Independence Day Special

‘পেতেই হবে স্বাধীনতার স্বাদ’

এক দিন বাবার হাতেই যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হল মেয়েটিকে। শারীরিক এবং প্রবল মানসিক যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়া মেয়েটির স্থান হয়েছিল হোমে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৩ ০৪:৫৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

বছর যখন ছয়, তখন চোখের সামনে মা কে আত্মঘাতী হতে দেখেছিল ছোট্ট মেয়েটি। মায়ের মৃত্যুর পর সংসার কার্যত সংসার সামলানোর দায়িত্বে এসে পড়েছিল তার উপর। ১০ বছর পর্যন্ত স্কুলের মুখ দেখেনি সে। ছোট ছোট দুই ভাইবোনের যত্ন, হাত পুড়িয়ে রান্না— সবই করতে হত। পান থেকে চুন খসলেই মদ্যপ বাবার অত্যাচার!

Advertisement

এক দিন বাবার হাতেই যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হল মেয়েটিকে। শারীরিক এবং প্রবল মানসিক যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়া মেয়েটির স্থান হয়েছিল হোমে। সেটা ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাস। দগদগে সেই ক্ষত সরিয়ে রেখে টানা ১০ বছরে ধরে সে জারি রেখেছে স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকার লড়াই। পাশে আছেন হোম কর্তৃপক্ষ। অনেকটা এগোনো গিয়েছে। তবে স্বাধীনতা দিবসের আগে ওই তরুণী জানালেন তাঁর জীবনের লড়াই চলছে মুক্তির স্বাদ পেতে।

তিনি জানান, ওই ঘটনার পর চাইল্ড লাইন তাঁকে উদ্ধার করে। নির্যাতিতা ও তাঁর বছর পাঁচেকের বোনের জাগা হয় জেলার একটি হোমে। ভাইকে রাখা হয় আমার ঠাকুমার কাছে। নির্যাতিতার কথায়, ‘‘ওই ঘটনার পর মনে হল, জীবন বুঝি শেষ। হোমের দিদি নিয়মিত কাউন্সেলিং করাতেন। টানা একমাস এ ভাবে চললেও কিছুতেই আমি সেই দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিলাম না।’’

Advertisement

তিনি জানান, উদ্ধার হওয়া সমবয়সীদের স্কুলে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু তিনি চুপ ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘দিদি বললেন এ ভাবে চললে, লেখাপড়া না করলে তোর এবং তোর ভাইবোনদের জীবনও শেষ হয়ে যাবে। সেই কথাটাই আমাকে তাতিয়ে দিল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আমাকে পারতেই হবে।’’ তিনি জানান, পর দিন থেকে মাত্র ১০ দিনে অক্ষর পরিচয় এবং রিডিং পড়তে শিখলেন তিনি। মাত্র তিন দিন প্রাথমিক স্কুলে যান তিনি। তারপর উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে। তিনি বলেন, ‘‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে আমি এখন স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। দূর শিক্ষায় পড়ছি, কলকাতায় একটি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণও নিচ্ছি। জুড়ে আছি গান নাটকের সঙ্গে। ইচ্ছে আছে নার্সিংয়ে যাওয়ার। আমি পারব।’’

ওই তরুণী জানান, ওই ঘটনার পর নিজেরটা নিয়েই ভাবছিলে তিনি। তাতেই সমস্যা হচ্ছিল। এখন ভাই বোন-সহ অন্যদের কথাও ভাবছেন তিনি। তাঁকে যে দিনটা দেখতে হয়, সেটা যেন অন্য কোনও মেয়েকে না দেখতে হয় সেটাই চান তিনি। তরুণী বলছেন, ‘‘যদি বাড়িতে থাকতাম, আমার পড়াশোনা হত না। যে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি, বা ভবিয্যৎ নিয়ে যা ভাবছি সেই ভাবনাটাও আমার ভিতরে জন্ম নিত না। হয়তো আমার বাড়ির লোক বিয়ে দিয়ে দিত। কিন্তু আমার বোনও লেখাপড়া করছে। ভাই লেখাপড়া করার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজ করছে।’’

ওই তরুণী জানাচ্ছেন, ক্ষত সরিয়ে অনেকটা এগোনো গিয়েছে। তবে সমাজ কিছুতেই ক্ষত ভুলতে দেয় না বলেও আক্ষেপ তাঁর। বলছেন, ‘‘আমার তো কোনও দোষ ছিল না। বাবা নেশা না করলে হয়তো এই দিন দেখতে হত না।’’ স্বাধীনতা দিবসের আগে তিনি বলছেন, ‘‘আমি স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চাই। প্রতিষ্ঠিত আমাকে হতেই হবে। পেতে হবে মুক্তির স্বাদ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন