ছেলের জঙ্গি-যোগের কথা শুনে বাবার প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘দোষী হলে ওর শাস্তি হোক।’ সেই ছেলেই লাভপুরের নিরীহ তিন বয়স্ককে (দুই বৃদ্ধ এবং এক বৃদ্ধা) খুনের ছক কষায় অভিযুক্ত শুনে নাসিরউদ্দিন মিয়াঁ বললেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না আমাদের ছেলে এ রকম একটা ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। মুসার জন্য আমরা কারও কাছে মুখ দেখাতে পারছি না!’’
বৃহস্পতিবার ছিল ইদ। এ দিন লাভপুর ব্লক অফিস লাগোয়া রেজিস্ট্রি অফিসপাড়ায় মুসার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল খুশির এই উৎসবের ছিটেফোঁটাও নেই। মুসার মা জাকিরা বিবির কথায়, ‘‘প্রতিবার ইদে বাড়িতে কত রকমের রান্না হয়। লোকজন আসে। এ বার কিছুই হয়নি। সকলেরই মন খারাপ।’’
সোমবার মুসার সঙ্গে যোগসাজসের অভিযোগে ওই এলাকারই আমিন শেখ ওরফে শেখ আব্বাসউদ্দিন এবং সাদ্দাম হোসেন ওরফে কালোকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, একই পরিস্থিতি তাদের বাড়িতেও। সাদ্দামের বাবা মইনুদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘ওর কলকাতা পুলিশের চাকরি প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল। তার মাঝে কোথা থেকে কি হয়ে গেল! এই প্রথম ইদে আমাদের বাড়িতে কোনও আনন্দ হচ্ছে না।’’
এ দিকে, ছেলের জন্যে দুঃশ্চিন্তায় ইদের কোনও প্রস্তুতিই নেননি আমিনের মা মর্জিনা বিবি। তাঁর কথায়, ‘‘ইদে সকলের জন্য নতুন জামাকাপড় কেনা হয়েছিল। তা আর কারও পড়া হল না।’’
বস্তুত, বুধবারই সিআইডি-র একটি সূত্র দাবি করেছিল, মুসা ওরফে শেখ মসিউদ্দিন মিয়াঁ গ্রেফতার হওয়ায় লাভপুরের একটি সম্পন্ন বনেদি পরিবারের তিন জনকে হত্যার ছক বানচাল হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে এ কথা জেনে চমকে গিয়েছে লাভপুর। প্রকাশ্যে অবশ্য কেউই এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
পুলিশের একটি সূত্রে অবশ্য দাবি, জঙ্গি-যোগ সন্দেহে বুধবার লাভপুর থেকেই আরও দু’জনকে আটক করা হয়েছে। তবে তাদের নাম-পরিচয় এখনও জানাতে চাননি তদন্তকারীরা। তবে ঘটনার যথাযথ তদন্তের দাবি উঠেছে সব মহলেই।