আলপনায় শেষ টান মাঘমেলায়

স্থানীয়দের পাশাপাশি বিশ্বভারতীর ‘দত্তক’ নেওয়া গ্রামের মানুষেরাও সারা বছর এই মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২৩:৫০
Share:

সাজগোজ: আলপনায় মগ্ন শিল্পীরা। মাঘমেলা শুরুর আগে। মঙ্গলবার শান্তিনিকেতনে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

শ্রীনিকেতন বার্ষিক উৎসব আজ, বুধবার শুরু হচ্ছে। স্থানীয় মানুষের কাছে এই উৎসবের পরিচিত নাম শ্রীনিকেতন মেলা বা মাঘমেলা। মেলায় দেশ-বিদেশের পর্যটকের কোনও ভিড় থাকে না ঠিকই কিন্তু মেতে ওঠেন বিশ্বভারতীর কর্মী, অধ্যাপক, পড়ুয়া থেকে শুরু করে এলাকাবাসী। স্থানীয়দের পাশাপাশি বিশ্বভারতীর ‘দত্তক’ নেওয়া গ্রামের মানুষেরাও সারা বছর এই মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।

Advertisement

মেলার আগের দিন, মঙ্গলবার উৎসব প্রাঙ্গণে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ফ্রেস্কো মঞ্চে নাটকের মহড়ায় ব্যস্ত পড়ুয়ারা। এক মনে আলপনা এঁকে চলেছেন শিক্ষাসত্রের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, তাঁকে সাহায্য করছেন কিছু পড়ুয়া। আর একটু এগিয়ে যেতেই দেখা গেল, গ্রাম থেকে আনাজ নিয়ে হাজির কিছু গ্রামবাসী। নিজেদের উৎপাদিত সব থেকে ভাল আনাজগুলি রেখে দিলেন আনাজ প্রদর্শনীর জন্য নির্দিষ্ট জায়গায়। নাগরদোলা লাগানো শুরু হয়েছে। কিছু স্টল তৈরি হচ্ছে। কেউ আবার জিনিস সাজিয়ে ফেলেছেন। গজা আর বালুসাই ভেজে চলেছেন মুর্শিদাবাদ থেকে আসা মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। সারা দিনের শেষে সন্ধ্যা নামতেই উৎসব প্রাঙ্গণে বেজে উঠল সানাই। মঙ্গলবার রাতে পাকুড়তলায় হল বৈতালিক।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের যে দু’টি সাধনার কথা বলেছেন, তার মধ্যে একটি শান্তিনিকেতন, অন্যটির নাম শ্রীনিকেতন। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা যায়, তাঁর বহুদিনের স্বপ্ন পল্লি-পুনর্গঠনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ১৯২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কুঠিবাড়িতে শুরু হয়েছিল ‘ইনস্টিটিউট অফ রুরাল রিকনস্ট্রাকশন’-এর কাজ। সেটিই নাম পায় শ্রীনিকেতন। শান্তিনিকেতন থেকে মাইল দু’য়েক দূরে শ্রীনিকেতনেই প্রাণ পেতে থাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গ্রামীণ ভাবনা। পরের বছর অর্থাৎ ১৯২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম শ্রীনিকেতন বার্ষিক উৎসব হয়। সেই থেকেই প্রতি বছর ৬ ফেব্রুয়ারি শ্রীনিকেতনের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে শুরু হয় শ্রীনিকেতন বার্ষিক উৎসব যা গ্রামীণ এলাকায় ‘কুঠির মেলা’ নামেও পরিচিত।

Advertisement

বিশ্বভারতীর প্রথা অনুযায়ী বুধবার ভোরে পাকুড়তলায় বৈতালিকের পরে উৎসব প্রাঙ্গণে প্রাতঃকালীন সানাই বাজবে। এর পরে সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আনুষ্ঠানিক ভাবে শ্রীনিকেতন বার্ষিক উৎসবের উদ্বোধন হবে। নিদর্শনপত্র প্রদানের অনুষ্ঠান শেষে প্রদর্শনীর উদ্বোধন হবে সকাল ১০টা নাগাদ। উদ্যোক্তারা জানান, সারা দিন ধরে রয়েছে বাউলগান, সুফিগান, যাত্রাগান, আদিবাসী নাচের অনুষ্ঠান। দুপুরে শ্রীনিকেতন ক্রীড়া প্রাঙ্গণে হবে বার্ষিক ব্রতী ও যুবসমাবেশ।

যে আদর্শ নিয়ে শ্রীনিকেতন মেলা শুরু হয়েছিল, এত বছর পরেও সেই ধারা বজায় রেখেছে বিশ্বভারতী। গ্রামীণ মেলা, তাই পৌষমেলার মতো নিরাপত্তায় আগাগোড়া মুড়ে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। মেলায় ঢুকতেই চার দিকে দোকান আর মাঝখানে অনুষ্ঠান মঞ্চ। সেখানেই হবে নানান গ্রামীণ সংস্কৃতির অনুষ্ঠান— ভাদু, ঝুমুর, ভাঁজো। এর সঙ্গেই দেখা যাবে নাগরদোলা, হরেক জিনিসের দোকান, খাবারের দোকান আর সার দিয়ে বসে থাকা কাঠ, পুঁথি, ডোকরা শিল্পীদের।

এ ছাড়াও দর্শকদের যা আকৃষ্ট করে তা হল আনাজ প্রদর্শনী। পার্শ্ববর্তী গ্রামীণ এলাকা থেকে গ্রামবাসী নিয়ে আসেন বিশাল আকারের মূলো বা সর্ষে ঝাড়। সঙ্গে থাকে পালং শাক, তিসি, সূর্যমুখী, আমআদাও। তা দেখতেই মানুষের আগ্রহের শেষ থাকে না। বিশ্বভারতীর জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগের পড়ুয়া বুদ্ধদেব বিশ্বাস, ইন্দ্রজিৎ পাত্র, দীপান্বিতা মাইতিদের কথায়, ‘‘সারা বছর এই তিনটে দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। গ্রামীণ শিল্প ও কৃষিজাত দ্রব্য দেখার সুযোগ পাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন