—ফাইল চিত্র।
‘‘মশারির মধ্যে ঢুকে পড়েছে গোখরো সাপ! দয়া করে এখনই চলে আসুন।’’
কিছু দিন আগে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা মিশনের ব্যবস্থাপনায় শিক্ষকদের বিষয় ভিত্তিক একটি প্রশিক্ষণ শিবির হয় সিউড়ি বেণীমাধব ইনস্টিটিউশনে। প্রশিক্ষণে অন্যদের সঙ্গে ছিলেন সিউড়ির অজয়পুর স্কুলের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক দীনবন্ধু বিশ্বাসও। সিউড়ির পীরতলা থেকে আর্জিটা এসেছিল তাঁর কাছেই। শিক্ষক গিয়ে উদ্ধার করেন সাপটিকে।
সিউড়ি এবং লাগোয়া এলাকা থেকে ভারতীয় বন্যপ্রাণ দুর্নীতি দমন শাখার সদস্য দীনবন্ধুবাবুর কাছে এমন আর্জি প্রায়ই আসে। তবে বর্ষা নামার পর সেই আর্জির সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। ওই শিক্ষক জানাচ্ছেন, গত চার সপ্তাহে, শুধু সাজানো পল্লি, সমন্বয় পল্লি, সেচ বিভাগের অফিস, বড়বাগান, মল্লিকগুনো, সেহেড়াপড়া থেকে গোখরো, চিতি, জলঢোঁড়া, দাঁড়াশ নিয়ে ৩০টিরও বেশি সাপ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। সেগুলির মধ্যে বিষধর সাপের সংখ্যাই বেশি।
গ্রাম বাংলায় সাপের সঙ্গে মানুষের সাক্ষাৎ বাড়ে গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা। সাপেদের আস্তানায় জল ঢুকে যাওয়ায় বর্ষায় সাপগুলি চলে আসে লোকালয়ে। যদিও শহরের বাড়িতে বাড়িতে এ ভাবে সাপ ঢুকে পড়ার ঘটনা অবাক করার মতোই। তবে এর মধ্যে অস্বাভাবিকতা দেখছেন না দীর্ঘ দিন ধরে সাপ নিয়ে কাজ করা জীববিজ্ঞানের দুই শিক্ষক দীনবন্ধু বিশ্বাস ও মরুৎ দেব।
নদিয়ার চাকদহের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মরুৎ দেব গত চল্লিশ বছর ধরে সাপ নিয়ে কাজ করছেন। প্রায় পঁচিশ বছর ধরে এই কাজই করছেন সিউড়ির অজয়পুর স্কুলের দীনবন্ধুবাবুও। ওঁদের কথায়, ‘‘ফাঁকা জায়গা, জলা ঝোপ জঙ্গল কেটে বাড়ি ঘর হচ্ছে। নগরায়নের প্রভাবে বাসস্থান হারাচ্ছে সাপেরা। ঘটছে খাদ্যের অভাব। মূলত নিশ্চিত আশ্রয় ও খাদ্যের জন্যই শহরে সাপেদের উপস্থিতি বেড়ে চলেছে। ফলে মানুষ ও সাপের সংঘাত নিশ্চিত।’’
শহরে সাপের কামড় খাওয়ার ঘটনা না ঘটলেও শহর লাগোয়া এলাকায় গোখরো সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রের। দিন কয়েক আগে চিতি সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় বছর তিনেকের এক শিশু কন্যার। মেয়েটির মাকেও কামড়ে ছিল চিতি সাপটি। যদিও হাসপাতালে প্রাণে বেঁচেছে মা।
তবে আতঙ্কের বদলে সাপেদের ‘উপদ্রপ’ ঠেকাতে সতর্কতাই বেশি জরুরি বলে মত বিশেষজ্ঞদের। প্রথমত, রাতের বেলা অন্ধকারে এখানে সেখানে হাত না দেওয়া। টর্চ বা আলো ব্যবহার করা। বাড়িতে থাকা গর্তগুলি বুজিয়ে ফেলা। ঝোপঝাড় পরিস্কার করা। ব্লিচিং এবং ফিনাইল ব্যবহার করা। এবং মেঝেতে না ঘুমিয়ে অবশ্যই বিছানা ঝেড়ে, মাশারি টাঙিয়ে সেখানে ঘুমনো। ঠান্ডা উনুন বা হাঁস-মুরগির ঘরে হাত দেওয়ার আগে সেই ঘর ভাল করে দেখে নিতেও বলছেন তাঁরা। তাতে কিছুটা হলেও রেহাই মিলতে পারে। দীনবন্ধুবাবুরা বলছেন, ‘‘এ রাজ্যে চার ধরনের সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গোখরো, কেউটে, কালাচ বা ডোমনা চিতি এবং চন্দ্রবোড়া।’’
বিষধর সাপের কামড় খাওয়ার পরে কোনও ওঝা-গুণিনের কাছে না নিয়ে গিয়ে, যত দ্রুত সম্ভব কাছাকাছি সরকারি হাসপাতালে রোগীকে পৌঁছনো জরুরি। তাতে মৃত্যু আটকানো সম্ভব। অযথা আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ, সাপদের খাদ্য, বাসস্থানের অভাব ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। সংঘাতও বাড়বে। তাই পথ সচতনতা তৈরিই।