পরিপূরক পুষ্টি নিয়ে প্রশ্ন জেলায়

১০০ মিলি দুধ, ১০ গ্রাম ‘পুষ্টিকর পানীয়’য়ের গুঁড়ো বা একচামচ সোয়ামিল্কের গুঁড়ো কিংবা ২০ গ্রাম করে পৌষ্টিক ছাতু— প্রতিটির খাদ্যগুণ কী এক!

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৭ ০১:০৬
Share:

পুষ্টি: দুবরাজপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুর জন্য দুধ ঢেলে দিচ্ছেন এক সদস্যা। নিজস্ব চিত্র

১০০ মিলি দুধ, ১০ গ্রাম ‘পুষ্টিকর পানীয়’য়ের গুঁড়ো বা একচামচ সোয়ামিল্কের গুঁড়ো কিংবা ২০ গ্রাম করে পৌষ্টিক ছাতু— প্রতিটির খাদ্যগুণ কী এক!

Advertisement

অঙ্গনওয়াড়ি শিশুদের পরিপূরক পুষ্টি যোগাতে জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মানলে একপ্রকার তেমনটাই দাঁড়ায়। দুবরাজপুর পুর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১৭৩ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বৃহস্পতি থেকে শনি তিন তিনদিন সকালে শিশুদের জন্য বরাদ্দ ১০০ মিলিগ্রাম করে গরম দুধ। মাত্র ১৫০ মিটার দূরে সাতকেন্দুরী ১২৫ নম্বর অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রের শিশুদের জন্য বরাদ্দ সপ্তাহে পাঁচদিন একচামচ করে সোয়া মিল্ক। দুবরাজপুর ব্লকের পারুলিয়া পঞ্চায়েতর করমকাল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশুদের প্রাপ্য সপ্তাহে ৫ দিন ২০ গ্রাম করে পৌষ্টিক ছাতু। যা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সমবায়ে তৈরি। নাম মিশ্রসুধা। আবার নানুর ব্লকের অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রের শিশুদের জন্য বরাদ্দ তিনদিন করে ১০ গ্রাম ‘পুষ্টিকর পানীয়’য়ের গুঁড়ো। সংখ্যাগরিষ্ট অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রে আবার চালু সিনি নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাঠানো নিউট্রিমিক্স!

শিশুদের পরিপূরক পুষ্টির এমন বিচিত্র ফিরিস্তি জেনে চমক লাগারই কথা। খুব স্বাভাবিকভাবেই যে প্রশ্নটা উঠে আসে, তা হল একটি নির্দিষ্ট দফতরের আওতায় যখন সবকটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তাহলে পরিপুরক পুষ্টি যোগাতে কেন এতরকম ভাবনা। কেন একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে না। সত্যিই কী সবকটি বিকল্পের পুষ্ঠিগুন একই। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) উমাশঙ্কর এস (যিনি নিজে একজন ডিগ্রিধারী চিকৎসক) বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমি মন্তব্য করব না।’’

Advertisement

তবে জেলাপ্রশাসনের শীর্ষকর্তা থেকে সংশিষ্ট দফতরের একাধিক কর্তা আড়ালে মানছেন বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে।

প্রসাশন সূত্রে খবর, পুষ্টি বৃদ্ধিতে সকালের টিফিন হিসাবে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের জন্য বরাদ্দ ২ টাকা। অভিযোগ, আগে সেই টাকায় কখনও কয়েকটা চিনে বাদাম কখনও বা দুটো বিস্কুট বা একটা কলা দিয়ে দায় সারতেন অধিকাংশ কর্মী। এর ফলে আসল উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে দেখে কয়েক বছর আগে জেলার ৪৬২২টি কেন্দ্রের সকল শিশুর জন্য পৌষ্টিক ছাতু বা নিউট্রিমিক্স দেওযার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। নিউট্রিমিক্স সরবরাহ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিনি। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যদিও এটা নিজেরা তৈরি করে না। এবং কী কী উৎপাদনে তৈরি ওই পৌষ্টিক ছাতু সেটাও প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে না। বছর দু’য়েক আগে থেকে নিউট্রিমিক্স-এর বদলে জেলার ছয়টি পুর এলাকায় থাকা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেগুলিতে ধাপে ধাপে সপ্তাহে তিন দিন ১০০ মিলি করে গরম দুধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।’’

কিন্তু যে সমবায় দুধ সরবরাহ করে, তাদের দুধ উৎপদানের পরিমাণ এত বেশি নয়, যে সবকটি কেন্দ্রে তা সরবরাহ করা সম্ভব। বরং ধাপে ধাপে কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দুধে ফ্যাটের পরিমাণ কমছে বলেও অভিযোগ আসা শুরু হয়। পুরএলাকায় এখনও ওই ব্যবস্থা চালু থাকলেও কিছু কেন্দ্রে বিকল্প ভাবনা নেয় প্রশাসন। ঠিক হয়, জেলার স্বনির্ভরগোষ্ঠীর মহিলা সদস্যদের সমবায় গড়ে একই ধরনের পৌষ্টিক ছাতু বা মিশ্রসুধা তৈরি করবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে সরবরাহ হবে। দুবরাজপুর, রামপুরহাট ১ ও মহম্মদবাজার এলাকার কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত এই ব্যবস্থা চালু হলেও বাকি অংশে করা যায়নি। এর মধ্যেই শুরু হয় কিছু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সোয়ামিল্ক ও হরলিক্স দেওয়া। প্রশ্নটা হল মাত্র ২ টাকা করে বরাদ্দ যেখানে, সেখানে ৭৬ টাকা কিলো দরে নিউট্রিমিক্স ২০ গ্রাম করে দেওয়া গেলেও ৪০০ টাকা কিলো দরের ‘পুষ্টিকর পানীয়’ বা সোয়া মিল্ক কিভাবে দেওয়া সম্ভব। এবং তার পরিমাণই বা কী হবে। বাস্তব সমস্যা হল শিশুদের সকালেই সোয়া মিল্ক বা হরলিক্স গুলে শিশুদের খাওয়ানোর নির্দেশ থাকলেও একচামচ(আনুমানিক ৫ গ্রাম) সোয়া মিল্কের গুঁড়ো বা খিচুড়ির সঙ্গে শিশুদের দেওয়া হচ্ছে বলে আড়ালে মানছেন অঙ্গওয়াড়ি কর্মীদের একাংশ। এতে অভিভাবকদেরও মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সম্প্রতি। সঠিক পরিকল্পনার প্রসঙ্গ উঠছে সেই কারণেই। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু পুষ্টি খাতে মার্চের শেষ দিন দফতরে ২ কোটি টাকা এসেছে। বরাদ্দ টাকার মধ্যে সকল শিশুর জন্য কোনও পরিকল্পনা কী নেওয়া যায় না। দফতরের কর্তাদের কথায় বরাদ্দ টাকায় কী ধরনের খাবার শিশুদের দেওয়া হলে আসল উদ্দেশ্য পূরণ হবে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে তা অবশ্যই করা যায়। জেলা সংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়িও সহমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি এককভাবে নয়, এই সিদ্ধান্ত নিলে জেলা প্রাশাসন নেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন