Kajal Sheikh

নয়া ‘সমীকরণ’ উস্কে এক মঞ্চে কাজল-গদাধর

একটা সময় ছিল, যখন কাজল-গদাধর জুটির দাপটে অনুব্রত মণ্ডলকেও ‘কোণঠাসা’ হতে হয়েছিল বলে দলীয় সূত্রের খবর।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

কীর্ণাহার শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ ০৭:৫৭
Share:

বলছেন কাজল। একদম ডান দিকে বসে গদাধর নিজস্ব চিত্র

এক সময় তাঁরা ছিলেন কার্যত ‘হরিহর আত্মা’। পরে ‘শত্রুতা’ও চরমে ওঠে। দুই নেতার অনুগামীর সংঘাতে একাধিকবার রক্ত ঝরেছে জেলায়। তাঁরা কাজল শেখ ও গদাধর হাজরা। তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য কাজলের কর্মিসভায় নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রাক্তন জেলা যুব সভাপতি গদাধর থাকবেন কি না, তা নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের রীতিমতো জল্পনা ছিল। সেই জল্পনায় জল ঢেলে দিয়ে কাজলের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নিলেন গদাধরও! অনেকেই বলছেন, হয়তো রাজনীতির নতুন সমীকরণ তৈরি হল রবিবারের ওই কর্মিসভা থেকে। সেই ইঙ্গিত দিয়ে কাজল নিজেও বলেছেন, ‘‘এক সঙ্গে নতুন করে পথ চলা শুরু হল।’’

Advertisement

এ দিন কীর্ণাহারের কল্লোলভবনে ওই কর্মিসভা ছিল। সেই সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান বিধায়ক বিধানচন্দ্র মাঝি, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খান, নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য, ব্লক সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি রিঙ্কু চৌধুরী, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মধুসূদন পাল, অঞ্চল সভাপতি অসীম মণ্ডল প্রমুখ। তবে গদাধরের উপস্থিতি নিয়ে কর্মীদের মধ্যে চর্চা হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

এর কারণও আছে। একটা সময় ছিল, যখন কাজল-গদাধর জুটির দাপটে অনুব্রত মণ্ডলকেও ‘কোণঠাসা’ হতে হয়েছিল বলে দলীয় সূত্রের খবর। ২০১৩ সালের নানুর বিধানসভা কেন্দ্রের অধিকাংশ পঞ্চায়েতে বিরোধীরা যেখানে কোনও প্রার্থীই দিতে পারেনি সেখানে জেলা পরিষদের একটি আসনে লড়ে সিপিএম প্রার্থীর কাছে হারতে হয় অনুব্রত অনুগামী হিসাবে পরিচিত ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যকে। পরে অবশ্য এলাকার নেতৃত্ব কায়েমকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে জুটি ভেঙে গদাধর অনুব্রত শিবিরে যোগ দেন। তাতে বেজায় চটেন কাজল। অভিযোগ, সেই বিরোধিতার জেরেই ২০১৬ সালের নির্বাচনে জেতা নানুর আসনে হারতে হয় গদাধরকে। এর পর থেকে কাজলকে দলে ব্রাত্য করে দেন অনুব্রত বলে অভিযোগ।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনের পরে সেই কাজলকেই ব্লক কার্যকরী সভাপতি করেন অনুব্রত। অন্য দিকে গদাধর বিজেপিতে যোগ দেন। বছর খানেক ফের তৃণমূলে ফেরেন তিনি। সম্প্রতি আসানসোলে কোর্টে অনুব্রত উপস্থিত জেলা নেতাদের গদাধরকে কীর্ণাহার ১ ও ২ পঞ্চায়েতের দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেন বলেও তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে। দলে ফেরার পর গদাধরকে অন্য নেতাদের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা গেলেও কাজলের সঙ্গে দেখা যায়নি। উল্টে গদাধরের নিয়ন্ত্রণে থাকা কীর্ণাহার পার্টি অফিসের লকারে তালা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কাজল-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।

এমন আবহে এ দিন কাজল ও গদাধরকে এক মঞ্চে দেখে দলে জোর গুঞ্জন। বিরোধের কথা স্বীকার করে নিয়ে গদাধর বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। সংগঠনের স্বার্থে সেটা মিটিয়ে নিয়ে এক পথের পথিক হলাম।’’ যদিও কাজলের বক্তব্য, ‘‘আমাদের মধ্যে কোনও ভুল বোঝাবুঝি ছিল না। থাকবেও না।’’

ওই মঞ্চ থেকেই গদাধরের হুঁশিয়ারি, ‘‘বিজেপি সরকার ইডি, সিবিআই লাগিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে অনুব্রত মণ্ডলকে শেষ করতে চাইছে। অনুব্রত মণ্ডলের যদি কোনও কষ্ট হয়, তা হলে বীরভূম জেলায় বিজেপি কর্মীদেরও আমাদের কাছে থেকে একই কষ্ট পেতে হবে। অনুব্রত মণ্ডল আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন কী করতে হয়। আমরা বীরভূমে সেই কায়দায় ভোট করব।’’ এর প্রতিক্রিয়ায় বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বোলপুর) সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘যে ঘন ঘন দল বদলায়, তার নিজের দলেই কোনও গুরুত্ব নেই। তাই তার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কিছু বলে গুরুত্ব বাড়াতে চাই না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন