জেলায় ২ হাজার ৪১টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। প্রতীকী ছবি।
জেলার অনেক প্রাথমিক স্কুলে কয়েক বছর ধরে প্রধান শিক্ষক নেই। স্কুল চালাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকেরা। অভিযোগ, সে সব স্কুলে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে পদক্ষেপ করছে না প্রশাসন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুযোগ না থাকায় আর্থিক প্রাপ্য থেকেও অনেক শিক্ষক বঞ্চিত হচ্ছেন।
জেলা শিক্ষা দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ২ হাজার ৪১টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। তার মধ্যে অর্ধেকের বেশি স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক নেই। কয়েকটি স্কুলে জাতীয় শিক্ষানীতি মানা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, ১৫০ জন পড়ুয়া থাকা স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকা আবশ্যিক। ৪০ জন পড়ুয়া পিছু ১ জন করে শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু অভিযোগ, জেলার অনেক স্কুলেই ওই নীতি মানা হয়নি। প্রধান শিক্ষকের অবসরের পরে সেই পদে নতুন নিয়োগ দূর, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নির্দিষ্ট অনুপাতে শিক্ষকও নিয়োগ করা হয়নি।
জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাইকর চক্রে ৮৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে ৪৫টি স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক নেই। পাইকর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩১৭ জন ছাত্রীছাত্রীর জন্য পার্শ্বশিক্ষক সহ রয়েছেন ৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চন্দন দাস এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। স্কুলের সহশিক্ষক তথা পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি নুরুল আমিন জানান, সহশিক্ষকদের কাছে এক জন স্থায়ী প্রধান শিক্ষক আর এক জন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের গুরুত্ব সমান নয়। সে জন্য এক জন প্রধান শিক্ষক যে ভাবে স্কুল চালাতে পারেন, এক জন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয় না।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
একই অবস্থা নলহাটি পশ্চিম ও নানুর দক্ষিণ চক্রেও। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, নলহাটি পশ্চিম চক্রের ৭৩টি প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে ৩৯টি স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। নানুর দক্ষিণ চক্রে ৭৯টি প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে ৪৬টি স্কুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকই ভরসা। নলহাটি পশ্চিম চক্রের ইলাদেবী বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১২ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক নেই। নেই আনুপাতিক হারে শিক্ষকও। ওই স্কুলে ৩৮৬ জন পড়ুয়ার জন্য রয়েছেন ৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। ২০১৪ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক নেই নানুর দক্ষিণ চক্রের আলিগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ২০১৭ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক নেই ওই চক্রেরই ভাসামাঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নলহাটি ইলাদেবী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরুণকুমার চৌধুরী জানান, ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষকের মতোই বছরের পর বছর সমস্ত কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা প্রধান শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ বেতন হার বা অবসরকালীন সুবিধা পান না।
এই অব্যবস্থার জন্য জেলা শিক্ষা দফতরের নীতিকেই দায়ী করেছে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি। সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় চক্র অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে প্রধান শিক্ষকহীন স্কুল এবং প্রবীণ শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করা হতো। তার পর ইচ্ছুকেরা কে, কোন স্কুলে প্রধান শিক্ষক হতে চান তা জেনে নিয়োগ করা হতো। কিন্তু পরবর্তী কালে জেলা শিক্ষা দফতর শিক্ষকদের পছন্দের সুযোগ না দিয়ে প্রধান শিক্ষকের নিয়োগপত্র দিয়েছে । ফলে বহু শিক্ষক নিয়োগপত্র পাওয়ার পরেও প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দেননি।
পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক অরূপ বিশ্বাস জানান, প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্তির বিষয়টি জোর করে চাপিয়ে না দিয়ে পছন্দের স্কুল বেছে নেওয়ার সুযোগ রাখা হলে এমন পরিস্থিতি হতো না। ওই কারণেই যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও বহু প্রবীণ শিক্ষক সহকারী শিক্ষক হিসেবেই অবসর নিয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের জন্য বরাদ্দ বেতন এবং অবসরকালীন প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে ওই শিক্ষকদের।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রাজা ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে প্রতিটি স্কুলে শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বেশি জরুরি। সবাই পছন্দের স্কুল চাইলে তো সে ভাবে নিয়োগ করা সম্ভব নয়।’’ তিনি জানান, ১৯৮২ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক নেই এমন স্কুলও রয়েছে। তবে পছন্দের বিষয় নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। সংসদ প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য ‘প্যানেল’ তৈরি করেছে। কিন্তু ২০০৫-২০০৬ সালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জটিলতার কারণে তা কার্যকর করা যায়নি। বিষয়টি রাজ্য শিক্ষা দফতরের নজরে আনা হয়েছে। প্রয়োজনীয় নির্দেশ পেলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।