Rampurhat

যজ্ঞের অছিলায় ধর্ষণ, জোড়া খুনে ফাঁসির আদেশ

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিচরণ তাঁদের বাড়িতে যজ্ঞ করার নির্দেশ দেয়। যজ্ঞ চলাকালীন বাড়ির মধ্যে অন্য কারও প্রবেশ নিষেধ করে দেয় ওই স্বঘোষিত ‘সাধুবাবা’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৪৭
Share:

ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত হরিচরণ দাসকে নিয়ে আসা হয়েছে রামপুরহাট আদালতে। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

মাকে ধর্ষণ করে খুন ও মেয়েকে খুনের দায়ে অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা শোনাল আদালত। মঙ্গলবার রামপুরহাট অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা আদালতের বিচারক গুরুদাস বিশ্বাস ওই সাজা শোনান। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম হরিচরণ দাস ওরফে সুনীল দাস। সাধুর বেশে ধর্মাচরণ করায় যুক্ত ওই ব্যক্তি হরিবাবা ওরফে স্বরূপবাবা নামেও পরিচিত ছিল। তার আদি বাড়ি সিউড়ি থানার পানুড়িয়া হলেও দীর্ঘদিন মল্লারপুর থানা এলাকার একটি আশ্রম দেখভাল করত সে।

Advertisement

সরকারি আইনজীবী উৎপল মুখোপাধ্যায় জানান, লকডাউনের সময়, ২০২০-র ১৭ মে দুপুরে মল্লারপুর এলাকায় নিজের বাড়ি থেকেই বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মহিলার দেহ উদ্ধার হয়। বাড়ির বারান্দাতেই ছিল একাদশ শ্রেণির ছাত্রী, ওই মহিলার কিশোরী মেয়ের মৃতদেহ। বাড়ির মালিককে পাওয়া যায়নি। মৃতার বোন তাঁর জামাইবাবুর নামে মল্লারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ১৯ মে মৃতার স্বামী থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মল্লারপুরের ওই আশ্রম থেকে এক মহিলাকে গ্রেফতার করে। তার পরেই ওই জোড়া খুনের নেপথ্যের প্রকৃত ঘটনা জানতে পারে পুলিশ।

সরকারি আইনজীবী জানান, ঘটনার চার বছর আগে কিশোরী মেয়ের শরীরে আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষতস্থানের দাগ মেটানোর জন্য মল্লারপুরের আশ্রমের ওই ‘সাধু’, হরিচরণের শরণাপন্ন হন ওই ব্যক্তি। হরিচরণের সঙ্গে সেই মতো ১ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছিল। কিশোরীর মা সাধুকে ৮৪ হাজার টাকাও দেন।

Advertisement

টাকা দেওয়া সত্ত্বেও পোড়া দাগ যাচ্ছে না দেখে ওই মহিলা টাকা ফেরত চান। সরকারি আইনজীবী জানান, এর পরেই হরিচরণ স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের কিশোরী মেয়েকে খুনের চক্রান্ত করে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিচরণ তাঁদের বাড়িতে যজ্ঞ করার নির্দেশ দেয়। যজ্ঞ চলাকালীন বাড়ির মধ্যে অন্য কারও প্রবেশ নিষেধ করে দেয় ওই স্বঘোষিত ‘সাধুবাবা’। যজ্ঞের উপাচার হিসেবে কাজুবাদাম বেটে রাখতে বলেছিল হরিচরণ। ১৫ মে রাতে যজ্ঞ শুরু হয়। কাজুবাদাম বাটার সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে স্বামী, স্ত্রী ও কিশোরী মেয়েকে বেঁহুশ করে দিয়ে আলাদা আলাদা ঘরে রেখে দেয় হরিচরণ।

রাতে ওই মহিলাকে হাত পা বেঁধে মুখে কাপড় বেঁধে হরিচরণ ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। বাধা দিতে গেলে বঁটি দিয়ে মহিলাকে খুন করে হরিচরণ। সরকারি আইনজীবী জানান, মহিলাকে খুন করার পরে বাড়ির মেঝের রক্ত ধুয়ে আশ্রমে ফিরে যায় হরিচরণ। আশ্রমে রক্তমাখা জামা কাপড় রেখে ওই রাতেই ওই বাড়িতে আসে সে।

সরকারি আইনজীবী জানান, ওই বাড়িতে ফিরে হরিচরণ দেখতে পায় কিশোরীর জ্ঞান ফিরেছে এবং সে মায়ের মৃতদেহ দেখতে পেয়েছে। এর পরেই হরিচরণ ওই কিশোরীকে জোর করে নীচের ঘরে নিয়ে গিয়ে মুখে কাপড় বেঁধে হাত পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে খুন করে। ওই ব্যক্তিকে এরপর অচৈতন্য অবস্থাতেই স্কুটিতে চাপিয়ে হরিচরণ সিউড়ি এলাকায় একটি আশ্রমে রেখে আসে।

সরকারি আইনজীবী জানান, ওই আশ্রমে ওই ব্যক্তিকে এক শিষ্যকে দিয়ে খুন করানোর পরিকল্পনা করে হরিচরণ। কিন্তু ওই শিষ্য রাজি না হওয়ায় ওই ব্যক্তিকে হরিচরণ মল্লারপুরে নিয়ে আসে। সেখানেই এসে ওই ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে খুনের ঘটনা জানতে পারেন। তার পরই তিনি মল্লারপুর থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেন। ততক্ষণে হরিচরণ মল্লারপুরের আশ্রম ছেড়ে পালিয়ে যায়। মাস দু’য়েক পরে ১৯ জুলাই তারাপীঠ থেকে হরিবাবা ওরফে হরিচরণ দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সরকারি আইনজীবী জানান, হরিচরণ তার অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। মামলায় বিচারক ৩০২ ধারায় ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ৩৭৬ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০১ ধারায় প্রমাণ লোপের চেষ্টায় দশ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশও দিয়েছেন।

এ দিন মামলার রায় শুনতে এসেছিলেন ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী ও মেয়েকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করার পরে আমাকেও খুন করতে চেয়েছিল হরিচরণ। চরম শাস্তি হিসেবে ওই সাধুবাবার ফাঁসি চেয়েছিলাম। আদালত ন্যায্য বিচার করেছে।’’ ফাঁসির নির্দেশ শোনার পরে রামপুরহাট আদালত থেকে জেল হেফাজতে যাওয়ার সময় হরিচরণ বলে, ‘‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন