উনুন রুখতে স্কুলে এলপিজি

জেলার সব উচ্চপ্রাথমিক ও কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলে সেই দুর্ভোগ শেষ হলো শুক্রবার। এ বার থেকে সেখানে  মিড-ডে মিল রান্না হবে এলপিজি-তে (লিক্যুইড পিউরিফায়েড গ্যাস)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩০
Share:

বিতরণ: মিড-ডে মিলের জন্য বাসন বিলি। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

ক্লাসে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ নিয়ে পড়াচ্ছেন শিক্ষক। মন দিয়ে শুনছিল পড়ুয়ারা। হঠাৎ ছন্দপতন। ক্লাসরুমের জানালা দিয়ে গলগল করে ঢুকতে শুরু করল ধোঁয়া। পড়ুয়া থেকে শিক্ষক কাশিতে অস্থির। সাময়িক ছেদ পড়ল পঠন-পাঠনে। ধোঁয়া গুলিয়ে দিল গাছেদের খাবার তৈরির প্রক্রিয়াটাই।

Advertisement

ধোঁয়ার উৎস, ক্লাস ঘেঁষা রান্নাঘরে মিড-ডে মিল তৈরির জন্য জ্বালানো উনুন। জেলার বিভিন্ন স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার সময় এমন ভাবেই ধোঁয়ায় কোনও দিন থমকে যায় বিজ্ঞান, ইতিহাস বা অঙ্কের ক্লাস।

জেলার সব উচ্চপ্রাথমিক ও কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলে সেই দুর্ভোগ শেষ হলো শুক্রবার। এ বার থেকে সেখানে মিড-ডে মিল রান্না হবে এলপিজি-তে (লিক্যুইড পিউরিফায়েড গ্যাস)। সিউড়িতে জেলাপরিষদ সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানে এ দিন সে সব স্কুলের শিক্ষকদের হাতে মিড-ডে মিল রান্নার জন্য এপিজি সিলিন্ডার ও গ্যাস ওভেন তুলে দেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী, সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) রঞ্জন কুমার ঝা, মিড-ডে মিলের জেলার নোডাল অফিসার দেবদুলাল পাত্র।

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ৪৫টি স্কুলকে প্রতীকী ভাবে এলপিজি সিলিন্ডার দেওয়া হলো। আদতে জেলার ৭৬৫টি উচ্চপ্রাথমিক ও ৩৫টি প্রাথমিক স্কুল এই সুবিধা পাবে। ধোঁয়ার জেরে স্কুলে পঠনপাঠনের সমস্যা এড়াতে মিড-ডে মিল রান্নার ব্যবস্থা বদলে ফেলতে চেয়েছিল রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর। কয়েকটি জেলায় ইতিমধ্যেই ওই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। বীরভূমও প্রথম পর্বে ১৫০টি প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিক স্কুলে এলপিজি সিলিন্ডার দিয়েছে। গ্যাসেই মিড-ডে রান্না হয় ওই সব স্কুলে। দ্বিতীয় দফায় আরও কয়েকটি স্কুলে এলপিজি সংযোগ দেওয়া হলো। উচ্চপ্রাথমিক স্কুলের জন্য ৪টি করে সিলিন্ডার, প্রাথমিক স্কুলে দু’টি করে সিলিন্ডার ও ওভেন দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি স্কুলকে রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় বাসন ও স্বনির্ভর দলের সদস্যদের জন্য অ্যাপ্রোনও দেওয়া হয়েছে।

জেলাশাসক বলেন, ‘‘মিড-ডে মিল স্কুলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জেলায় প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিক মিলিয়ে চার হাজার স্কুলে প্রতি দিন প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ পড়ুয়া মিড-ডে মিল খায়। ধাপে ধাপে সব প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে এলপিজি দিয়ে রান্নার ব্যবস্থা করা হবে। তাতে দূষণ কমবে।’’

বাড়ি বাড়ি শৌচাগার গড়ে কিছু দিনের মধ্যে নির্মল ঘোষিত হতে চলেছে বীরভূম। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘উজ্জ্বলা’ প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি রান্নার গ্যাসের সংযোগ মিলছে। বিদ্যালয়গুলিতে ওই সুবিধা মিললে দূষণের মাত্রা কমবে। জেলাবাসীর একাংশের বক্তব্য, বীরভূমের সমস্ত প্রাথমিক স্কুলেই ওই ব্যবস্থা চালু হওয়া প্রয়োজন। রান্নার জন্য গ্যাসের বন্দোবস্ত হলে আরও একটি বড় সমস্যার সুরাহা হবে বলে শিক্ষকদের আশা। তাঁরা জানান, বর্ষাকালে কাঠ এবং অন্য জ্বালানি ভিজে যাওয়ায় অনেক সময়েই মিড-ডে মিল রান্না করা যায় না। ফলে ওই মরসুমে উপস্থিতির হার কমে। এ বার সেই সমস্যা আর থাকল না। মিড-ডে মিল দফতর জানাচ্ছে, জ্বালানি বাবদ যে টাকা ধরা থাকে, তাতেই ওই সিলিন্ডার ফের ভরে নেওয়া সম্ভব।

তবে আশঙ্কাও রয়েছে একটা। রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে বলে আশঙ্কা প্রধান শিক্ষকদের। তাঁরা বলছেন— সেই সমস্যা কাটাতে স্কুলে স্কুলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা ও স্কুলে রান্নার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন