Digital Arrest in Kolkata

১৬ দিন হোয়াট্‌সঅ্যাপে আটক, রিপোর্ট দিতে হত প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর! ডিজিটাল গ্রেফতার হয়ে সর্বস্ব হারালেন কলকাতার প্রৌঢ়া

ঘটনার কথা কাউকে না-জানানোর জন্য প্রৌঢ়াকে আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন প্রতারকেরা। সর্বক্ষণ প্রৌঢ়ার উপর নজর রাখতেন তাঁরা। বাড়ির বাইরে কোথাও যেতে হলে, সব সময় ওই প্রতারকদের জানিয়ে যেতে হত।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:৫০
Share:

ডিজিটাল গ্রেফতারের ফাঁদে পড়ে ২৮ লক্ষ টাকা খোয়ালেন কলকাতার এক প্রৌঢ়া। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

সারাদিন আটকে রাখা হত হোয়াটস্‌অ্যাপে। মোবাইল বন্ধ করতে পারতেন না। তিনি কী অবস্থায় রয়েছেন, তা প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর জানাতে হত। কলকাতার আনন্দপুর এলাকার বাসিন্দা প্রৌঢ়া সুনীতা (নাম পরিবর্তিত) বুঝতেই পারেননি, কখন তাঁকে ডিজিটাল গ্রেফতারের ফাঁদে ফেলে দেওয়া হয়েছে। যখন বুঝতে পারেন, ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। প্রৌঢ়ার থেকে সর্বস্ব হাতিয়ে নেন প্রতারকেরা। দফায় দফায় তাঁর থেকে ২৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত গত ২১ নভেম্বর থেকে। ওই দিন সকালে তাঁর কাছে প্রথম ফোন আসে। তার পর থেকে ১৬ দিন প্রৌঢ়াকে ডিজিটাল গ্রেফতার করে রাখেন প্রতারকেরা। কখনও মুম্বই পুলিশ, আবার কখনও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র আধিকারিক পরিচয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বলে অভিযোগ। প্রৌঢ়াকে বলা হয়, তাঁর আধার নম্বর ব্যবহার করে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করে নাকি ‘অনৈতিক’ আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এই বলে প্রৌঢ়াকে ফাঁদে ফেলেন সাইবার প্রতারকেরা।

প্রৌঢ়া সুনীতা তাঁর অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে থাকেন আনন্দপুরের বাড়িতে। আচমকা এমন ফোন আসায় কিছুটা ঘাবড়ে যান তিনি। সেই ভীতিরই সুযোগ নেন প্রতারকেরা। প্রৌঢ়াকে সারাদিন ফোনের মধ্যে হোয়াটস্অ্যাপে আটকে রাখেন তাঁরা। মোবাইল বন্ধ করতে দেওয়া হত না। এমনকি দু’ঘণ্টা অন্তর অন্তর মুম্বই পুলিশ এবং ইডির আধিকারিকের ভুয়ো পরিচয় ব্যবহার করা ওই প্রতারকদের কাছে রিপোর্টও দিতে হত প্রৌঢ়াকে। জানাতে হত, তিনি ঠিক আছেন।

Advertisement

কথা মতো কাজ না-করলে তাঁকে ‘জেলে’ ভরে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হত। এমনকি প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হত বলে অভিযোগ। ঘটনার কথা কাউকে না-জানানোর জন্য প্রৌঢ়াকে আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন ছদ্মবেশী প্রতারকেরা। সর্বক্ষণ প্রৌঢ়ার উপর নজর রাখতেন তাঁরা। বাড়ির বাইরে কোথাও যেতে হলে, সব সময় ওই প্রতারকদের জানিয়ে যেতে হত।

ডিজিটাল গ্রেফতার হওয়ার পরে একটি পর্যায়ে গিয়ে ভয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন সুনিতা। সেই সুযোগকেই কাজে লাগান প্রতারকেরা। প্রৌঢ়ার তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দফায় দফায় মোট ২৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। দু’টি অ্যাকাউন্ট থেকে চার লক্ষ টাকা করে এবং অপর একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যাচ্ছে, ভয় দেখিয়ে সুনীতার প্রায় সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারকেরা।

এখানেই থেমে থাকেননি প্রতারকেরা। ২৮ লক্ষ টাকা লুট করার পরে প্রৌঢ়াকে স্বর্ণঋণ নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন তাঁরা। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত সুনীতা শেষে নিজের মেয়েকে পুরো ঘটনার কথা জানান। মেয়ের সন্দেহ হওয়ায় তিনিই স্বর্ণঋণ নেওয়া থেকে আটকান সুনীতাকে। প্রৌঢ়াও বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। শেষে আনন্দপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রবিবার এফআইআর রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement