শুধু জিএসটি নয়— ইদের আগেও ফি বছর কেনাকাটা বাড়ে। — প্রতীকী ছবি।
মুরারই থানা এলাকার বাসিন্দা সাদেমান শেখ অনেক দিন ধরেই এসি কেনার তক্কে তক্কে ছিলেন। পেশায় পাথর ব্যবসায়ী সাদেমান নজর রেখেছিলেন বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও। খোঁজ নিচ্ছিলেন দোকানে দোকানেও। অভিন্ন বাণিজ্য কর (জিএসটি) চালুর আগে বড়সড় ছাড় দেখে দু’দিন আগেই ইচ্ছেপূরণ করে ফেলেছেন। ৫১ হাজারের এসিতে পেয়েছেন ১৫ হাজারের ছাড়। বোলপুরের একটি শো-রুম থেকে ঝকঝকে নতুন মোটরবাইক নিয়ে বেরোচ্ছিলেন এক তরুণ। বললেন, ‘‘কিনে ফেললাম। ১ জুলাইয়ের পরে শুনছি মোটরবাইকে কর বসবে ২৮ শতাংশ!’’
বীরভূমের নানা বাজারে বহু ব্যবসায়ীই জানাচ্ছেন, অভিন্ন বাণিজ্য কর চালুর আগে ভিড় বেড়েছে ক্রেতাদের। এঁদের কেউ কেউ আবার জানাচ্ছেন, শুধু জিএসটি নয়— ইদের আগেও ফি বছর কেনাকাটা বাড়ে। সবমিলিয়ে এ দু’য়ের যুগলবন্দিতেই কেনাকাটা এক ধাক্কায় বেশ
কিছুটা বেড়েছে।
ঠিক কতটা বেড়েছে?
রামপুরহাট ব্যাঙ্ক রোডের একটি দোকানের মালিক উকিল আনসারি জানালেন, গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে এখনও পর্যন্ত অন্তত শ’খানেক এসি, ফ্রিজ, দামি মোবাইল, দামি টিভি বিক্রি হয়েছে। সিউড়ির একটি দোকানের মালিক কুণাল দীক্ষিত জানালেন, জিএসটি কার্যকর হলে জিনিসের দাম বাড়বে এই আশঙ্কায় জেলার সর্বত্রই ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। সুযোগ বুঝে কোনও কোনও শপিং মলে, নানা দোকান পোশাকের ক্ষেত্রেও ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। সেই সুযোগে অনেকে পুজোর বাজারটাও সেরে নিচ্ছেন।
জিএসটি-র সৌজন্যে ছাড় তো রয়েছেই। রামপুরহাট এলাকায় একটি দোকানে নামজাদা কোম্পানির এক সেলস ম্যানেজার জানালেন, এই সুযোগে অনেকেই পুরনো স্টক খালি করে দিচ্ছেন। এক ধাক্কায় কিছুটা দাম কমার সেটাও একটা কারণ। বোলপুর মহকুমা ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক সুনীল সিংহ অবশ্য মনে করেন, শুধু জিএসটি-র জন্য জিনিসপত্রের দাম বাড়বে এই আশঙ্কায় খরিদ্দারদের ভিড় বেড়েছে তা নয়। ইদের বাজার থাকার জন্যেও গত সপ্তাহ থেকেই ভিড় বেশি। তবে মাসের শেষ হলেও ইএমআইয়ের সুযোগ এবং বড়সড় ছাড় এই সুযোগ পেতে চেয়েছেন অনেকেই। যার নিট ফল বিক্রিবাটা একধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাওয়া।
প্রভাব পড়েছে গয়নার বাজারেও। ক্রেতা-বিক্রেতা, প্রায় সকলেরই ধারণা, জিএসটি চালু হলে গয়নার দাম বাড়বে। তাই এই সুযোগে অনেকেই আগাম সোনা কিনে রাখছেন বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের অনেকেই। রামপুরহাট ব্যবসায়ী সংগঠনের সহ সভাপতি মহেশ ঝুনঝুনওয়ালা। তিনি বলেন, ‘‘জিএসটি চালু হওয়ার পর ব্যবসায়ীরা ঠিক কোন পথে এগিয়ে যাবেন সে ব্যাপারে কেউ দিশা দিতে পারছেন না। সরকারি আধিকারিকদের কাছ থেকেও কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে ব্যবসায়ীরা নতুন করে কোনও জিনিস কিনছেন না।’’ বাজার কোন পথে এগোচ্ছে তা বুঝতে জিএসটি চালু হওয়ার পরেও চার-পাঁচ দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করেন মহেশ ঝুনঝুনওয়ালা।
সাঁইথিয়া ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক টিকন চাঁদ পুগলিয়া অবশ্য জানাচ্ছেন, এলাকায় এখনও পর্যন্ত জিনিসপত্র বিক্রির হার তেমন বাড়েনি। একই সঙ্গে তিনি মনে করেন জিএসটি লাগু হলে অনলাইনের ব্যবসার ক্ষতি হবে।