শিল্পাঞ্চলে রাস্তা বেহাল/২

ভাঙা রাস্তায় শুধু ধুলোর দাপট

এ দিকে গর্ত, ও দিকে গর্ত! যে দিকেই স্টিয়ারিং ঘুরুক রক্ষে নেই! হেলতে দুলতে গাড়ির চাকা গড়াচ্ছে বাঁকুড়ার শিল্পাঞ্চল বলে পরিচিত বড়জোড়া-দুর্লভপুর রাস্তায়। তাতে কলকারখানার মালিকরা যেমন ক্ষুব্ধ তেমনই প্রসাশনের রাস্তা সংস্কারে উদাসীনতায় চটে যাত্রীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০০:২৯
Share:

মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র লাগোয়া লাগাপাড়ায় রাস্তার এমনই দশা। — নিজস্ব চিত্র।

এ দিকে গর্ত, ও দিকে গর্ত! যে দিকেই স্টিয়ারিং ঘুরুক রক্ষে নেই! হেলতে দুলতে গাড়ির চাকা গড়াচ্ছে বাঁকুড়ার শিল্পাঞ্চল বলে পরিচিত বড়জোড়া-দুর্লভপুর রাস্তায়। তাতে কলকারখানার মালিকরা যেমন ক্ষুব্ধ তেমনই প্রসাশনের রাস্তা সংস্কারে উদাসীনতায় চটে যাত্রীরা। শুধু ওই রাস্তাই নয়, ক’দিনের তুমুল বর্ষণের পরে বাঁকুড়া জেলার প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার অবস্থাই এখন শোচনীয়। সে জাতীয় সড়কই হোক, আর রাজ্য সড়ক— রাস্তা যেন ডোবার চেহারা নিয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তার আশ্বাস, “জেলার রাস্তাঘাটের অবস্থা খতিয়ে দেখে বর্ষা শেষ হলেই পূর্ত দফতরকে সংস্কারে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

বড়জোড়া থেকে দুর্লভপুর যাওয়ার এই ১৮ কিলোমিটার রাস্তাটির উপরে বহু কলকারখানা নির্ভর করে। রাস্তাটির দু’পাশে সারিসারি কারখানা। এ ছাড়াও গঙ্গাজলঘাটি থানার দুর্লভপুরে ডিভিসি-র মেজিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। লাগোয়া রাধামাধবপুর, চৌশাল, মাইলগড়া এলাকায় পাঁচ-ছ’টি স্পঞ্জ আয়রন, ফেরোঅ্যালয় ও সিমেন্ট কারখানা রয়েছে। কাঁচামাল আনার জন্য ওই সব কারখানাগুলি এই রাস্তা ব্যবহার করে। পুরো রাস্তাটি বিক্ষিপ্ত ভাবে নানা জায়গায় ভেঙে পড়ছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোর গড়ার জন্য চওড়া রাস্তা করার কাজ শুরু হয়েছে বড়জোড়া-দুর্লভপুর রাস্তায়। কিন্তু দুর্লভপুর মোড় থেকে মালিয়াড়ার দিকে যাওয়ার প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তার হাল একেবারেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে রয়েছে। গোটা রাস্তাটিতে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। রাস্তাটির উপরে কোথাও কোথাও স্তূপ হয়ে জমে রয়েছে মাটি। গোটা রাস্তা জুড়ে শুধুই দেখা যাবে পাথর কুচি ছড়িয়ে রয়েছে। পিচের দেখা পাওয়াই মুশকিল। রাস্তার মাঝে মাঝে একাধিক কালভার্টের অর্ধেক অংশ জুড়ে কাজ হচ্ছে, অন্য অর্ধেক অংশটির উপর দিয়ে কোনও মতে একটি একটি করে গাড়ি পারাপার করছে। পিচ উঠে ধুলোবালি উড়ছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে ওই রাস্তার উপর দিয়ে দিনভর শিল্পাঞ্চলের গাড়ি, যাত্রিবাহী বাস চলাচল করছে। ধুলোর ঝড়ে নাকাল হচ্ছেন পথচলতি মানুষজন। স্থানীয় বাসিন্দা দীপক চেল, অনন্ত দাসরা বলেন, “রাস্তায় বের হলে গোটা শরীর ধুলোয় ভরে যাচ্ছে। চোখ খুলে রাখার উপায় নেই। তাহলেই ধুলো ঢুকে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে চোখে। প্রশাসন কি এই সব দেখতে পায় না?’’ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বাউরি বলেন, “রাস্তাটির সংস্কারের কাজ চলছে। ধুলোর সমস্যা কাটাতে রাস্তায় জলও দেওয়া হচ্ছে নিয়ম করে। দ্রুত যাতে সংস্কারের কাজ শেষ হয় সে দিকে আমাদের নজর রয়েছে।” ডিভিসি-র এক আধিকারিকের কথায়, “রাস্তার বেহাল দশার জন্য ছাই পরিবহণকারী গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে প্রতিদিন প্রায় ৪০০টি ডাম্পার ছাই নিয়ে বড়জোড়া-দুর্লভপুর রাস্তা দিয়ে রানিগঞ্জ, আসানসোলে যেত। এখন সারাদিনে ২০০টি গাড়ি যাচ্ছে। ডাম্পারের মালিকেরাই গাড়ি চালাতে চাইছেন না। কারণ রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হলেই যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে বহু টাকার ক্ষতি হচ্ছে।”

দুর্লভপুর ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সংগঠনের প্রায় ৮০০টি গাড়ি ডিভিসি ও কিছু কলকারখানায় চলে। ওই সংগঠনের সম্পাদক অজিত গৌড় বলেন, “গাড়ি চালানোর মতো রাস্তার পরিস্থিতিই নেই। বহু মালিকই এই অবস্থায় গাড়ি বের করতে চাইছেন না। যাঁরা বের হচ্ছেন মাঝ রাস্তায় গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। শিল্পের উপরে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে এতে।” একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানার আধিকারিক বলেন, “চলতি বছরের গোড়া থেকেই রাস্তার এই হাল। খুবই সমস্যায় পড়ছি আমরা। নির্দিষ্ট সময়ে কাঁচামালও পৌঁছতে পারছে না কারখানায়। এ ভাবে কতদিন কাজ চালানো যাবে জানি না।” অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ‘‘রাস্তার জন্য সময়মতো কারখানার উৎপাদিত মালপত্র পাঠানো নিয়ে আমরা দুর্ভাবনায় রয়েছি। প্রশাসন রাস্তা সংস্কারে এখনই উদ্যোগী না হলে সমস্যা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন