হেলমেট নেই? যমরাজ দিলেন গদার ঘা

রাখির দিন বলে অল্পের উপর দিয়ে যম ছেড়ে দিলেন। মাথায় শুধু গদার একটা আলতো ঘা। ব্যস। তবে এটাও বলে রাখলেন, হেলমেট না পরার জন্য মৃত্যু হলে এত সহজে ছাড়বেন না। গরম তেলে লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে ভাজতে পারেন। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৮ ০০:৩৪
Share:

কাছে যেতেই প্রশান্তকে থামিয়ে যমরাজ তাঁর মাথায় মৃদু গদার বাড়ি মারেন। নিজস্ব চিত্র

রাখির দিন বলে অল্পের উপর দিয়ে যম ছেড়ে দিলেন। মাথায় শুধু গদার একটা আলতো ঘা। ব্যস। তবে এটাও বলে রাখলেন, হেলমেট না পরার জন্য মৃত্যু হলে এত সহজে ছাড়বেন না। গরম তেলে লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে ভাজতে পারেন।

Advertisement

কথায় বলে, পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা। রাখির দিনে যমের ছত্রিশ ঘার ভয় দেখিয়ে মোটরবাইক আরোহীদের টনক নড়াতে উদ্যোগী হয়েছিল পুরুলিয়ার বিভিন্ন থানার পুলিশ ও প্রশাসন। বিডিও (মানবাজার ১) নীলাদ্রি সরকার বলেন, ‘‘হেলমেট ব্যবহারে গান্ধীগিরি সবাইকে সচেতন করতে পারেনি। অনেককে কঠিন সত্যটা বোঝানো দরকার ছিল বলেই যমরাজ ও যমদূত সাজিয়ে এ রকম নাটকের আয়োজন করা হয়েছিল। বিপদে না পড়লে মানুষ সচেতন হন না।’’

মানবাজার ২ ব্লকের আমজোড়া গ্রামের যুবক প্রশান্ত মাহাতো মোটরবাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন। রাস্তার পাশে গদা হাতে সিভিক ভলান্টিয়ার যে যমরাজ সেজে তাঁর মতোই বিনা হেলমেটের বাইক আরোহীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তিনি প্রথমে ঠাহর করতে পারেননি। কাছে যেতেই প্রশান্তকে থামিয়ে যমরাজ তাঁর মাথায় মৃদু গদার বাড়ি মারেন। জানতে চান— ‘‘হেলমেট নেই কেন মাথায়?’’ প্রশান্ত বলেন, ‘‘মায়ের ওষুধ কিনতে মানবাজারে এসেছিলাম। তাড়াহুড়োয় হেলমেট আনতে পারিনি।’’ পরে অবশ্য মহিলা পুলিশ কর্মীরা প্রশান্তর হাতে রাখি পরিয়ে, মুখে লাড্ডু দিয়ে দীর্ঘজীবন কামনা করেছেন।

Advertisement

বোরোর বাসিন্দা সহদেব সিংহ সস্ত্রীক বাজারে এসেছিলেন। নিজে মাথায় হেলমেট পরলেও স্ত্রীর মাথা খালি কেন? যমরাজের প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি। পুলিশ কর্মীদের সামনে তাঁর স্ত্রী জবা সিংহ বলেন, ‘‘আগে দোকানে গিয়ে হেলমেট কিনব। তারপরে বাকি কাজ।’’

এ দিন মানবাজারের ব্যাঙ্ক মোড়ে একটি পথনাটিকাও অভিনয় করা হয়েছে। মানবাজার মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মৃদুল শ্রীমাণি বলেন, ‘‘পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে পথ নিরাপত্তা বিধি সংক্রান্ত লাগাতার প্রচার করে যাচ্ছি। তবু কিছু মোটরবাইক চালক নির্বিকার। বিনা হেলমেটেই রাস্তায় বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়ছেন। তাই অন্য আঙ্গিকে পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রচারে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’’

এমনিতেই পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের নিতুড়িয়া থানা এলাকায়। গত সপ্তাহেই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা গাড়ি চালকদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। রাখির দিনে সেখানে এসেছিলেন ‘যম’। তিনি আবার পুলিশে কাজ করার সুবাদে বিলক্ষণ জানেন, কী ভাবে হেলমেটবিহীন বাইকআরোহীকে ধরে জরিমানা করতে হয়। তবে এ দিন জরিমানা করেননি। খড়ের তৈরি নকল গদার ঘা দিয়েছেন। আর হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন মিষ্টির প্যাকেট। পরিয়ে দেওয়া হয়েছে রাখি। নিতুড়িয়া থানার ওসি পঙ্কজ সিংহ জানান, কনস্টেবল সোমনাথ নাগকে যম সাজানো হয়েছিল। রঘুনাথপুর শহর থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল যাত্রাদলের পোশাক।

জয়পুর থানা আর ব্লক প্রশাসনও যম সেজে দাঁড়িয়েছিল রাস্তায়। তবে গদার ঘা খেতে হয়নি। শুধু রাখি পরিয়েই হেলমেটবিহীন মোটরবাইক আরোহীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সেখানে। বিডিও (জয়পুর) নয়না দে বলেন, ‘‘আমরা চাই সবাই পথ নিরাপত্তার নিয়ম মেনে ভাল থাকুন। রাখি পরিয়ে তার জন্য মঙ্গলকামনা করতে পারি। কিন্তু সুরক্ষিত থাকতে নিজে দায়িত্ব নিয়ে হেলমেট পরতে হবে। সেটাই মনে করানো হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন