বন্ধুরা মেরেছে। তাই তাদেরও সে ছাড়বে না বলে মাকে জানিয়ে দিয়েছিল আট বছরের সইফ আলি শেখ। মারমুখী ছেলেকে শান্ত করতে বাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন মা। তাতে আরও রেগে বাড়ির ভিতরে চাষের কাজের জন্য রাখা কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করল সে।
বড়জোড়ার মান্দারবুনি এলাকার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সইফের মৃত্যুতে হতবাক পরিবার থেকে পড়শিরা। ওইটুকু ছেলে যে আত্মহত্যা করতে পারে, তা ভেবেই বিস্মিত এলাকার বাসিন্দারা।
সইফের এক সম্পর্কিত দাদা আশফারুল শেখ জানায়, সোমবার সকালে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে গ্রামের মাঠেই খেলতে গিয়েছিল সইফ। কোনও কারণে মাঠে অন্য ছেলেদের সঙ্গে ঝামেলা বাধে তার। উত্তেজিত অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসে সৈইফ মাকে সব জানায়। তাতেও রাগ কমেনি। রাগের মাথায় বন্ধুদের মারবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল সে। মা জরিনা বিবি একটি ঘরে তাকে ঢুকিয়ে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। এইভাবে প্রায় আধ ঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ার পরে সইফের ঠাকুমা ওই ঘরে ঢুকলে সইফ তাঁকে জানায়, সে বিষ খেয়ে নিয়েছে। পড়শি ও পরিবারের লোকজন সঙ্গে সঙ্গে তাকে বড়জোড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার মারা যায় সইফ।
গোটা ঘটনায় শোকের ছায়া নেমেছে মান্দারবুনি গ্রামে। মঙ্গলবার কথা বলার মতো অবস্থাতেই ছিলেন না জরিনা বিবি। সইফের বাবা হাসমত আলি শেখও বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। বললেন, “সইফ আমার দ্বিতীয় ছেলে। কোথা থেকে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ মন্দারবুনি প্রাথমিক স্কুলে পড়ত সইফ। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “এমনিতে খুব শান্ত ছেলে ছিল। পড়াশোনায় ছিল মধ্যম মানের। সব শুনে আমরা হতবাক।’’
সৈইফের পরিবার ও পড়শিদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, মাস ছ’য়েক আগেই কোনও এক কারণে হাসমতও কীটনাশক খেয়েছিলেন। চিকিৎসায় সে যাত্রা বেঁচে যান তিনি। পড়শিদের মতে, হতে পারে বাবার মতো সেও বেঁচে যাবে বলে ভেবেছিল সইফ। তাই মায়ের উপর রাগ দেখাতেই কীটনাশক খেয়েছিল। তবে, তাকে বাঁচানো গেল না।
মনোবিদ মোনালিসা ঘোষের মতে, হঠাৎ খুব রেগে গেলে আঘাত করার প্রবণতা জাগতেই পারে। ছোটরাও ব্যতিক্রম নয়। তবে কারও ক্ষেত্রে কম, কারও ক্ষেত্রে তা বেশি প্রকাশ পায়।
তাঁর কথায়, ‘‘ইদানীং দেখা যাচ্ছে, ছোটরা বাবা-মা বা বন্ধুদের কাছে নিজেদের কষ্টের কথা বলতে পারছে না বলে তাদের মধ্যেও নিজেকে শেষ করে দেওয়ার একটা চরম তাগিদ তৈরি হচ্ছে।’’ সইফের বাবার আত্মহত্যার চেষ্টাও শিশুমনে প্রভাব ফেলে থাকতে পারে মোনালিসাদেবী মনে করছেন।