নেতাদের কাজিয়ায় পথ অবরোধ

রাস্তা তৈরি নিয়ে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের গড়াল এ বার রাস্তা অবরোধেও। আড়শা ব্লকের ঝুঁঝকা গ্রামে রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য অপর্ণা সেনের সঙ্গে ঝুঁঝকা গ্রামের তৃণমূল নেতা দেবেন্দ্রনাথ মাহাতোর বিরোধ বেধেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আড়শা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:৩৫
Share:

অবরোধে নাকাল যাত্রীরা। (ডানদিকে) এই রাস্তা ঘিরেই বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।

রাস্তা তৈরি নিয়ে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের গড়াল এ বার রাস্তা অবরোধেও।

Advertisement

আড়শা ব্লকের ঝুঁঝকা গ্রামে রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য অপর্ণা সেনের সঙ্গে ঝুঁঝকা গ্রামের তৃণমূল নেতা দেবেন্দ্রনাথ মাহাতোর বিরোধ বেধেছিল। সেই বিরোধের জেরেই সোমবার ঘণ্টা খানেকের পথ অবরোধে নাকাল হলেন সাধারণ যাত্রী। এ দিন পুরুলিয়া-শিরকাবাদ রাস্তায় ঝুঁঝকা থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে হেঁসলা মোড়ে অবরোধ শুরু হয় সকাল সাড়ে নটায়। এলাকার বিভিন্ন গ্রামের মহিলাদের নিয়ে অবরোধে নেতৃত্ব দেন দেবেন্দ্রনাথবাবুই। এই অবরোধে তৃণমূলের কোনও ব্যানার-পতাকা না থাকলেও অবরোধকারীরা ‘সৃষ্টিধর মাহাতো জিন্দাবাদ’, ‘দেবেন মাহাতো জিন্দাবাদ’ স্লোগানও দেন।

অবরোধের জেরে রাস্তার দু’ধারে বিভিন্ন যানবাহনের সঙ্গে আটকে পড়ে আড়শার বিডিও-র গাড়িও। বহু মানুষকে গাড়ি-বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়। অবরোধকারীরা হেঁসলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন সমস্যার বিষয়কে সামনে এনেছেন। তার সঙ্গে জুড়েছেন ঝুঁঝকার রাস্তা নির্মাণের বন্ধ থাকার বিষয়টিও। বিডিও মাধব বিসাই বলেন, ‘‘অবরোধকারীরা এলাকায় পানীয় জলের সমস্যার সমাধানে নলকূপ করার দাবি, একশো দিনের কাজ, এলাকার একটি সেচ প্রকল্প থেকে জল ছাড়ার বিষয় তুলে ধরেছেন। এই কাজগুলির কিছু আমরা ইতিমধ্যেই হাতে নিয়েছি। ঝুঁঝকার রাস্তা তৈরির কাজ চালু করারও দাবি জানিয়েছেন। এই রাস্তাটি জেলা পরিষদের হওয়ায় তাদের সঙ্গে কথা বলব।’’

Advertisement

উল্লেখ্য, ঝুঁঝকা গ্রামে একটি ঢালাই রাস্তার কাজ শুরু হয় গত সপ্তাহে। অপর্ণাদেবীর দাবি, এলাকার কিছু বাসিন্দা তাঁকে জানান, রাস্তাটি উঁচু হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির সময় আশপাশের বাড়ি থেকে জল বেরোবে না। তিনি অসুস্থ থাকায় স্বামীকে পাঠান সমস্যার কথা শুনতে। অপর্ণাদেবীর অভিযোগ, তাঁর স্বামী ঘটনাস্থলে গেলে দেবেন্দ্রনাথবাবু ঠিকাদারের পক্ষ নিয়ে তাঁকে মারধর করেন। খবর পেয়ে তিনি নিজে ওখানে গেলে তাঁকেও গালিগালাজ করা হয় ও হুমকি দেওয়া হয়। এই বিষয়টি নিয়ে অপর্ণাদেবীর পাশাপাশি জেলা একাধিক সদস্য ও কর্মাধ্যক্ষ জেলা পরিষদের দলনেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন। দেবেন্দ্রনাথবাবু অবশ্য মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে তখন দাবি করেছিলেন, সামান্য কথাকাটাকাটি হয়েছিল। বরং অপর্ণাদেবীর স্বামী ওখানে তোলা তুলতে গিয়েছিলেন বলেও পাল্টা অভিযোগ ছিল দেবেন্দ্রনাথবাবুর। গোলমালের পর থেকে রাস্তা তৈরির কাজও বন্ধ ছিল। আড়শার তৃণমূল নেতা (প্রাক্তন ব্লক সভাপতি) আনন্দ মাহাতো বলেন, ‘‘স্থানীয় মানুষজন কিছু কারণ দেখিয়ে ঝুঁঝকার রাস্তার কাজে আপত্তি করেছেন।’’

সেই বন্ধ কাজ চালুর জন্যই অবরোধ বলে দাবি দেবেন্দ্রনাথবাবুর। কিন্তু, জেলা পরিষদের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, দল বন্‌ধ-অবরোধের বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষকে অসুবিধের মধ্যে ফেলে দলেরই এক নেতা কী ভাবে পথ অবরোধ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিলেন? দলের দুই নেতা-নেত্রীর লড়াইয়ের জেরে সাধারণ মানুষ কেন নাকাল হবেন? দেবেন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘জেলা পরিষদ সদস্য মনে করছেন উনি যা বলবেন সেটাই হবে। গণতন্ত্রে তা হয় না। এলাকার মানুষ নিজেদের উন্নয়নের দাবিদাওয়ার কথা তুলবেনই। এ দিন সেই দাবিতেই অবরোধ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা বিশেষত মহিলারা। তাঁরাই বন্ধ থাকা রাস্তার কাজ ফের শুরু করার দাবি তুলেছেন।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, অবরোধ নাকি অল্প কিছুক্ষণের জন্য হয়েছিল! অবরোধকারীদের অনেকেই অবশ্য জানিয়েছেন, নেতা বলেছেন বলে তাঁরা অবরোধ করেছেন। কেন অবরোধ, তা তাঁরা জানেন না। সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই অবরোধে দলের অনুমতি নেই। দল এ ভাবে অবরোধের বিরোধী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন