বালির ঘুর্ণিতে তলিয়েই মৃত্যু ছাত্রের

দেহ উদ্ধারে বাধা, হেনস্থা নেতাকেও

তলিয়ে যাওয়ার সতেরো ঘণ্টা পরে এ দিন সকালে দেহটি উদ্ধার করেন জেলার বাইরে আসা ডুবুরিদের নয় সদস্যের একটি দল। ফের বালির ঘুর্ণিতে মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৭ ০১:৫১
Share:

বালির অবৈধ কারবারে নদী যে মরণ-ফাঁদ হয়ে রয়েছে, টেরই পাননি মনোজিৎ মণ্ডল (১৯)। বৃহস্পতিবার সকালে সিউড়ির খটঙ্গা সংলগ্ন রাইপুর ঘাট থেকে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ ওই পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার হয়। বুধবার বন্ধুদের সঙ্গে ময়ূরাক্ষীতে স্নান করতে নেমে সিউড়ির কড়িধ্যার এই ছাত্র প্রায় ৪০ ফুট গভীর ঘুর্ণিতে তলিয়ে যান। পরিসংখ্যান বলছে, শুধু রাঢ়বঙ্গেই গত দেড় মাসে নদীতে স্নান করতে কিংবা মাছ ধরতে নেমে বালির গর্তে অন্তত ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

তলিয়ে যাওয়ার সতেরো ঘণ্টা পরে এ দিন সকালে দেহটি উদ্ধার করেন জেলার বাইরে আসা ডুবুরিদের নয় সদস্যের একটি দল। ফের বালির ঘুর্ণিতে মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ ছিলেন। দেহ উদ্ধারের পর সেই ক্ষোভ আরও বাড়ে। দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। অভিযোগ করেন, প্রশাসনিক নজরদারির অভাবেই বালি কারবারিরা নদীগর্ভে যন্ত্র লাগিয়ে ৩০-৪০ ফুট গর্ত করে বালি তুলছেন। অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আটকে দেওয়া হয় দমকল ও পুলিশের গাড়ি। প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা এলে তবেই দেহ ছাড়া হবে, এমন দাবিও তোলেন।

সেই মুহূর্তে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছলে শাসকদলের খটঙ্গা অঞ্চল সভাপতি সঞ্জিত রায়কে হেনস্থা করা হয়। বিক্ষোভকারীরা তাঁকে মারধর করে একটি ক্লাবে আটকে রাখেন। তাঁর স্কুটার ধরেও টানাটানি করা হয়। জানতার দাবি, কিছু নেতা ও প্রশাসনের মদতেই চলছে বালি অবৈধ কারবার। স্থানীয়দের ক্ষোভ, বালি মাফিয়ারা শুধু গভীর গর্ত খুঁড়ে বালি তুলছে না। এক জায়গায় অনুমতি নিয়ে অন্য অংশেও বালি তুলে বিপদ বাড়াচ্ছে। সঞ্জিতবাবুর সঙ্গে বহু চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তৃণমূলের সিউড়ি ১ ব্লকের সভাপতি স্বর্ণময় সিংহ বলেন, ‘‘সঞ্জিত বালি কারবারে যুক্ত নয়। ও সহানুভূতির জন্য গিয়েছিল। কোনও রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে ওই হেনস্থা হয়ে থাকতে পারে।’’

Advertisement

এ দিকে, দেহ আটকে রাখা ও তৃণমূল নেতাকে হেনস্থার খবর শুনে বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থালে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) আনন্দ সরকার। বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করে জানান, সব দাবি প্রশাসনের কানে পৌঁছে দেবেন। বেলা ৯টা নাগাদ মনোজিতের দেহ ছেড়ে দেওয়া হয় দমকলের হাতে। তখনই সঞ্জীববাবুকেও উদ্ধার করে পুলিশ।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী মনোজিতের বাবা মন্মথনাথ মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘বুধবার বন্ধুর সঙ্গে এসেছিল ছেলে। এমনিতে নদীতে হাঁটু জল। কিন্তু, বালি তুলে নেওয়ার ফলে গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। সেখানেই ছেলেটা শেষ হয়ে গেল।’’

জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলছেন, ‘‘বালিঘাট বৈধ বা অবৈধ, সেটা পুলিশের দেখার কথা নয়। নির্দিষ্ট অভিযোগ হয়েছে, অথচ পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি এমন কোথাও হয়নি।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) নীলকমল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আইনত তিন মিটার অর্থাৎ ১০ ফুটের বেশি গর্ত করে বালি তোলা যায় না। ওখানে ঠিক কী হয়েছে অভিযোগ এলে দেখব।’’

তবে, শুধু ময়ূরাক্ষী নয়। দামোদরেও যেখানে সেখানে গভীর খাল করে বালি তুলে নিচ্ছে কিছু বালি ব্যবসায়ী। দামোদরের চেকড্যামের বিভিন্ন জায়গা থেকেও ট্রাক্টরে বালি তোলা হচ্ছে। এর ফলে ওই জায়গাগুলিতে ‘দ’ হয়ে ঘুর্ণি তৈরি হচ্ছে। বর্ষায় যা পরিণত হচ্ছে মরণ-ফাঁদে। গত দেড় মাসে যেখানে প্রাণ গিয়েছে ছ’জনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন