শুরুর আগেই জমজমাট পৌষমেলা

পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের দূষণ সংক্রান্ত মামলার জেরে ২০১৬ সালে পৌষমেলা তিন দিনের হয়ে যায়। দীর্ঘ এক বছর আইনি টানাপড়েনের পর এ বছরের ১ নভেম্বর  বিশ্বভারতীর আর্জি মেনে মেলা হয় ছ’দিনের।

Advertisement

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩৬
Share:

অতিথি: এলেন বাউলরাও। শুক্রবার সকালে শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা প্রাঙ্গণে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

প্রতীক্ষার অবসান। আজ, শনিবার শুরু হচ্ছে শান্তিনিকেতন পৌষমেলা।

Advertisement

পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের দূষণ সংক্রান্ত মামলার জেরে ২০১৬ সালে পৌষমেলা তিন দিনের হয়ে যায়। দীর্ঘ এক বছর আইনি টানাপড়েনের পর এ বছরের ১ নভেম্বর বিশ্বভারতীর আর্জি মেনে মেলা হয় ছ’দিনের। এ বার মেলা হবে ৭ পৌষ থেকে ১২ পৌষ (২৩ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত।

একেবারে শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত ব্যস্ততা পৌষমেলা চত্বরে। প্রস্তুত পুলিশ, প্রশাসন। মেলা শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে শহর ঘুরে মিলল তারই টুকরো টুকরো কিছু ছবি।

Advertisement

হোটেল বুকিং

মেলা থেকে অল্প দূরের হোটেলগুলিতে বুকিং প্রায় শেষ। হোটেল মালিকদের বক্তব্য, এখন ওই সব এলাকায় কোনও হোটেলেই ঘর খালি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ভাল করে খুঁজলে মেলা প্রাঙ্গন থেকে বেশ কিছুটা দূরের হোটেলগুলিতে এক-দু’টো ঘর পাওয়া গেলেও যেতে পারে। তবে সে জন্য কিছুটা বেশি ভাড়া দিতে হবে।

যানজট মোকাবিলা

এক দিকে ভিড় জমছে পর্যটকদের, অন্য দিকে আসছেন ব্যবসায়ীরা। তাই শুক্রবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় যানজট হয়। তবে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। যানজট এড়াতে সক্রিয় মেলা কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন। মেলা চলাকালীন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিশেষ কিছু রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাইকেলও চালানো যাবে না ট্যুরিস্ট লজ মোড়, বিনয় ভবন, শান্তিনিকেতন পোস্ট অফিস থেকে মেলা মাঠ পর্যন্ত অংশে। এ দিনই দুপুর ২টোর পর থেকে ওই সব রাস্তা একে একে বন্ধ করা হবে। কয়েকটি রাস্তায় একমুখী যান চলাচল করতে পারে।

মেলায় স্টল তৈরি

পৌষমেলা চত্বরে স্টল তৈরির কাজ শেষ। প্লট বুকিংয়ে কালোবাজারি রুখতে আধার কার্ড দেখে দেওয়া হয়েছে স্টল। কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পভিত্তিক ৬০০টি স্টল, অন্য ১ হাজার ২৫০টি স্টল মিলে এ বারের পৌষমেলায় মোট ১ হাজার ৮৫০টি স্টল রয়েছে। স্টল সাজাতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। ব্যস্ততা খাবারের দোকানগুলিতেও। গতকাল সন্ধে থেকেই স্টলগুলিতে জল ও আলোর ব্যবস্থা করেছেন কর্তৃপক্ষ।

যেখানে পার্কিং

মেলাপ্রাঙ্গনে বিশ্বভারতীর নিজস্ব পার্কিং রয়েছে ৬টি। ইন্দিরাভবন, বিশ্বভারতী ফার্স্ট গেট, রতনপল্লি, সাঁতারপুকুর, বিনয়ভবন ও কুমিরডাঙায় রয়েছে পার্কিং।

নিরাপত্তায় নজরদারি

পৌষমেলা প্রাঙ্গনে থাকবে ৭টি ওয়াচ টাওয়ার, ১৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা, ১০টি পুলিশ বুথ, ৮টি ড্রপ গেট। এ ছাড়াও থাকবে একটি পুলিশ কন্ট্রোল রুম এবং অভিযোগ জানানোর স্টল। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বোলপুর) অম্লানকুসুম ঘোষ জানিয়েছেন, মেলার নিরাপত্তায় প্রচুর পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার, সাদা পোশাকের পুলিশ ও মহিলা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পরিবেশবান্ধব মেলা

দূষণ রুখতে মেলার ছ’দিন সকাল-সন্ধে মেলা প্রাঙ্গণে জল ছড়াবে বোলপুর পুরসভা। শুক্রবার সকাল থেকেই মাঠে জল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। মেলায় প্লাস্টিক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্রত্যেক স্টলে ডাস্টবিন রাখা বাধ্যতামূলক। বিশ্বভারতীর স্থায়ী ২টি শৌচালয় ছাড়াও তৈরি হয়েছে অস্থায়ী শৌচালয়। মেলার সর্বত্র পরিবেশদূষণ সম্পর্কিত সচেতনতামূলক পোস্টার লাগানো হয়েছে। সচেতনতা প্রচারে বিশ্বভারতীর এনসিসি এবং এনএসএস শিক্ষার্থীরা প্রতি দিন সকাল ১০টা ও বিকেল ৩টেই মিছিল করবেন মেলা প্রাঙ্গণে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত ওই মিছিলে সামিল হওয়ার থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মেলা কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার দুপুরে মেলার মাঠ পরিদর্শন করেন সুভাষবাবু। প্রশাসন ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘প্রথম বার তো ১০০ শতাংশ সফল হওয়া যায় না। তবে একটা ভাল-র শুরু হয়েছে।’’

শিশুবান্ধব মেলা

মেলায় দায়িত্বে থাকা এনএসএস ও এনসিসি প্রতিনিধিরা মেলায় আসা ১০ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের নাম, তাদের বাবার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর লেখা একটি পরিচয়পত্র বিতরণের কাজ করবেন।

বাড়তি সচেতনতা

এ বারই প্রথম পৌষমেলায় জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর ‘সিভিক ডিফেন্স’ থেকে ১১ জন ভলান্টিয়ার মেলায় বিপর্যয় মোকাবিলার কাজ করবেন।

এ সব মিলিয়ে ক্রমে জমজমাট হচ্ছে পৌষমেলা। মেলা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনায় তৎপর প্রশাসন এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। মেলা কমিটির আহ্বায়ক গৌতম সাহা জানান, ‘‘অল্প সময়ে মেলা সাজিয়ে উঠতে পেরে আমরা খুশি। ব্যবসায়ীরাও সাহায্য করেছেন। তাঁদের ধন্যবাদ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন