Rakhi

করোনার কোপ রাখির বাজারে

‘অনলাইন ডেলিভারি’-র সঙ্গে যুক্ত বাঁকুড়ার সোনামুখীর হিরালাল সাহা বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে পার্সেলের চাপ বেড়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২০ ০৭:২৯
Share:

বাছাই: পুরুলিয়া শহরের চকবাজারে। নিজস্ব চিত্র

আজ, সোমবার রাখি পূর্ণিমা। তার আগের দিনেও বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় বাজার জমল না। গত বারের তুলনায় অর্ধেক রাখিও এ বার বিক্রি হয়নি বলে জানাচ্ছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। তবে করোনা-আবহে অনলাইনে রাখি কেনা ও পাঠানোর ঝোঁক এ বার বেশ বেড়েছে।

Advertisement

‘অনলাইন ডেলিভারি’-র সঙ্গে যুক্ত বাঁকুড়ার সোনামুখীর হিরালাল সাহা বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে পার্সেলের চাপ বেড়েছিল। রাখির আগে সেই চাপ কয়েক গুন বেড়েছে।’’ বড়জোড়ার পূজা মণ্ডল বলেন, ‘‘এ বার রাখি, উপহার সব অনলাইনে আনিয়েছি। বাইরে বড় বাজারে যেতে সাহস হয়নি।’’ ইঁদপুরের শিপ্রা দত্ত ও পায়েল দাস জানান, উল আর বিভিন্ন ধরনের রঙিন সুতো দিয়ে বাড়িতেই রাখি তৈরি করেছেন তাঁরা।

এ দিকে, বাঁকুড়া শহরের বড়কালীতলার ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ চট্যোপাধ্যায় আক্ষেপ করছেন, ‘‘রাখির কোনও আমেজই নেই। উৎসবটা জলে গেল।’’ ইঁদপুরের বাংলা বাজারের ব্যবসায়ী চিরঞ্জিৎ মণ্ডল এ বার কোনও রাখিই আনাননি। পাত্রসায়রের মিষ্টি আর চকোলেট ব্যাবসায়ী চন্দ্রদেব কুণ্ডু জানান, অন্য বছর এই সময়ে নানা দামের চকোলেট কেনার ধুম পড়ে যেত। এ বার বিক্রি ঠেকেছে তলানিতে।

Advertisement

পাঁচমুড়া বাজারের ব্যবসায়ী প্রদীপ দাস জানান, প্রতিবার রাখি কিনতে আসে প্রচুর স্কুল-কলেজের পড়ুয়া। এ বার করোনা-আবহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ রয়েছে। তাতেও বিক্রিবাটা ধাক্কা খেয়েছে। তবে রাজু রজক নামে খাতড়ার এক রাখি বিক্রেতা বলেন, ‘‘করোনা-পরিস্থিতির জন্য এ বার বাইরে থেকে রাখি আনা সম্ভব হয়নি। তবে শেষ দু’দিনে ভালই বিক্রি হয়েছে।’’

রাখির সাত দিন আগে থেকেই আদ্রা শহরে অস্থায়ী দোকান দেন রাহুল রজক। তিনি জানান, মাঝে ‘লকডাউন’-এ চার দিন দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম লকডাউন উঠলে লোকজন রাখি কিনতে আসবে। কিন্তু দু’দিনে মেরেকেটে গোটা পঞ্চাশ রাখি বিক্রি হয়েছে।” পুরুলিয়া শহরের চকবাজারের দোকানদার গৌতম চেল জানাচ্ছেন, আগে অবাঙালি লোকজন আগে থেকে ছবি দেখিয়ে নির্দিষ্ট রাখির ফরমায়েশ করতেন। এই বার তা পুরোপুরি বন্ধ। গৌতম বলেন, ‘‘এ বার যতটুকু বিক্রি হয়েছে, তা মূলত ১৫-১০ টাকা দামের রাখি।’’

মহকুমাসদর রঘুনাথপুর ও ঝালদাতে ছবিটা একই ছিল। রঘুনাথরপুরের পুরাতন বাজারের ব্যবসায়ী পূর্ণেন্দু কর জানান, গত বছর প্রায় চারশো রাখি এনেছিলেন। এই বার আগে থেকে আঁচ করে এনেছিলেন মোটে পঞ্চাশটি রাখি। আর দুই বোন বাড়িতে আরও পঞ্চাশটি বানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি জানান, রবিবার পর্যন্ত অর্ধেকের বেশি বিক্রি হয়নি। ঝালদায় রাখি আসে মূলত ঝাড়খণ্ডের রাঁচী থেকে। এ বার আমদানি কার্যত নেই। ঝালদার পুরনো থানার সামনের দোকানদার শালিগ্রাম দাঁ বলেন, ‘‘আসে সাত দিন আগে থেকে রাখি কিনে ডাকে দূরে দূরে পাঠাতেন অনেকে। এ বার সেটা প্রায় বন্ধ বললেই চলে।’’

উৎসব ম্রিয়মাণ ঘরের অন্দরেও। বাঁকুড়া শহরের নতুনগঞ্জের রাজীব খাণ্ডেলওয়াল বলেন, ‘‘বোনেরা কেউ আসতে পারেনি। রাখির কোনও প্রস্তুতি নেই।’’ পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহরের বাসিন্দা লোকনাথ দত্ত কর্মসূত্রে থাকেন কলকাতায়। তিনি জানান, প্রতি বছর রাখিতে রঘুনাথপুরে দিদির বাড়িতে আসেন। এ বার সেটা হচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন