সাপের ছোবলেই মৃত্যু সাপের ওঝা বিজয়ের

এলাকায় কোথাও বিষধর সাপ বেরোলেই তা ধরতে ডাক পড়ত তাঁর। লোকে বলত, যত বিষধর সাপই হোক না কেন, সেটা ধরতে তাঁর ছিল জুড়ি মেলা ভার! ফণা তোলা যে সাপ দেখলে লোকে ভয় পেয়ে দূরে যায়, অবলীলায় সেই সাপের কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে নিখুঁত হাতে থাবা বসাতেন বিষধরের গলার ঠিক নীচেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৬ ০১:১০
Share:

এই সাপের ছোবলেই মৃত্যু হয়।—নিজস্ব চিত্র

এলাকায় কোথাও বিষধর সাপ বেরোলেই তা ধরতে ডাক পড়ত তাঁর। লোকে বলত, যত বিষধর সাপই হোক না কেন, সেটা ধরতে তাঁর ছিল জুড়ি মেলা ভার! ফণা তোলা যে সাপ দেখলে লোকে ভয় পেয়ে দূরে যায়, অবলীলায় সেই সাপের কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে নিখুঁত হাতে থাবা বসাতেন বিষধরের গলার ঠিক নীচেই। এ হেন অকুতোভয় বিজয় রাজোয়াড় (৫২) মারা গেলেন সাপের ছোবলেই!

Advertisement

বিজয়ের বাড়ি কাশীপুরের রাজোয়াড়পাড়ায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, শনিবার রাতে কাশীপুরের রাজবাড়ির কাছাকাছি এলাকায় একটি বাড়িতে বিষধর সাপ ঢুকে পড়ে। এক মহিলা ঘরে শুয়েছিলেন। ভয়ে চিৎকার করে তিনি ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসেন। কার্বলিক অ্যাসিড ছিটিয়ে সাপটিকে বাইরে বের করার চেষ্টা করা হলেও কাজ হয়নি। অগত্যা ডাক পড়ে বিজয়বাবুর। কোথাও সাপ ধরার ডাক পড়লে বিজয়বাবু পিছিয়ে থাকার লোক ছিলেন না। গোখরো বেরিয়েছে শুনে সটান ওই বাড়িতে হাজির হয়ে যান তিনি। সাপটিকে ঘরের মধ্যে আসবাবের খাঁজে ঢুকে থাকতে দেখে কাছে গিয়ে ধরেও ফেলেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মনোহর রাজোয়াড়ের কথায়, ‘‘কত সাপ ধরে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে এসেছে বিজয়, তা হিসেব করা যাবে না।’’ কিন্তু, শনিবার রাতে হিসেবে ভুল হয়ে গিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, গোখরোটিকে ধরে জঙ্গলেই ছেড়ে দিয়ে আসার সময় মুহূর্তের অসতর্ককায় সাপটি বিজয়বাবুর আঙুলে ছোবল দেয়। কিন্তু তিনি সেই ছোবলকে তেমন পাত্তা দেননি। কাউকে কিছু জানানওনি। সাপ জঙ্গলে ছেড়ে চুপচাপ বাড়ি ফিরে শুয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু রাত একটু বাড়তেই দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ে পৌঁছন। বিজয়বাবুর স্ত্রী মালতী রাজোয়াড় বলেন, ‘‘শনিবার অত রাতে আমি যেতে মানা করেছিলাম। শুনল না। বেশ কিছুক্ষণ পরে ফিরে চুপচাপ শুয়ে পড়ল। আমি ওর হাতের আঙুলে রক্ত দেখে জানতে চাইলাম কী হয়েছে। কিছু বলল না। একটু পরে পেটে চাপ লাগছে বলে নদীর পাড়ের দিকে চলে গেল।’’

Advertisement

রবিবার সকালে পড়শিরা মালতিদেবীকে খবর দেন, তাঁর স্বামী নদীর ধারে পড়ে রয়েছেন। তিনি গিয়ে দেখেন, বিজয়বাবুর দেহ নিথর। পড়শিরা জানান, তাঁরা বিজয়বাবুকে বমি করতে করতে নদীর দিকে যেতে দেখেছিলেন। মালতীদেবীর আক্ষেপ, ‘‘যখন যে যেখানে সাপ ধরতে যেতে বলত, আমার স্বামী চলে যেত। সেই সাপের কামড়েই সব শেষ হয়ে গেল আমার! ওর রোজগারেই সংসার চলত। এখন কী হবে, জানি না।’’ স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য শেখ ফরিদ বলছিলেন, ‘‘অদ্ভুত সাহস ছিল লোকটার। বিষধর সাপ ধরতে কখনও পিছিয়ে যেতে দেখিনি। এমন এক জনের সাপের ছোবলেই মৃত্যু খুব দুর্ভাগ্যজনক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন