চেয়ারম্যান নিয়ে তরজা বাঁকুড়ায়

ঘর গোছাতে নির্দলই ভরসা শম্পার

পুরযুদ্ধ শেষ। এ বার শুরু হয়েছে ‘চেয়ার’ নিয়ে লড়াই। কে হবে চেয়ারম্যান তা নিয়ে জোর তরজা বাঁকুড়ায় শাসকদলের অন্দরে। পুরভোটে শাসকদলের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে যেমন ‘দ্বন্দ্ব’ দেখা গিয়েছিল, ঠিক তেমনি চেয়ারম্যান হওয়া নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০১:৪৩
Share:

অপেক্ষা পুরপ্রধানের। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

পুরযুদ্ধ শেষ। এ বার শুরু হয়েছে ‘চেয়ার’ নিয়ে লড়াই। কে হবে চেয়ারম্যান তা নিয়ে জোর তরজা বাঁকুড়ায় শাসকদলের অন্দরে। পুরভোটে শাসকদলের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে যেমন ‘দ্বন্দ্ব’ দেখা গিয়েছিল, ঠিক তেমনি চেয়ারম্যান হওয়া নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

Advertisement

বাঁকুড়া পুরসভায় শাসকদলের দু’ই নেত্রী শম্পা দরিপা ও অলকা সেন মজুমদারের ‘দ্বন্দ্ব’ নতুন কিছু নয়। বিদায়ী পুরবোর্ডের মাঝামাঝি সময়ে উপপুরপ্রধান অলকাদেবী অনাস্থা এনেছিলেন পুরপ্রধান শম্পাদেবীর বিরুদ্ধে। তলবি সভায় এক ভোটে হেরেও গিয়েছিলেন শম্পাদেবী। তাতেও হালে পানি পাননি অলকাদেবী। দলের সুপ্রিমোর নির্দেশে সিআইসি ভেঙে দিয়ে শম্পাদেবীকেই চেয়ারম্যান পদে রাখা হয়। এই ঘটনায় বেজায় চটে গিয়ে মাঝখান থেকে পুরসভায় আসাই বন্ধ করে দেন অলকাদেবী। এ বার নতুন করে পুরবোর্ড গড়ার পালা। তবে তৃণমূল একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়নি। যদিও বোর্ড গড়ার পথে কোনও বাধা যে আসবে না তা কার্যত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে শাসক দল। পুরসভায় ২৪টি আসনের মধ্যে ১২টি জিতেছে তৃণমূল। দরকার আর একজন কাউন্সিলর। সে ক্ষেত্রে এই পুরসভা থেকে জয়ী চারজন নির্দল কাউন্সিলরের মধ্যেই একজনকে বেছে নেওয়া হবে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই কয়েক জন নির্দল তৃণমূলকে সমর্থন করতে এগিয়েও এসেছে বলে দলীয় ভাবে দাবি করা হচ্ছে। বোর্ড গঠনের হিসেব যত সহজে মেলাতে পারছে শাসক দল চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে গিয়ে ততটাই নাজেহাল অবস্থা।

তৃণমূল সূত্রে খবর, শম্পা দরিপাকে রুখতে দলের জয়ী প্রার্থীদের একটা বড় অংশ এবং একশ্রেণির জেলা নেতারা একজোট হয়েছেন। যাতে করে প্রথম থেকে অনেকটাই ব্যাকফুটে দেখাচ্ছে শম্পাদেবীকে। অন্য দিকে, অনাস্থার থেকেও এ বার অনেক শক্তিশালী হয়ে শম্পাদেবীকে রুখতে গুঁটি সাজিয়েছেন অলকাদেবী। শম্পাদেবীর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর তরফে চেয়ারম্যান হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ অগ্রবালকে। রাজ্য নেতাদের কাছেও এই দাবি তোলা হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। প্রকাশ্যে অবশ্য এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। সেক্ষেত্রে অলকাদেবী বা দিলীপবাবুদের এক কথা, “দলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। দল যাকেই দায়িত্ব দেবে আমরা মেনে নেব।’’

Advertisement

সম্প্রতি অলকাদেবী, দিলীপবাবু-সহ জনা দশেক কাউন্সিলর তৃণমূল ভবনে গিয়েছিলেন। সেখানে সুব্রত বক্সি, ফিরহাদ হাকিমদের সঙ্গে তাঁরা দেখা করেন। এ বিষয়ে অলকাদেবী বলেন, “দলের জয়ী প্রার্থীরা রাজ্য নেতাদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন।” তবে ওই কাউন্সিলরদের একাংশ জানাচ্ছেন, মূলত পুরপ্রধান নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই রাজ্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনায় শম্পাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে করার দাবিই জানানো হয়েছে। ওই কাউন্সিলরদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনের বক্তব্য, “শম্পাকে আমরা পুরপ্রধান হিসেবে চাই না। রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছি। তার স্বপক্ষে কিছু যুক্তিও দেখিয়ে এসেছি রাজ্য নেতাদের।’’ কী যুক্তি? ওই কাউন্সিলর বলেন, ‘‘গতবার তৃণমূলের বোর্ড থাকা সত্ত্বেও এ বারের পুরভোটে সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারাটা আদপে শম্পাদেবীর ত্রুটি বলে বলা হয়েছে। পাশাপাশি শম্পাদেবীকে চেয়ারম্যান করলে ফের অনাস্থার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ এ সব শুনে কী বললেন রাজ্য নেতৃত্ব? কাউন্সিলর বলেন, “সবটাই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন সুব্রতবাবু, ববি হাকিমরা।” অন্য দিকে, শম্পাদেবীর অনুগামীরা অবশ্য পুরভোটে আশানুরূপ ফল না হওয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই পদ্ধতিকেই দায়ী করছেন। শম্পাদেবীর এক অনুগামী বলেন, “এলাকায় কার কতটা জনসংযোগ রয়েছে তা খতিয়ে না দেখেই প্রার্থী বাছাই হয়েছে। তাই এই ফলাফল হয়েছে।’’

এ দিকে, তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নির্দল রেখা দাস রজক ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী নির্দল প্রার্থী দেবাশিস লাহাকে নিয়ে তৃণমূল ভবনে গিয়েছিলেন শম্পাদেবী। দলীয় সূত্রে খবর, তাঁদের তৃণমূলে যোগদান করানোর বিষয়েও কথা হয় তৃণমূল ভবনে এবং দু’জনেই তার বিনিময়ে পুরসভায় বড় পদ দাবি করেছেন বলে জানা গিয়েছে। জেলা তৃণমূলের একাংশের মতে পুরসভায় ক্রমশ কোনঠাসা হয়ে পড়ছেন বুঝেই নিজের অনুগামীদের দলে টানতে চাইছেন শম্পাদেবী। তাঁকে তৃণমূলে যোদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দেবাশিসবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন শম্পাদেবী। কিন্তু আমি এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। চেয়ারম্যান ভোটাভুটি হলে তাতে যোগ দেব এবং উন্নয়নের পক্ষেই রায় দেব।’’ উন্নয়ন মানে পক্ষান্তরে কি শম্পাদেবীকেই বোঝাতে চাইছেন? দেবাশিসবাবুর উত্তর, “তা এখনই বলতে পারব না।’’ রেখাদেবীও বলেন, “শম্পাদেবী দলে ফিরতে বলেছেন। ওয়ার্ডে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’’ তবে চেয়ারম্যান হিসেবে শম্পাদেবীই তাঁর পছন্দ বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে রেখাদেবী বলেন, “উন্নয়নের স্বার্থেই শম্পাদির পাশে দাঁড়াব।’’ শম্পাদেবী অবশ্য পুরো বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে আমি নেই। আমি নিশ্চিত, দল যোগ্য ব্যক্তিকেই দায়িত্ব দেবে।’’

বিক্ষুব্ধদের সামলে কোনও মতে পুরভোট পার করেছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। এ বার চেয়ারম্যান কে হবে তা নিয়েও মতানৈক্য দেখা দিয়েছে দলের অন্দরে। দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “কোনও ব্যক্তির ইচ্ছে দলের কাছে বড় নয়। দলই শেষ সিদ্ধান্ত নেবে। সবাইকেই তা মানতে হবে।’’ আজ বুধবার বাঁকুড়া পুরসভার তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে কলকাতায় রাজ্যস্তরের একটি বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে কিছু সুরাহা হয় কি না সে দিকেই তাকিয়ে বাঁকুড়া শহরবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন