বাড়ির সামনে ভ্যাট বসবে গ্রামেও

বাড়ির সামনে ভ্যাট। তাতেই জড়ো করে রাখা বাড়ির আবর্জনা। সময়মতো সেই আবর্জনা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন সাফাই কর্মীরা। পুর এলাকায় এমন ছবি খুবই সাধারণ। এ বার পঞ্চায়েত এলাকাতেও দেখা যাবে ওই পরিচিত ছবি।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০০:৩২
Share:

বাড়ির সামনে ভ্যাট। তাতেই জড়ো করে রাখা বাড়ির আবর্জনা। সময়মতো সেই আবর্জনা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন সাফাই কর্মীরা।

Advertisement

পুর এলাকায় এমন ছবি খুবই সাধারণ। এ বার পঞ্চায়েত এলাকাতেও দেখা যাবে ওই পরিচিত ছবি। সৌজন্যে ‘আইএসজিপিপি (ইনটিউশনাল স্ট্রেংদেনিং অফ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রজেক্ট)’ প্রকল্প। ওই প্রকল্পের অধীনেই এই পরিষেবা পাবেন পঞ্চায়েত এলাকায় বসবাসকারী পরিবার।

শুধু বাড়ি থেকে বর্জ্য পদার্থ নিয়ে যাওয়াই নয়, থাকছে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে আবর্জনা সংগ্রহ থেকে পরিবহণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ— সোজা কথায় সামগ্রিক ‘আবর্জনা ব্যবস্থাপনা’ বা ‘সলিড অ্যান্ড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’। প্রাথমিক ভাবে চারটি পঞ্চায়েতকে (রামপুরহাট ১ ব্লকের খরুণ, লাভপুর ১, খয়রাশোল ও সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা) বেছে নেওয়া হলেও জেলার মোট ২৩টি পঞ্চায়েতকে ওই প্রকল্পের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে প্রশাসনের। ইতিমধ্যেই মোট ২০ লক্ষের মধ্যে বরাদ্দ ১৫ লক্ষ টাকা পেয়ে গিয়েছে দুবরাজপুরের লোবা এবং নলহাটি ১ ব্লকের কুরুমগ্রাম পঞ্চায়েত। পরিবেশকে দূষণমুক্ত রেখে সংগৃহীত পচনশীল অবর্জনা থেকে প্রক্রিয়াকরণের মধ্যে ‘ভার্মি কম্পোজ’ বা কেঁচো সার (যা চাষিদের কাজে লাগবে) তৈরি করা এবং অপচনশীল পদার্থ ‘রিসাইক্লিংয়ে’র জন্য বেছে বিক্রি করাই ‘স্বচ্ছভারত মিশনে’র অন্তর্গত এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসাই প্রথম লক্ষ্য। নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত গড়তে প্রথম ধাপই ছিল, এলাকায় যে সব পরিবারের শৌচাগার নেই তা গড়ে দেওয়া। পরের ধাপ ছিল, উন্মুক্তস্থানে শৌচকর্ম করার মানুষের দীর্ঘ দিনের অভ্যাস বদলে দেওয়া। আর সেই কাজ করেই ‘নির্মল’ তকমা পেয়েছে জেলার বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত। কিন্তু ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযানে’র কর্মসূচি তাতেই শেষ হয়ে যায়নি। খোলা জায়গায় শৌচকর্ম আটকালেও আবর্জনা পরিস্কার করার কোনও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ছিল না গ্রাম্য এলাকায়।

জেলা আইএসজিপিপি সেলের আধিকারিক দয়াশঙ্কর পাঠক বলছেন, ‘‘নীতিগত ভাবে নির্মল তকমা পাওয়া পঞ্চায়েতেগুলিকেই প্রকল্পের প্রাপকের তালিকায় রাখার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্ত থেকে প্রশাসনিক ভাবে কিছুটা সরতে হয়েছে। কেননা বরাদ্দ পাওয়ার জন্য এমন কিছু শর্ত রয়েছে যা নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকটি এই মুহূর্তে পূরণ করতে পারবে না। তবে যে পঞ্চায়েতগুলি বাছা হয়েছে, গুরুত্বের বিচারেও সেগুলি এগিয়ে।’’

যা হবে

• বাড়ির দরজায় থাকবে দু’টি বালতি। একটি সবুজ, অন্যটি লাল।
• সবুজে জমবে পচনশীল পদার্থ (এমনকী তরলও)। অন্যটায় প্লাস্টিক বা অপচনশীল পদার্থ।
• বালতিগুলি নির্দিষ্ট সময় অন্তর তুলে নিয়ে যাবে পঞ্চায়েত।
• পচনশীল পদার্থ থেকে হবে কেচো সার।
• ওই সার এলাকার চাষিরা ব্যবহার করবেন।
• অপচনশীল বস্তুগুলি বিক্রির ব্যবস্থা করবে পঞ্চায়েত।

তবে প্রকল্প সফল হবে কিনা তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাও রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, আগেও এই প্রকল্পের টাকা কয়েকটি ব্লক পেয়েছিল। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে তা কার্যকরই করা যায়নি। তাই সব দিক খতিয়ে দেখেই এগোতে চায় প্রশাসন। কর্তারা মনে করছেন, গ্রামের ক্ষেত্রে পরিবার পিছু কিছু টাকা না নিলে প্রকল্পটি চালানোই সম্ভব নয়। পরিকাঠামো নির্মাণে ব্যয় করা হলেও প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটটি চালাতে এবং নিয়মিত আবর্জনা সংগ্রহ করতে যে লোকবল প্রয়োজন, তাদের মাসিক বেতন বা অন্যান্য খরচ দেওয়ার জন্য টাকা লাগবে। মাত্র ছ’মাসের জন্যই সেই খরচ প্রকল্পের মধ্যে ধরা আছে। অত এব নিয়মিত এই পরিষেবা সঙ্গে যাঁরাই যুক্ত হন, তা সে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরাই হোক বা ‘বেনিফিয়ারি কমিটি’— পরিষেবা দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা উপভোক্তাদেরই বহন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য পঞ্চায়েতে তার নিজস্ব আয়ের একটা অংশ থেকে ভর্তুকি দিয়ে উপভোক্তাদের সেই ভার কিছুটা লাঘব করতে পারে।

খরুণ পঞ্চায়েতের প্রধান মিনতি চৌধুরী জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা কাজ শুরু করেছেন। তবে স্বনির্ভর দল না অন্য কোনও ভাবে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা ঠিক হয়নি। ঠিক হয়নি পরিবার পিছু কত টাকা করে পরিষেবার জন্য নেওয়া হবে। দ্বারকা নদ ঘোঁষা চারটি সংদসকে প্রথমে পরিষেবার আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারাপীঠের হোটেলের বর্জ্য পদার্থও পঞ্চায়েতের প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটে নিয়ে আসা হবে।

এ দিকে, অভিনব ভাবনা খয়রাশোলের। পঞ্চায়েতের প্রধান খয়রাশোলের ভূপেন্দ্রনাথ ঘোষ বলছেন, ‘‘আমাদের জমির পরিমাণ এক বিঘার থেকে অনেকটাই বেশি। ওই দাগ নম্বরে একটি পুকুর রয়েছে। সেখানে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে হাঁস ও মাছ চাষ করাতে পারি। পরের দিকে কয়েকটা গরু কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’ যাঁদের হাতেই দায়িত্ব যাক, তাঁদের সংসার খরচের জন্য প্রয়োজনীয় টাকার একটা বড় অংশ এ ভাবে উঠে আসলে প্রকল্প সফল করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় বলেই তাঁর মত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন