বিষ খাইয়েই কি কুকুর খুন? জল্পনা

কয়েক বছর আগে ভিন্ রাজ্যে রাস্তার সারমেয়দের হত্যা দেশের সংবাদপত্রগুলির শিরোনামে এসেছিল। দেশের পশুপ্রেমী সংগঠনগুলি-সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিবাদের জেরে, সে যাত্রা ওই সব রাজ্যে রক্ষা পায় পথের সারমেয়রা৷ তবে ওই ঘটনাকে মনে রেখে, প্রতিবাদ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল এ রাজ্যেও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০৬
Share:

এই কুকুরদেরই বিষ খাইয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। তাদের শুশ্রূষায় ব্যস্ত সাঁইথিয়ার চার যুবক।— অনির্বাণ সেন

কয়েক বছর আগে ভিন্ রাজ্যে রাস্তার সারমেয়দের হত্যা দেশের সংবাদপত্রগুলির শিরোনামে এসেছিল। দেশের পশুপ্রেমী সংগঠনগুলি-সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিবাদের জেরে, সে যাত্রা ওই সব রাজ্যে রক্ষা পায় পথের সারমেয়রা৷ তবে ওই ঘটনাকে মনে রেখে, প্রতিবাদ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল এ রাজ্যেও।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সাঁইথিয়ায় পর পর সারমেয়ের মৃত্যু ও অসুস্থতার খবরে সেই স্মৃতিই যেন ফিরে এল! স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘‘কুকুরগুলিকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছে।’’ পুলিশ অবশ্য কিছু জানে না। যে ওয়ার্ডের ঘটনা, তার কাউন্সিলর জানিয়ে দিয়েছেন, সারমেয় মৃত্যুর কোনও ঘটনা ঘটেনি এ দিন। স্থানীয়দের অবশ্য দাবি, অন্তত ছ’টি কুকুরের মৃত্যু হয়েছে এ দিন। ঘটনা জানাজানি হতেই ক্ষোভ জানিয়েছেন জেলার সারমেয়প্রেমীরা।

ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন সাঁইথিয়ায়?

Advertisement

এ দিন সকালে সাঁইথিয়ার দু’নম্বর ওয়ার্ডের ধর্মরাজতলা পাড়ায় কিছু সারমেয়কে মৃতপ্রায় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় যুবক হাসেম শেখ, বিক্রম বাউড়ি, আকাশ গুপ্তা, বিনোদ বাউড়িরা জানান, সকালে কাজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখা যায়, রাস্তায় দু-চার হাত অন্তর কুকুরগুলো ঝিম ধরে পড়ে আছে। তার মধ্যে কয়েকটি মনে হয় মারাও গিয়েছিল। বিক্রম বলেন, ‘‘একটা ভ্যান রিক্সায় চাপিয়ে চারটে কুকুরকে স্থানীয় পশু হাসপাতালে নিয়ে যাই। পশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। অনেক অনুরোধে একটা ইনজেকশন লিখে দেয়। নিজেরাই ইনজেকশন কিনে জীবিত কুকুরগুলোকে দিই। এখন ওরা একটু ভাল আছে।’’

এ দিন স্থানীয় যুবক হাসেম শেখ বলেন, ‘‘ছ’টি কুকুরকে মৃত অবস্থায় আমরা নদীর বালিতে পুঁতে দিই। অসুস্থ কুকুরগুলিকে পশু হাসাপাতাল ফেরালে তাদের চিকিৎসা করিয়ে পাশের একটি স্কুলের চালায় রাখা হয়েছে।’’ পাড়ার লোকেদের অবশ্য দাবি, চুরির উদ্দ্যেশ্যেই কেউ বা কারা কুকুরকে বিষ খাইয়েছে।

ওই পশু চিকিৎসক কেন্দ্রের চিকিৎসক শম্পা কুণ্ডু বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ মিথ্যে। মৃত কুকুর আনা হয়নি। আনা হলে ময়না-তদন্ত হত।’’

এ দিন এক সারমেয়প্রেমী জানান, সে সময় হিংস্র সারমেয়দের মেরে ফেলার নামে কেরলে রাস্তার যে কোনও সারমেয়কেই নৃশংস ভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে৷ ওই হত্যালীলায় বাদ পড়েনি কুকুরের ছানা এমনকী প্রসূতি-সারমেয়ও৷ প্রতিবাদে চলে ফেসবুক, ই-মেলও। কেরল বয়কটের অংশীদার হতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন বহু পশুপ্রেমী তথা সারমেয়প্রেমী সংস্থা। সাঁইথিয়ার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, নলহাটি হীরালাল কলেজের অধ্যাপক তথা ‘পেটা’ (পিপলস ফর এ্যাথিক্যালস ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যাল)- এর সদস্য গৌতম সেন বলেন, ‘‘এমন ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তা হলে খোঁজ খবর করে পুলিশে জানাব।’’

ঘটনা হল, শুধুমাত্র রাস্তার কোনও কুকুর কেন, আইন এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, অন্য কোনও পশু অথবা প্রাণীকেও এমন করে হত্যা করা যায় না৷ সারমেয়প্রেমী সংস্থার দাবি, ‘‘কেরলের ঘটনাও ছিল বেআইনি৷ অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড অফ ইন্ডিয়া-র নিয়মও মানেনি কেরল সরকার৷ এ দিন সাঁইথিয়ার ঘটনার নিন্দনীয়।’’ বোলপুরের পশুপ্রেমী ঊর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা। সর্বস্তরে জনসচেতনতা গড়া উচিত।’’

শান্তিনিকেতনের সারমেয়প্রেমী সংস্থা ‘মৈত্রী চেতনা’-র সম্পাদক ব্রতীন সিংহ বলেন, ‘‘পশু ক্লেশ নিবারণী আইন অনুযায়ী এই ঘটনা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ক্ষেত্রে উচিত দোষীদের শাস্তি হওয়া।’’ সাঁইথিয়ার ঘটনা তাঁদেরকে দুঃখ দিয়েছে— এমনই জানালেন সিউড়িতে রাস্তার কুকুর নিয়ে কাজ করা সিরাজুল মণির। বললেন, ‘‘অত্যন্ত খারাপ খবর।’’ শুধু মণির নন, সিউড়ি শহরে মিতা ঘোষাল, পাপিয়া বন্দ্যোপাধ্যারাও রাস্তার কুকুরদের নিয়ে কাজ করেন। তাঁরা বলছেন, কুকুর নিয়ে কাজ করলে অসহযোগিতা অবজ্ঞা জোটে। কুকুরগুলোকে বিষ দেওয়া সেটারই অঙ্গ। এ দিকে সাঁইথিয়ার যে ওয়ার্ডের ঘটনা, সেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিবনাথ হাজরা বলেন, ‘‘কুকুর মারার ঘটনা ঘটেনি। হয়তো কোথাও কিছু খেয়ে কিছু কুকুর অসুস্থ হয়েছিল। পাড়ার ছেলেরা স্থানীয় পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করায়। এ তো প্রশংসার কাজ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন