড় মেরে উনি চলে যান। ওঁকে চিকিৎসক ভেবে কাউকে কিছু বলিনি।’’ তিনি জানান, ঘণ্টাখানেক পরেও সবিতার হুঁশ না ফেরায় নার্সদের খবর দেন। তাঁরা এসে জানান, ওঁর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ওই ওয়ার্ডের অন্য রোগিণীরা জানান, সবিতাকে মারধর করা হলেও তাঁর সঙ্গী কিছু না বলায় তাঁরাও চুপ করেছিলেন।

Advertisement

মৃতের খুড়তুতো দাদা কাজল সিংহ সর্দার বলেন, ‘‘ভূতে ধরেছে বলে বোনকে বেদম মারধর করার পরেই তার মৃত্যু হল। এ বার তাঁর দু’টো শিশু সন্তানকে কে দেখবে?আমরা পুলিশে অভিযোগ করে ওই ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছি।’’

মেডিক্যালের সুপার সুকমল বিষই বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই রোগিণীর অবস্থা ভাল ছিল না। আমাদের একজন চুক্তিভিত্তিক সাফাই কর্মী রং মেখে ভিজিটিং আওয়ারে ওয়ার্ডে গিয়ে ওই রোগিণীকে মারধর করেন বলে শুনেছি। কী কারণে মৃত্যু হল, তা ময়না-তদন্তের রিপোর্টেই স্পষ্ট হবে। ওই ওয়ার্ডের নার্সরা রিপোর্ট করেছেন।রোগিণীর বাড়ির লোকজনও ওই স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।’’ তিনি জানান, ডিউটি শেষ হওয়ার পরেও স্বাস্থ্যকর্মী ওয়ার্ডে ঢুকেছিলেন। হাসপাতালও আলাদা ভাবে ঘটনার তদন্ত করছে।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির জামিন অযোগ্য ৩০৪ ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। মঙ্গলবার অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হলে দু’দিন পুলিশ হেফাজত হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন