হাল ধরতে দলের ভরসা সেই সুজয়

দল সূত্রের খবর, শান্তনুবাবু সদস্যদের জানান, অনেকেই যোগ্য থাকলেও দল এই মূহূর্তে যাঁকে যোগ্য মনে করেছে, তাঁর হাতেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো খাম ছিঁড়ে চিরকুটে লেখা নাম সবার কাছে তুলে ধরেন।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫১
Share:

সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও সহ-সভাধিপতি প্রতিমা সোরেন। ছবি: সুজিত মাহাতো

জঙ্গলমহল সবুজে মুড়ে যাওয়ায় সেখানকার ভূমিপুত্রকেই বসানো হয়েছিল সভাধিপতির আসনে। কিন্তু, পাঁচটা বছর পরে সেই ভূমিপুত্রের সঙ্গেই জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায় পর্যুদস্ত হতে হয়েছে শাসকদলকে। আঘাত এসেছে জেলার অন্যান্য এলাকা থেকেও। এ বার তাই পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতির জন্য তৃণমূলের ভরসা হয়ে উঠল দলের পুরনো মুখ সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। সহ-সভাধিপতি হলেন প্রতিমা সোরেন।

Advertisement

পঞ্চায়েত ভোটে বেশ কিছু এলাকায় তৃণমূলকে বেগ দিয়েছে বিজেপি। প্রচুর পঞ্চায়েত থেকে কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতিও ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। সামনেই লোকসভা ভোট। তাই দলের পুরনো-নতুন কর্মীদের এক সারিতে নিয়ে এসে সংগঠন জোরাল করার তাগিদ জেগেছে শাসকদলের মধ্যেও। এই পরিস্থিতিতে সংগ্রামী ও স্বচ্ছভাবমূর্তির সুজয়কেই মুখ করে জেলা পরিষদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে দল।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা পরিষদের সভাধিপতি কে হচ্ছেন, তা নিয়ে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে জল্পনার পারদ ক্রমশ চড়তে থাকে। দলের নির্দেশে পুরুলিয়া শহরের ইন্ডোর স্টেডিয়াম সংলগ্ন একটি হস্টেলে দলের জেলা পরিষদের সদস্যেরা চলে এসেছিলেন। কখন সভাধিপতি ও সহ-সভাধিপতির নাম লেখা খাম নিয়ে রাজ্যসভার সদস্য শান্তুনু সেন আসেন, সেই অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁরা। রাতে তিনি আসেন। ছিলেন জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো-সহ নেতৃত্ব।

Advertisement

দল সূত্রের খবর, শান্তনুবাবু সদস্যদের জানান, অনেকেই যোগ্য থাকলেও দল এই মূহূর্তে যাঁকে যোগ্য মনে করেছে, তাঁর হাতেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো খাম ছিঁড়ে চিরকুটে লেখা নাম সবার কাছে তুলে ধরেন। বৈঠকেই ঠিক হয়, জেলা পরিষদের দলনেতা হবেন হলধর মাহাতো। সেখানে তখন অবশ্য সুজয় ছিলেন না। তিনি ছিলেন অন্যত্র দলেরই কাজে।

বুধবার সুজয়কেই মধ্যমণি করে শান্তিরামবাবু, শান্তনুবাবুরা বি টি সরকার রোডের তৃণমূল কার্যালয় থেকে জেলা পরিষদ পর্যন্ত বিরাট মিছিল নিয়ে এগিয়ে যান। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) দীনেশ মণ্ডল সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি ও সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘স্থায়ী সমিতি গঠনের পরে কর্মাধ্যক্ষেরা দায়িত্ব নেবেন।’’

বস্তুত, সদ্য প্রাক্তন সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর নামের সঙ্গে বারবার জড়িয়েছে বিতর্ক। জেলা পরিষদের কিছু কর্মাধ্যক্ষ তো বটেই, দলেরও একাংশের সঙ্গে তাঁর বনিবনা বিশেষ ছিল না। তাঁর বিরুদ্ধে অন্যদের অন্ধকারে রেখে একা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ বারবার উঠেছে। একাধিকবার দলনেত্রী তাঁকে সতর্ক করেছেন। বলরামপুরে বিপর্যয়ের পর থেকেই সৃষ্টিধরের সঙ্গে দলীয় নেতৃত্ব বারবার দূরত্ব দেখিয়েছেন।

এ দিন তাই শপথের পরে জুবিলি ময়দানে সুজয় বলেন, ‘‘এ বারে সতীর্থদের সঙ্গে নিয়েই জেলা পরিষদ চলবে। উন্নয়নের রূপরেখাও সবাইকে নিয়েই তৈরি হবে। গতবারের কিছু ত্রুটি থাকলে আপনারা মাফ করে দেবেন।’’ শান্তনু সেনও বলেন, ‘‘কেউ ত্রুটি করলে ফল যেন দলকে ভুগতে না হয়।’’ শান্তিরামবাবুও বলেন, ‘‘আবেদন করছি, এই জেলা পরিষদ মানুষের জেলা পরিষদ হয়ে ওঠে।’’

বিজেপির সাত সদস্যের কেউই জেলা পরিষদে আসেননি। দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়া সত্ত্বেও যে ভাবে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলি আমাদের কাছ থেকে তৃণমূল দখল করেছে, এবং প্রশাসন যে ভাবে তাতে মদত যুগিয়েছে, তাতে জেলা পরিষদের বোর্ড গঠন বয়কট করারই শ্রেয়।’’ তবে কংগ্রেসের তিন সদস্য অবশ্য হাজির ছিলেন।

বোর্ড গঠন উপলক্ষে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জেলা পরিষদ ভবনকে ঘিরে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। তবে উছ্বাসে তৃণমূল কর্মীরা রাস্তায় নেমে নাচানাচি শুরু করে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন