কাজের ‘তদ্বির’ করে বিতর্কে মন্ত্রী

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা এক চাকরিপ্রার্থীর আবেদনপত্রের ছবি ভাইরাল হয়। আবেদনপত্রে মানবাজার ১ ব্লকের ওইচাকরিপ্রার্থীর দাবি, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে’ তিনি জানতে পেরেছেন, কৃষি দফতরের বিভিন্ন প্রকল্পে কিছু ‘ডেটা এন্ট্রি অপরেটর’ নেওয়া হবে। মানবাজার ২ ব্লক কার্যালয়ে কাজে নিয়োগের আর্জি জানিয়েছেন ওই চাকরিপ্রার্থী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মানবাজার শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৪
Share:

জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু।—নিজস্ব চিত্র

এক যুবককে কাজ দেওয়ার ‘সুপারিশ’ করা নিয়ে বিতর্ক দানা বেধেছে তৃণমূলের অন্দরে। দলের একাংশের অভিযোগ, মানবাজারের দলীয় বিধায়ক তথা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু এক যুবককে কাজে নেওয়ার সুপারিশ করেছেন প্রশাসনের কাছে। সোশ্যাল মিডিয়া মারফত বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই শোরগোল পড়েছে তৃণমূলের অন্দরে। এই ভাবে কাউকে কাজ দেওয়ার সুপারিশ করা যায় কিনা, সেই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন একাধিক তৃণমূল নেতা।

Advertisement

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা এক চাকরিপ্রার্থীর আবেদনপত্রের ছবি ভাইরাল হয়। আবেদনপত্রে মানবাজার ১ ব্লকের ওইচাকরিপ্রার্থীর দাবি, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে’ তিনি জানতে পেরেছেন, কৃষি দফতরের বিভিন্ন প্রকল্পে কিছু ‘ডেটা এন্ট্রি অপরেটর’ নেওয়া হবে। মানবাজার ২ ব্লক কার্যালয়ে কাজে নিয়োগের আর্জি জানিয়েছেন ওই চাকরিপ্রার্থী।

ওই আবেদনপত্রে সন্ধ্যারানি নামে এক জনের স্বাক্ষর রয়েছে। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী পদের সিলমোহরও রয়েছে সেখানে। ‘সম্ভব’ হলে ওই ব্যক্তিকে কাজে নেওয়ার সুপারিশ করে আবেদনপত্রটি জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন স্বাক্ষরকারী। ওই আধিকারিক আবার আবেদনপত্রটির উপরে ‘নোট’ লিখে সেটি সহকারী কৃষি আধিকারিকের (মানবাজার ১) কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। প্রয়োজন পড়লে ওই ব্যক্তির (আবেদনকারী) ‘সার্ভিস’ (পরিষেবা) নেওয়া যেতে পারে বলে লিখেছিলেন আশিসবাবু।

Advertisement

মন্ত্রী এবং ওই কৃষি আধিকারিকের সই এবং সিলমোহর পড়া আবেদনপত্রটি সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। যদিও তার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি। এর পরেই তৃণমূলের অন্দরে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। যদিও যাঁকে ঘিরে বিতর্ক, সেই সন্ধ্যারানিদেবীর প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাঁর মোবাইলে একাধিক বার ফোন করলেও বেজে গিয়েছে। মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে তাঁর মোবাইলে পাঠানো মেসেজেরও উত্তর আসেনি। তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকেও একাধিক বার ফোন করে পাওয়া যায়নি। জবাব আসেনি মেসেজের।

তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি রথীন্দ্রনাথ মাহাতো অবশ্য ‘সুপারিশে’র কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘যোগ্যতার ভিত্তিতে ওই যুবকের নাম সুপারিশ করা হয়েছে। দলের মানবাজার ২ ব্লক সভাপতির সাথে এ নিয়ে কথা বলব।’’ মানবাজার ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি হংসেশ্বর মাহাতোর দাবি, ‘‘এ ভাবে যদি নিয়োগ চলতে থাকে, তবে আমাদের এলাকার যুবকেরা যাবেন কোথায়। ঘটনায় স্থানীয় যুবকেরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। জেলা স্তরে বিষয়টি জানিয়েছি।’’ ব্লকের যুব তৃণমূল সভাপতি শান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘কাউকে নিয়োগ করতে হলে পদ্ধতি মানতে হয়। এ ক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি।’’

জেলা কৃষি দফতর অবশ্য খোলাখুলি জানিয়েছে, মন্ত্রীর স্বাক্ষরিত একটি চাকরির একটি আবেদনপত্র এসেছিল। আশিসবাবুর কথায়, ‘‘মন্ত্রী একটি আবেদন পত্রের উপরে আমাকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তবে ওই ব্যক্তিকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁকে কাজে লাগানো যেতে পারে কিনা, ব্লক কৃষি আধিকারিককে তা দেখতে বলেছি।’’

সহকারী কৃষি আধিকারিক (মানবাজার ২) সুপ্রভাত পাল বলেন, ‘‘গোটা প্রক্রিয়ায় আমার কোনও ভূমিকা নেই। ওই যুবক অফিসে আসছেন বটে। তবে তাঁকে কোনও কাজে লাগানো হয়নি।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘রাজ্য জুড়ে এ ভাবেই নিয়োগ হচ্ছে। ওঁরা নিয়োগ পদ্ধতি মানেন না। এখন ওঁদের দলের একাংশ-ও সরব হয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন