বালিতে রুদ্ধ রাস্তা, মৃত প্রৌঢ়

পথ নিরাপত্তা নিয়ে জনসাধারণের সচেতনতা বাড়াতে বছরভর নানা কর্মসূচি করে থাকে পুলিশ। কিন্তু, পুলিশ নিজে কি এই নিয়ে আদৌ সচেতন?রবিবার সকালে রামপুরহাট শহরের হাসপাতাল পাড়া এলাকায় জাতীয় সড়কে পথ দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যু সেই প্রশ্নই তুলে দিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৭ ০১:৩১
Share:

পথজুড়ে: রামপুরহাটে জাতীয় সড়কের ধারে এ ভাবেই পড়ে রয়েছে ইমারতি দ্রব্য। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

পথ নিরাপত্তা নিয়ে জনসাধারণের সচেতনতা বাড়াতে বছরভর নানা কর্মসূচি করে থাকে পুলিশ। কিন্তু, পুলিশ নিজে কি এই নিয়ে আদৌ সচেতন?

Advertisement

রবিবার সকালে রামপুরহাট শহরের হাসপাতাল পাড়া এলাকায় জাতীয় সড়কে পথ দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যু সেই প্রশ্নই তুলে দিল। যেখানে রাস্তার ধারে পড়ে ছিল ইমারতি দ্রব্য। আর সেই ইমারতি দ্রব্যই প্রাণ কাড়ল প্রদীপ মণ্ডল (৪৮) নামে ওই সাইকেল আরোহীর। পুলিশ জানায়, মৃত ব্যক্তি রামপুরহাটেরই ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ঘাতক লরি আটক হলেও চালক পলাতক।

ঘটনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই ফের প্রশ্নের মুখে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা। পথ নিরাপত্তা নিয়ে নজরদারি নিয়ে পুলিশ মোটেও তৎপর নয় বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মনে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু জিজ্ঞাসা। এক, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে নানা কর্মসূচি নিচ্ছে পুলিশ। রামপুরহাট মহকুমায় দুর্ঘটনা এড়াতে ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসাবে ‘স্পিড টোকেন’ পদ্ধতি চালু হয়েছে। একই কারণে দিনের বেলাতেও যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখার আর্জি জানাচ্ছে পুলিশ। এত কিছুর পরেও কেন জেলায় পথ দুর্ঘটনা কমাতে পারছে না পুলিশ? কেনই বা রাস্তার ধারে ইমারতি দ্রব্য ফেলে যারা দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছেন, তাদের বিরুদ্ধে কেন পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে না পুলিশ? দুই, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় জাতীয় সড়কে হাসপাতাল পাড়া এলাকায় বিশেষ ট্র্যাফিক-বিধি চালু হয়েছিল। কিন্তু কিছু দিন চলার পরেই সেই ব্যবস্থা উঠে গেল কেন? পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও প্রশ্নেরই সদুত্তর মিলছে না।

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছে?

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সাইকেল চালিয়ে প্রদীপবাবু নিজের কাজের জায়গা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে হাসপাতাল পাড়া এলাকায় রাস্তার বেশ কিছুটা অংশ জুড়ে বালি পড়ে থাকায় সাইকেল থেকে নেমে পড়তে হয় প্রদীপবাবুকে। বালির অংশটুকু হেঁটে পার হওয়ার পরে ফের সাইকেলে উঠছিলেন তিনি। ঠিক তখনই পিঠন দিক থেকে আসা রামপুরহাটমুখী একটি ১৪ চাকা লরির ধাক্কায় সাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন প্রদীপবাবু। সঙ্গে সঙ্গে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রদীপবাবুর দেহ তিন টুকরো হয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। প্রদীপবাবুর এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ তাঁর পরিজনেরা। প্রদীপবাবুর ভাই প্রভাত, আত্মীয় বীরেন মণ্ডল এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পারমিতা চক্রবর্তী, প্রত্যেকেই বলছেন, ‘‘রাস্তার ধারে পড়ে থাকা বালিই ছেলেটার প্রাণ কেড়ে নিল।’’

দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেল, রাস্তার ডান দিকের ধারে বালি, পাথর পড়ে আছে। রাস্তার এক দিকে পড়ে আছে লোহার ব্যরিকেডও। শুধু ঘটনাস্থলই নয়, জাতীয় সড়কে রামপুরহাটের ভাঁড়শালা পাড়া থেকে হাসপাতাল পাড়া পর্যন্ত আধ কিলোমিটারের মধ্যেই রাস্তার দু’ধারে আটটি স্থানে ইমারতি দ্রব্য পড়ে থাকতে দেখা গেল। যা দেখে এলাকাবাসীর প্রশ্ন, পুলিশ কেন চুপ করে বসে আছে? যারা ইমারতি দ্রব্য ফেলে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে অভিযান চালাচ্ছে না?

জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার অবশ্য দাবি করছেন, জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে তাঁরা নানা পদক্ষেপ করছেন। তবে, তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের আরও বেশি করে নজরদারি চালাতে হবে। শুধু জাতীয় সড়কই নয়, শহরের ভিতরের রাস্তাতেও ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখার বিরুদ্ধেও স্থানীয় থানাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে পুরসভাকেও এগিয়ে আসতে হবে।’’

রামপুরহাটবাসীর অবশ্য প্রশ্ন, যে পুরসভার প্রধান নিজেই দাঁড়িয়ে থেকে ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাস্তা দখল করে রাখেন, সেখানে আইনের শাসন রক্ষিত হবে তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন