প্রতীকী ছবি।
মাথার উপর টিনের ছাউনি, কারও বা ত্রিপল, খড়। বেড়া বা মাটির দেওয়ালে ঘেরা। একচিলতে সে সব আশ্রয়ের সামনে রান্নার উনুন। রাস্তার পাশের টাইম-কল থেকে জল নিয়ে চলে গেরস্থালির কাজকর্ম। গাছের শুকনো ডাল, বাঁশের কঞ্চি, কাঠ, ঘুঁটের জ্বালানিতে ওই উনুনে রান্না করে সকাল সকাল কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। বিকেলে ফেরেন জীর্ণ ঘরে।
বর্ষায় চালের ফুটো দিয়ে জল পড়ে। কালবৈশাখীতে বাড়ির পলকা ছাউনি যাতে না ওড়ে, সে জন্য সবার ভরসা এত দিন ছিলেন শুধু ঈশ্বর। বসন্তে ভাঙা চাল দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ে খেটেখাওয়া সে সব মানুষের বিছানায়। সপরিবার ওই ছোট্ট ঘরেই বসবাস সকলের। আত্মীয়-কুটুম এলে কোনও বহুতলের নীচে বা রাস্তার ধারে দোকানের ছাউনিতে রাত কাটান তাঁরা।
রামপুরহাট পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে গাঁধীপুকুরের ধারে ধূলাডাঙা রোডের পাশে এমনই পরিস্থিতিতে দিনযাপন করতেন দিনমজুর ডুডুম হাঁসদার মতো অনেকে। এ বার তাঁদের দিনবদল হতে চলেছে।
গত ৩ জানুয়ারি আমোদপুরের জনসভায় ডুডুম হাঁসদার হাতে বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে রামপুরহাট ধূলাডাঙা রোডের ধারে গৃহহীনদের জন্য তৈরি চারতলা আবাসনের একটি ঘরের চাবি তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকিদেরও ঘর দেওয়ার কাজ দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
রবিবার রামপুরহাট পুরসভা থেকে লটারির মাধ্যমে বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে গৃহহীনদের জন্য তৈরি আবাসনের ঘর বিতরণের করার প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হল। বুধবার স্থানীয় বিধায়ক তথা কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিতিতে উপভোক্তারা লটারির মাধ্যমে পাওয়া সে সব ঘরে পা রাখবেন।
এ দিন দুপুরে রামপুরহাট পুরসভার সামনে লটারির মাধ্যমে ঘরের টোকেন বিলির পরে রামপুরহাটের পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি জানান, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন রামপুরহাট হাইস্কুল মাঠে। সেখানে যাওয়ার পথে ধূলাডাঙা রোডে বস্তিবাসীদের দুর্দশা দেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরেই তাঁদের জন্য ঘর তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কতগুলি ঘর তৈরি করতে হবে, সেই তালিকা তৈরির নির্দেশও দেন। এ বিষয়ে পুরপ্রধান অশ্বিনীবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো ধূলাডাঙা রোডের পাশে ৪, ৬ নম্বর ওয়ার্ড এবং রামপুরহাটের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে মালিবাগান এলাকার ২৭২ জন বস্তিবাসীর তালিকা তৈরি করা হয়। ঘর তৈরির প্রকল্পের জন্য সরকারি ভাবে বরাদ্দ করা হয় ১১ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা। তিনি জানান, ওই টাকায় গাঁধীপুকুরের ধারে ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে পথবাসীদের জন্য ৯টি চারতলা আবাসন এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডে মালিবাগান পাড়ায় আরও ৮টি চারতলা আবাসন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ১৭টি আবাসনের প্রতিটিতে ১৬টি করে পরিবার থাকতে পারবেন।
পুরপ্রধান অশ্বিনীবাবু জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ওই প্রকল্পের জন্য প্রথম কিস্তিতে ২৫ শতাংশ টাকা পাওয়া যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ২৫ শতাংশ টাকা পাওয়া গিয়েছে। ওই টাকায় গাঁধীপুকুরের ধারে প্রথম পর্যায়ে ৭টি আবাসন তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সেখানে আরও দু’টি আবাসন তৈরির কাজ চলছে। প্রথম পর্যায়ে তৈরি ৭টি আবাসনে ১১২টি পরিবারকে ঘর দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি পরিবারকে ২৭০ বর্গফুটের ঘর দেওয়া হয়েছে। সেখানে থাকবে একটি শোওয়ার ঘর, ডাইনিং প্লেস, রান্নাঘর, একটি শৌচাগার। পুরসভা প্রতিটি আবাসনে জলের ব্যবস্থা করেছে। প্রত্যেক উপভোক্তাকে পৃথক পৃথক বৈদ্যুতিক মিটার দেওয়া হবে। বিদ্যুতের বিল দিতে হবে উপভোক্তাদেরই।
রবিবার রামপুরহাট পুরসভায় লটারির মাধ্যমে ঘর বিতরণের অনুষ্ঠানে এসে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ধূলাডাঙা রোডের বাসিন্দা মাকু মার্ডি, ডুডুম হাঁসদা, দ্বিজপদ মাল বলেন— ‘‘এত দিন ভাঙা, একচিলতে ঘরে ছেলে-বৌ-পরিবারের অন্যদের সঙ্গে খুব অসুবিধার মধ্যে থাকতাম। আত্মীয়েরা এলে তো অনেক সময়ে খোলা আকাশের নীচেই রাত কাটাতে হত। এ বার সেই কষ্ট মিটল। এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’’