৭ দশকেও পথ আসেনি গ্রামে

গোবরদায় ৩৮টি পরিবার বাস। কোলডিহায় ১৪টি পরিবার। দুই গ্রাম মিলিয়ে জনসংখ্যা ২৪০ জন। জনা চল্লিশ প্রাথমিকের পড়ুয়া রয়েছে।

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৪২
Share:

রাশি রাশি আবেদন। নিজস্ব চিত্র

দু’পাশে ধানের জমি। মাঝখান দিয়ে সিঁথির মতো এক চিলতে আল চলে গিয়েছে। মানবাজার ১ ব্লকের গোবরদা বা কোলডিহায় যেতে হলে ওটাই রাস্তা। স্বাধীনতার সাত দশক পরেও ওই দু’টি গ্রামে অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে পারে না। বাঁশের সঙ্গে খাটিয়া বেঁধে রোগীকে নিয়ে ছুটতে হয় দেড় কিলোমিটার। সেখানে সড়ক এসে শেষ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

পুঞ্চার পায়রাচালি বাজার থেকে দক্ষিণে পাঁচ কিলোমিটার গেলেই গোবরদা। কিন্তু বাউরিডিহা গ্রামের উপরডি পর্যন্ত গিয়ে গাড়ি বা মোটরবাইক রেখে দিতে হয়। সেখান থেকে আলপথে দেড় কিলোমিটার দূরে পড়ে ওই দু’টি গ্রাম। গোবরদায় ৩৮টি পরিবার বাস। কোলডিহায় ১৪টি পরিবার। দুই গ্রাম মিলিয়ে জনসংখ্যা ২৪০ জন। জনা চল্লিশ প্রাথমিকের পড়ুয়া রয়েছে। হাইস্কুলে পড়ে ১৮ জন। অনাদি বাউড়ি, সাধন বাউড়িরা জানাচ্ছেন, উপরডি প্রাথমিক স্কুলে গ্রাম থেকে অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়ে পড়তে যায়। আর তাঁরা যান ভোট দিতে। ওই স্কুলেই তাঁদের বুথ।

প্রায় দু’দশক আগে এক বার মাঠ পেরিয়ে নলকূপ খোঁড়ার গাড়ি এসেছিল। দু’টি গ্রামে একটি করে নলকূপ রয়েছে এখন। গোবরদা গ্রামের দেবাশিস বাউড়ি, শুভাশিস বাউড়িরা বলেন, ‘‘কল চালু থাকলে জল পাই। না হলে নদীর জলই খেতে হয়।’’ তাঁদের অভিযোগ, নলকূপ খারাপ হলে ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে সারাই করতে আসতে চান না মিস্ত্রিরা। আসে না অ্যাম্বুল্যান্সও।

Advertisement

অনাদিবাবু বলেন, ‘‘বছর চারেক আগে বাঁশে খাটিয়া বেঁধে এক অন্তঃসত্ত্বাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।’’ সম্প্রতি গোবরদা গ্রামে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র হয়েছে। সেখানে ভর্তি হয়েছে ২৯ জন শিশু। অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী অন্নপূর্ণা লায়েক জানান, উপরডি গ্রামে এক জনের বাড়িতে সাইকেল রেখে জিনিসপত্র নিয়ে রোজ হেঁটে তিনি কাজের জায়গায় আসেন।

রাস্তা হয়নি কেন?

প্রশাসনের এক কর্তা দাবি করেছেন, মুকুটমণিপুর জলাধার নির্মাণের সময়ে ওই দুটি গ্রাম ‘জলডুবি’ এলাকা বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেই সময়ে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের উপরডি মৌজায় পুনর্বাসনের জমি দেওয়া হয়েছিল। ওই কর্তার দাবি, ‘‘ওই এলাকা অত্যন্ত উর্বর। এ জন্য দু’টি গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ জমি ছেড়ে যেতে চাইছেন না।’’

বিডিও (মানবাজার ১) নীলাদ্রি সরকার বলেন, ‘‘জমির জটিলতার জন্য রাস্তা তৈরি করা যায়নি। মাঝখানে কিছু রায়তি জমি ছিল। তাঁদের বোঝানো গিয়েছে। সম্প্রতি সমস্যা মিটেছে।’’ তিনি জানান, উপরডি থেকে ওই দু’টি গ্রামের যাতায়াতের জন্যে রাস্তা নির্মাণ করা হবে। চাঁদড়া-পায়রাচালি পঞ্চায়েত থেকে টাকা বরাদ্দ হয়েছে। টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন