প্রতীকী ছবি
এক প্রৌঢ়ের দেহ কবর দেওয়া নিয়ে উত্তেজনা এবং তার জেরে কবর দিতে যাওয়া সকলের লালরস পরীক্ষা এবং নিভৃতবাসে থাকতে বাধ্য করলেন গ্রামবাসীরাই। শনিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে, খয়রাশোলের কাঁকরতলা থানার কৈথি গ্রামে।
পুলিশ ও মৃতের পরিবারসূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চুয়ান্ন বয়সের ওই প্রৌঢ়ের আদি বাড়ি খয়রাশোলের বড়রা গ্রামে। কিন্তু তিনি সপরিবার আসানসোলে থাকতেন। অসুস্থ হয়ে শুক্রবার আসানসোলের কল্যাণপুর এলাকার বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। শনিবার সকালে মারা যান। তাঁর নিজের ভাইপো চিকিৎসক। তিনিই উদ্যোগী হয়ে প্রৌঢ়ের দেহ আসানসোল থেকে নিয়ে এসে কৈথি গ্রামের সামনে কবর দেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই সমস্যার সূত্রপাত। ওই প্রৌঢ় কোভিড পজিটিভ ছিলেন এই ‘গুজব’ ছড়াতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে আসতে হয়, মৌখিকভাবে বুঝিয়েও কাজ না হওয়ায় মৃত ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত ছিলেন না তা প্রমাণ করতে ডেথ সার্টিফিকেট সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়। তার পরেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, কবরস্থানে যাঁরা ছিলেন প্রত্যেকের লালা রসের নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা হচ্ছে এবং নিভৃতবাসে থাকতে বলা হয়েছে।
এলাকার লোকজনের দাবি যিনি মারা গিয়েছেন তাঁর ভাইপো চিকিতসক। একদম চুপিসাড়ে বাতানকুল অ্যাম্বুল্যান্সে দেহ নিয়ে এসে গ্লাভস, মাস্ক পরে যখন প্রৌঢ়ের দেহ কবর দেওয়া হয় তখনও ওই ভাইপো ছিলেন। বড়রা ও কৈথি গ্রামের খুব কমসংখ্যক মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এলাকাবাসীর প্রশ্ন আসানসোল থেকে এখানে দেহ আনতে হল কেন এই পরিস্থিতিতে? মৃতের পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, মৃত ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। যেহেতু তাঁর পূর্বপুরুষকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল এখানে তাই তার পাশেই তাঁকেও সমাধিস্থ করতে দেহ নিয়ে আসা হয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন বলেন, ‘‘গ্রামবাসীর আতঙ্ক না কমায় পুলিশ আসে। ডেথ সার্টিফিকেট দেখিয়ে বলা হয় মৃত্যু হয়েছে হৃদ রোগে। অথচ যে কারণে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন সেখানে লেখা তাঁর সেপটিসেমিয়া ও প্যানক্রিয়াটাইটিস ছিল। কোনটা ঠিক কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।’’ কৈথি গ্রামের বাসিন্দা পেশায় আইনজীবী, মৃতের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘আমার ওই আত্মীয় হৃদ রোগেই মারা গিয়েছেন। করোনার জন্যই সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল। কম লোকের উপস্থিতি, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ববিধি মানা হয়েছিল বলেই হয়তো সন্দেহ দানা বেঁধেছে। তবে এলাকার মানুষের সঙ্গে অশান্তি চাই না। এখন বাড়িতেই থাকছি লালারসের নমুনার রিপোর্ট আসা পর্যন্ত।’’