Sonali Bibi

বাংলাদেশ থেকে ফিরে ছিলেন হাসপাতালে, বুধবার ছুটি পেয়ে মুরারইয়ের বাড়িতে ফিরলেন সুনালী, স্বামী আটক ভিন্‌দেশে

দীর্ঘ আইনি লড়াই, নানা বাধা অতিক্রম করে আদালতের নির্দেশে নিজের দেশে, নিজের মাটিতে ফেরানো হয়েছে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেওয়া সুনালীকে। গত শনিবার সন্ধ্যায় বছর আটেকের পুত্রকে নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মালদহ সীমান্ত দিয়ে সপুত্র রাজ্যে প্রবেশ করেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:০১
Share:

অবশেষে বাড়ি ফিরছেন বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেওয়া অন্তঃসত্ত্বা সুনালী বিবি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বাংলাদেশ হয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ, তার পর বীরভূমে ফিরেছিলেন গত শনিবার। কিন্তু বাড়িতে সময় কাটানো হয়নি। সোজা রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছিল নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা সুনালী বিবিকে। চার দিন চিকিৎসার পর অবশেষে বুধবার ছাড়া পেলেন তিনি। বুধবারই মুরারইয়ের পাইকর এলাকার বাসিন্দা তাঁর শ্বশুরবাড়িতে ফিরেছেন। তবে ‘ভাল নেই’ সুনালী। কারণ, এখনও বাংলাদেশে আটকে রয়েছেন তাঁর স্বামী-সহ পরিবারের চার জন। সন্তানসম্ভবা মহিলা চাইছেন যত শীঘ্রই সম্ভব বাড়ি ফিরুন স্বামী।

Advertisement

দীর্ঘ আইনি লড়াই, নানা বাধা অতিক্রম করে আদালতের নির্দেশে নিজের দেশে, নিজের মাটিতে ফেরানো হয়েছে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া সুনালীকে। গত শনিবার সন্ধ্যায় বছর আটেকের পুত্রকে নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মালদহ সীমান্ত দিয়ে রাজ্যে প্রবেশ করেন। রবিবার বাড়ি ফেরার পর তাঁকে একঝলক দেখতেই ভিড় জমিয়ে দেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু বাড়িতে বেশি ক্ষণ থাকা হয়নি তাঁর। চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে তাঁর শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা হয়।

ওই হাসপাতালের অতিরিক্ত সুপার ঈশ্বর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সুনালী বিবির শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তাই তাঁকে বাড়ি ফেরানো হয়েছে। আগামী জানুয়ারি মাসে তাঁর প্রসব করানোর সম্ভাবনা রয়েছে।” পাশাপাশিই, তিনি জানান, এর মধ্যে কোনও শারীরিক অসুবিধা হলে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাঁকে।

Advertisement

দিল্লির রোহিণীর ২৬ নম্বর সেক্টরে থাকতেন সুনালীরা। স্বামী এবং ৮ বছরের পুত্র-সহ গত ১৭ জুন তাঁদের গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। অভিযোগ, বাংলায় কথা বলার জন্য বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। তার পর সে মাসের ২৬ তারিখ অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলা-সহ আরও কয়েক জনকে বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়। অন্য দিকে, ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসাবে গত ২০ অগস্ট সুনালী-সহ ছ’জনকে ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর মডেল থানার পুলিশ। তার পরে সকলের জায়গা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংশোধনাগারে। উদ্বেগ ছিল সুনালীর গর্ভাবস্থা নিয়ে।

ঘটনাক্রমে গত ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাই কোর্ট তাঁদের চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফেরানোর নির্দেশ দেয়। কিন্তু, কেন্দ্র তা না-মানায় হাই কোর্ট আদালত অবমাননার মামলা করার নির্দেশ দেয়। যার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে কেন্দ্র। রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে লড়াই করেছিলেন। শেষমেশ বাড়ি ফিরতে পারেন সুনালী।

সুনালীর বাড়ি ফেরার পর খুশির আবহ এলাকায়। তবে পরিবারের দুশ্চিন্তা কাটছে না। কবে ফিরবেন বাংলাদেশে আটক থাকা তাঁর স্বামী এবং অন্যেরা, সেই অপেক্ষায় সকলে। বস্তুত, গত সোমবার কোচবিহারে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে সুনালীকে নিয়ে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি তকমা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আর কাউকে কাউকে ‘পুশ’ করা হচ্ছে। স্থানীয় পুলিশ কী করছে? আপনাদের হাতের নাগাল থেকে কী ভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে? আমরা যে গর্ভবতী মাকে নিয়ে এলাম, তাঁর পরিবারের ৪ জন এখনও ওখানে আছেন। তাঁরা ভারতের নাগরিক। কাগজপত্র আছে। তা সত্ত্বেও বিএসএফ জোর করে তাঁদের ‘পুশ ব্যাক’ করে দিচ্ছে।’’

(ভ্রম সংশোধন: বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসা বীরভূমের বাসিন্দার নাম সুনালী বিবি। তাঁর আধার কার্ডে হিন্দি এবং ইংরেজিতে নাম রয়েছে সুনালী খাতুন (বিবাহের আগে যা তাঁর পুরো নাম ছিল)। তিনি নিজেও জানিয়েছেন তাঁর নাম সুনালী বিবি। আমরা ধারাবাহিক ভাবে তাঁর নাম ‘সোনালি বিবি’ লিখছিলাম। সেই ভ্রম আমরা সংশোধন করে নিলাম। এই ত্রুটির জন্য আমরা সুনালী বিবি এবং তাঁর পরিবারের কাছে আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement