পানাগড়-দুবরাজপুর রাজ্য সড়ক

অজয় সেতুর সংস্কার, যান নিয়ন্ত্রণে দুর্ভোগ

পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতুতে কাজ চলায় একমুখী করা হয়েছিল পথ। সেতু অভিমুখে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ এড়াতে জেলা পুলিশের ট্রাফিক হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল দিনভর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ইলামবাজ শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৫
Share:

বেনিয়ম: নির্দেশিকা না মেনেই চলাচল। —নিজস্ব চিত্র

ফের ইলামবাজারের অজয় সেতু সংস্কারে হাত পড়ল। তার জেরে বুধবার গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হল পানাগড়-দুবরাজপুর ১৪ নম্বর রাজ্য সড়কে। হল যানজটও।

Advertisement

পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতুতে কাজ চলায় একমুখী করা হয়েছিল পথ। সেতু অভিমুখে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ এড়াতে জেলা পুলিশের ট্রাফিক হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল দিনভর। তার পরেও এড়ানো যায়নি যানজট। রাস্তার ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে ট্রাক, ডাম্পার সহ ভারী যানবাহনকে। পূর্ত, সড়ক দফতরের কর্তারা অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন, দীর্ঘ সময় নয়, সংস্কারের জন্য বুধবার গোটাদিন, আরও বেশি হলে বৃহস্পতিবার একবেলা যানজট হতে পারে। বছর তিনেক আগে এই সেতু সংস্কার করেছিল একটি সংস্থা। তাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব শেষ হওয়ার আগে সেতুর কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত ‘এক্সপ্যানশন জয়েন্ট’ মেরামতির কাজ চলছে।

তবে, সেতু নিয়ে অন্য দুঃশ্চিন্তা রয়েছে দফতরের আধিকারিকদের। সেটা হল, জীর্ণ সেতুর পাশেই তৈরি হচ্ছে নতুন সেতু। কিন্তু, নিষেধ সত্বেও বিরামহীন ভারী যানবাহন যাতায়াত করছে জীর্ণ সেতু দিয়েই। ৫৬ বছরের পুরানো ইলামবাজারে অজয় সেতু নিয়ে তাই দু্শ্চিন্তা ইঞ্জিনিয়ারদের।

Advertisement

পূর্ত সড়কের (ডিভিশন ২) এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়া র অশোক কুমার বলছেন, ‘‘ক্ষয়িষ্ণু ওই সেতুর জন্য ওভারলোডিং মস্ত সমস্যা। নতুন সেতু তৈরি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু, সেটা তো রাতারাতি তৈরি সম্ভব নয়।’’ পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬২ সালের ১৭ জুন রাজ্য সড়কে অজয় নদের উপরে ইলামবাজারে বর্ধমান-বীরভূম সংযোগকারী ওই সেতুর নির্মিত হয়। বীরভূম-সহ আশপাশের কিছু জেলা তো বটেই, একাধিক রাজ্যের সঙ্গে কলকাতার অন্যতম যোগাযোগের মাধ্যম এই সেতু। প্রায় দু’দশক আগে এই রাস্তাটি খোলনলচে বদলে পানাগড়–মোরগ্রাম হাইওয়ের তকমা পাওয়ার পরে সেতুর উপরে যানবাহন বেড়ে গিয়েছিল কয়েকশো গুণ। দিনের পর দিন ক্ষমতার বাইরে ওই সেতু দিয়ে হাজারও পণ্যবাহী গাড়ি যাতায়াত করেছে।

সমস্যা হল, এত দিনের পুরনো সেতুটি ‘ক্যান্টিলিভার ব্যালান্স ব্রিজ’ নামক যে প্রযুক্তিতে তৈরি, তা বর্তমানে প্রায় অচল। যে ঠিকাদার সংস্থা বা এবং ইঞ্জিনিয়ারেরা সেটি তৈরি করেছিলেন, তাঁদের কেউ-ই আর নেই। দেশে বর্তমানে এমন সেতুর সংখ্যা মাত্র দু’টি। এই কারণে ৫৩৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কার যথেষ্ট সমস্যাজনক। ২০১৬ সালে অজয় সেতুতে দু’দফায় সংস্কারের কাজ হলেও প্রযুক্তিগত কারণেই সেতুটিকে আগের শক্তিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

স্থায়ী সমাধানের জন্য ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে একটিই পথ খোলা ছিল— অজয় নদের উপরে নতুন সেতু তৈরি করা। রাজ্য সরকারের ১০২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দের সেই নতুন সেতুর কাজই চলছে। কিন্তু, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও পুরানো সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলে ছেদ পড়েনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশাসনিক কর্তা বলছেন, ‘‘এখনও সেতুতে ওঠার আগেই জেলাশাসকের তরফে নির্দেশিকা জারি রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে গতি সর্বোচ্চ ২০ কিমি। ভারী যানবাহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সে সবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দশ চাকার ট্রাক থেকে ট্রেলার সবই চলছে। যেগুলির পণ্য সহ বাহনের ওজন ৩০ থেকে ৫৮ টন।’’

জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলছেন, ‘‘রাজ্য থেকেও ইলামবাজারের অজয় সেতুকে বিপজ্জনক বলা হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে কম ভারী যানবাহন একটা একটা করে ওই সেতুর উপর দিয়ে চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ জেলাশাসক জানান, ইতিমধ্যেই একটি টাক্সফোর্স গড়ে তোলা হয়েছে। মঙ্গলবার একটি বৈঠকও হয়েছে। জেলা পুলিশ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার এবং জেলা পরিবহণ দফতরের শীর্ষকর্তারা ছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে সেতুর উপর ভারী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে মিলিত নজরদারি রাখা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন