প্রতীকী ছবি।
বছর শেষটা ভালই কাটছে বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের। দলে কোণঠাসা অবস্থা থেকে তাঁকে তুলে এনে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে জেলা চেয়ারম্যানের পদে বসানোর রেশ কাটতে না কাটতেই ফের বিষ্ণুপুরে মেলা কমিটির শীর্ষে উঠে গেলেন তিনি। প্রধান অতিথি হয়ে তিনিই মেলার সাংস্কৃতিক মঞ্চের ফিতে কাটতে যাচ্ছেন বলে আমন্ত্রণপত্র ছাপানো হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ করে সব কিছু বদলাতে দেখে তাঁর অনুগামীরা বলছেন— ‘‘দাদার তো এখন বৃহস্পতি তুঙ্গে’’।
কিন্তু শ্যামবাবুর ‘উন্নতি’-তে অনেকের গোসা হয়েছে বলে জল্পনা স্থানীয় তৃণমূল মহলে। সেই জল্পনায় ঘি ঢেলেছে মেলা কমিটি থেকে আচমকা শ্যামবাবুর বিরোধী বলে পরিচিত বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য ও উপ পুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়ের পদত্যাগ।
শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনের ৩০তম বিষ্ণুপুর মেলা। ইতিমধ্যে বিশিষ্টজনদের কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো শুরু হয়েছে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় মেলার উদ্বোধনের অতিথিদের নাম দেওয়া হোর্ডিংও পড়ে গিয়েছে। এক সময়ে শ্যামবাবুই ছিলেন বিষ্ণুপুর মেলা কমিটির সর্বেসর্বা। কিন্তু মন্ত্রিত্ব যাওয়ার সঙ্গেই গত কয়েক বছর ধরে দলে কোণঠাসা হয়ে পড়ায় মেলা কমিটিতে তাঁর প্রভাবও কমে গিয়েছিল। এ বার মেলা শুরুর মুখে ফের দলনেত্রীর নির্দেশে দলে শ্যামবাবুর উত্থান হতেই মেলাতেও তিনি গুরুত্ব পেয়ে গিয়েছেন বলে বাসিন্দাদের মধ্যে চর্চা শুরু হয়েছে। আর তার পরেই এই শহরে তৃণমূলের শ্যাম ও তুষার অনুগামীদের মধ্যে বিভেদের ছবিটা নতুন করে প্রকট হয়ে উঠেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক তথা বিষ্ণুপুর মেলা ও উৎসব কমিটির সদস্য সচিব ময়ূরী ভাসুর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তথা মেলা কমিটির সহ-সভাপতি তুষারকান্তি ভট্টাচার্য, বিষ্ণুপুরের উপপুরপ্রধান তথা কমিটির কোষাধ্যক্ষ বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়, ও মেলার স্বেচ্ছাসেবক উপসমিতির আহ্বায়ক তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মথুর কাপড়ি। চিঠিতে তুষারবাবু ও বুদ্ধবাবু উল্লেখ করেছেন, তাঁরা মেলা ও উৎসব কমিটির সমস্ত সদস্য ও সমস্ত উপসমিতির কর্মকর্তা ও সদস্যেরা সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমন্ত্রণপত্র প্রত্যাহার করতে হবে। কেন?
রাখঢাক না করে সে ব্যাখ্যাও তাঁরা দিয়েছেন। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, শ্যামবাবুকে কেন প্রধান অতিথি করা হয়েছে?
যদিও শ্যামবাবুকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে বলেই তাঁরা পদত্যাগ করেছেন, বুধবার সে কথা স্পষ্ট করে খোলসা করতে চাননি তুষারবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ব্যাপারটা তা নয়। সব কিছুর একটা পদ্ধতি আছে। মেলা কমিটিতে কোনও আলোচনা না করেই ওই আমন্ত্রণপত্র ছেপে বিলি করা হচ্ছে। আত্মসম্মানে লেগেছে। আমি মহকুমাশাসক, জেলাশাসকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। পদত্যাগপত্রের প্রতিলিপি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী যা বলবেন তা মেনে নেব।’’ তবে বুদ্ধবাবু এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
আর যাঁকে নিয়ে এই বিতর্ক সেই শ্যামবাবু বলছেন, ‘‘আমন্ত্রণপত্র পেয়েছি। তবে এ নিয়ে কোনও বিতর্ক হচ্ছে কি না জানি না তো!’’
মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘ওঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে তা বিষ্ণুপুর মেলা ও উৎসব কমিটির সভাপতি তথা জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সভাধিপতি অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘‘নতুন করে আমন্ত্রণপত্র আর ছাপা হবে না।’’ তবে সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে বলে তিনি দাবি করলেও তা ব্যাখ্যা করেননি।
উৎসবের আগে বিষ্ণুপুরের রাজনীতিতে জল ঘোলা হলেও শ্যাম অনুগামীরা বেজায় খুশি। তাঁরা বলে বেড়াচ্ছেন, ‘‘এত দিন ওরা কম নাচানাচি করেনি। এ বার দাদা মঞ্চের ফিতে কেটে নতুন করে এন্ট্রি নেবেন।’