অসুস্থ বৃদ্ধা দিনভর পড়ে রইলেন পথে

বুধবার সন্ধ্যায় এসডিও (মানবাজার) সঞ্জয় পাল হাসপাতালের রাস্তা দিয়ে গাড়িতে যাচ্ছিলেন। গাড়ির আলোতেই তাঁর চোখে পড়ে, বৃদ্ধা রাস্তার ধারে পড়ে কাতরাচ্ছেন। গাড়ি থেকে নেমে পরিচয় জানার চেষ্টা করেন। লাভ হয় না। তখনই হাসপাতালে ফোন করে ডাকা হয় অ্যাম্বুল্যান্স।

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ০৭:০০
Share:

অ্যাম্বুল্যান্সে। নিজস্ব চিত্র

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান চলছে। রাস্তার ধারে পড়ে শীর্ণ বৃদ্ধা। পায়ের পাতায় গভীর ক্ষত । মাছি ভনভন করছে। যন্ত্রণায় হাঁটাচলা বন্ধ। অনেকের চোখে পড়েছে হয়তো। কিন্তু ছবিটা বদলায়নি। শেষ পর্যন্ত, সন্ধ্যায় বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করালেন খোদ এসডিও। বুধবার মানবাজারের ঘটনা। পরীক্ষা করে চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর পায়ের ক্ষত মারাত্মক হয়ে রয়েছে। আর কয়েক দিন ও ভাবে পড়ে থাকলে পা কেটে বাদ দেওয়ার মতো অবস্থা হত। তবে, আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। নিয়মিত পরিচর্যায় তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে চিকিৎসকেরা আশা করছেন।

Advertisement

বুধবার সন্ধ্যায় এসডিও (মানবাজার) সঞ্জয় পাল হাসপাতালের রাস্তা দিয়ে গাড়িতে যাচ্ছিলেন। গাড়ির আলোতেই তাঁর চোখে পড়ে, বৃদ্ধা রাস্তার ধারে পড়ে কাতরাচ্ছেন। গাড়ি থেকে নেমে পরিচয় জানার চেষ্টা করেন। লাভ হয় না। তখনই হাসপাতালে ফোন করে ডাকা হয় অ্যাম্বুল্যান্স। শুরু হয় চিকিৎসা। সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, বৃদ্ধা তখনও অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে বসে রয়েছেন। চিকিৎসক পায়ের ক্ষত দেখে শিউরে উঠলেন। ওষুধ দিয়ে ধীরে ধীরে সব পোকা বের করা হয়। ক্ষত পরিষ্কার করে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়।

কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বৃদ্ধা জল দিয়ে এক টুকরো পাঁউরুটি খান। ক’দিন আদৌ তাঁর খাওয়া জুটেছিল কি না, তা নিয়েই হাসপাতালের লোকজনের সন্দেহ। এসডিওর সঙ্গে ছিলেন মানবাজার মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মৃদুল শ্রীমানি ও বিডিও (মানবাজার ১) নীলাদ্রি সরকার। তাঁরা বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলেন। এসডিও বলেন, ‘‘বৃদ্ধা গুছিয়ে কিছু বলতে পারছেন না। তিনি হিন্দিভাষী। এটুকু বোঝা গিয়েছে, ছেলেরা মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তার পরে কোনও ভাবে এখানে এসে পড়েছেন। কোনও মতে চেয়েচিন্তে খাবার জোগাড় করছিলেন। কিন্তু পায়ের ক্ষত মারাত্মক হয়ে ওঠায় হাঁটতে পারছিলেন না। ক’দিন খাবার জোগাড় করে উঠতে পারেননি।’’

Advertisement

খবর পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ হাসপাতাল চত্বরে ভিড় করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মানভূম কলেজের শিক্ষক প্রদীপ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘খবর নিয়ে জানলাম, ওই বৃদ্ধা কয়েক দিন ধরে হাসপাতালের রাস্তায় পড়েছিলেন। এত মানুষ যাতায়াত করেছেন, কিন্তু কারও নজরে পড়েনি— এটা বিশ্বাস হয়না। এসডিও এগিয়ে না এলে কী হত, সেটা ভেবেই শিউরে উঠছি।’’ বিডিও বলেন, ‘‘চিকিৎসক আশ্বাস দিয়েছেন, উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তার পরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হবে।’’

বুধবার রাতে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃদ্ধার জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন