বিপদসীমা ছুঁল অজয়-হিংলো
flood

flood: খেত, রাস্তা পার করে উঠোনে জল

জেলার চারটি ব্লকের অজয় ও হিংলো লাগোয়া বেশ কিছু গ্রামে লাল সতর্কতা জারি হল। প্রায় দু’হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৪৭
Share:

হিংলো জলাধার থেকে জল ছাড়া হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।

বুধবার মাঝ রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের শিকাটিয়া ব্যারাজ থেকে অজয়ে ছাড়া প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার কিউসেক আর হিংলো থেকে ছাড়া প্রায় ৪৬ হাজার কিউসেক। নিম্নচাপের প্রভাবে ঝাড়খণ্ড ও লাগোয়া এলাকায় প্রবল বৃষ্টির জেরে এই পরিমাণ জল ছাড়ায় জেলার চারটি ব্লকের অজয় ও হিংলো লাগোয়া বেশ কিছু গ্রামে লাল সতর্কতা জারি হল। প্রায় দু’হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছে। জল বিপদসীমা পেরিয়ে যাচ্ছে কিনা সেই ব্যাপারে নজরদারি চালাচ্ছে সেচ দফতর।

Advertisement

অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, অজয় ইতিমধ্যে বিপদসীমা ছুঁয়েছে। হিংলোও বিপজ্জনক অবস্থায়। খয়রাশোল ও দুবরাজপুরের বেশ কয়েকটি গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। প্রশাসন নদী ঘেঁষা এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দু’হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে এনেছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেচের সুবিধার জন্য ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের শিকাটিয়ায় অজয়ের উপরে ব্যারাজ গড়ে তোলা হয়েছে। এমনিতেই অজয় বর্ষায় ফুলে ফেঁপে ওঠে। অতীতে বীরভূমের একাধিক গ্রামকে প্লাবিত করার ইতিহাস রয়েছে। ব্যারাজ গড়ে ওঠার পরে ঝাড়খণ্ডে অতিরিক্ত বৃষ্টির পরে বিপুল জল ছাড়া হলে সেটাও বীরভূম প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ বারে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিংলোর জল। এত অল্প সময়ের মধ্যে দুটি নদে এত জল ছাড়ায় সঙ্কট বেড়ে গিয়েছে। তাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পাওয়া যায়নি বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা।

Advertisement

সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শিবনাথ গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, দেওঘর প্লাবিত হয়েছে বলে শুনেছি। তাই শিকাটিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ জল ছাড়া হয়েছে। ঠিক একই ভাবে খয়রাশোলের হিংলো জলাধার থেকে রেকর্ড পরিমাণ জল ছাড়তে হয়েছে। এসডিও (হিংলো সেচ) সাধন গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বহু বছর হিংলো জলাধারের দায়িত্বে রয়েছি। কিন্তু, কখনও ১০টি গেট খুলতে হয়নি। জলের চাপ বিপুল বেড়ে যাওয়ায় সেটাই করতে হল।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, খয়রাশোলের পারশুণ্ডি, কেন্দ্রগড়িয়া ও পাঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েত, দুবরাজপুরের লোবা গ্রাম পঞ্চায়েত, ইলামবাজারের শীর্ষা, জয়দেব-কেঁদুলি, ঘুড়িষা ও ইলামাবাজার, নানুরের থুপসাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু অজয় ঘেঁষে থাকা এলাকা রয়েছে। সেই এলাকার মানুষের প্রধান চিন্তা নদীর দুর্বল পাড় নিয়ে। আবার এক দিকে অজয়, অন্য দিকে হিংলো ফুলে ওঠা দুই নদীর মধ্যবর্তী অংশের গ্রামগুলিও সঙ্কটে। খয়রাশোলের মুক্তিনগর বালিতা, চাপলা, পারুলবোনা পাহাড়পুর ও দুবরাজপুরের লোবা গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবীপুর চর ও পলাশডাঙা চর। ধান-জমি, ফসলের খেত, রাস্তা ছাপিয়ে শতাধিক বাড়ির উঠোনে পৌঁছে গিয়েছে অজয়ের জল। উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে পরিবারগুলি।

বিডিও (দুবরাজপুর) রাজা আদক, বিডিও (খয়রাশোল) পৃত্থীশ দাস বলছেন, ‘‘দুটি নদে প্রবল জল বেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে পুলিশও। অনেককে সরিয়ে আনা গিয়েছে নিরাপদ জায়গায়। তবে রাতে জল বাড়লে সমস্যা হবে।’’

তবে বাস্তব পরিস্থিতি হল, হাঁটু জল বাড়ির উঠোনে পৌঁছে গেলেও ভিটে ছেড়ে যেতে রাজি হচ্ছেন না অনেকেই। বিপদের আগেই তাঁরা যেন নিরাপদ জায়গায় সরাতে সজাগ দৃষ্টি রাখছে প্রশাসন।

একই সঙ্গে খেয়াল রাখা হচ্ছে স্বাস্থ্য পরিষেবার দিকটিও। বৃহস্পতিবার খয়রাশোল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তরফে এক জন মেডিক্যাল অফিসার বিপ্লব বিশ্বাসকে পাঠানো হয়েছিল জলমগ্ন মুক্তিনগর গ্রামে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন