flood

flood: অজয়ের রোষে ‘মুছে’ গেল সুন্দরপুর

সব থেকে বেশি ক্ষতির কবলে পড়েছে বাঁধ লাগোয়া সুন্দরপুর।গ্রামের দুই-তিন তলা পাকাবাড়িও ভেঙে গিয়েছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

নানুর শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২১ ০৭:০৩
Share:

ভেঙেছে খয়রাশোলের পাহাড়পুর যাওয়ার পথ।

রাত জেগে বাঁধ মেরামতির চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। কিন্তু, ফুলেফেঁপে ওঠা অজয়ের সামনে সুন্দরপুরের গ্রামবাসীদের সেই প্রতিরোধ খুড়কুটোর মতো উড়ে গেল। আশঙ্কাকে সত্যি করে ভেঙে পড়ল অজয় নদের বাঁধ। তার জেরে প্লাবিত হল নানুর ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রাম। তার মধ্যে সুন্দরপুর কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। বন্যাদুর্গত মানুষেরা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।

Advertisement

প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে দুটো নাগাদ নানুরের সুন্দরপুর এবং নতুনডাঙাপাড়ার মাঝে অজয়ের বাঁধের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ ভেঙে যায়। এর ফলে থুপসড়া পঞ্চায়েত এলাকার সুন্দরপুর, নতুন ডাঙাপাড়া, সিধাই ডাঙাপাড়া, কুড়গ্রাম, তাকোড়া, রামকৃষ্ণপুর প্রভৃতি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। সকালে নতুন করে জলবন্দি হয় লাগোয়া নওয়ানগর-কড্ডা পঞ্চায়েতের নবস্থা, বাইতারা প্রভৃতি গ্রাম। তবে, সব থেকে বেশি ক্ষতির কবলে পড়েছে বাঁধ লাগোয়া সুন্দরপুর। ওই গ্রামে ১২০টি পরিবারের বাস। গ্রামের দুই-তিন তলা পাকাবাড়িও ভেঙে গিয়েছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি।

সুন্দরপুরের বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধে। বাসাপাড়া বাজার থেকে কিলোমিটার ছয়েক রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় বোলপুর-পালিতপুর রুটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ দিন ঘুরপথে যেতে যেতে দেখা গেল শুধু জল আর জল। বাঁধভাঙা জল হু হু করে ঢুকছে আর তলিয়ে যাচ্ছে ধানি জমি, রাস্তাঘাট। তোড়ের মুখে ভেসে আসছে গাছপালা, আস্ত খড়ের পালুই। সুন্দরপুরের বাসিন্দা তথা নানুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য ভরত মাঝি, স্থানীয় চিরঞ্জিৎ ঘোষ, মানিক মাঝি , সুদেব মাঝিরা বলেন, ‘‘আমরা রাত জেগে বাঁধ মেরামত করছিলাম। কিন্তু, শেষরক্ষা হল না। আচমকা বাঁধ ভেঙে হুহু করে অজয়ের জল গ্রাম অভিমুখে ধেয়ে এল! বাড়ির লোকদের সাবধানও করতে পারিনি। দুপুর পর্যন্ত কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জানি না কে কোথায় আছে!’’

Advertisement

ওই গ্রামেরই রেনুপদ মেটে, পার্বতী মেটেরা বললেন, ‘‘সারা রাত ভয়ে চোখের পাতা এক করতে পারিনি। বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে কোনও মতে প্রাণ নিয়ে বাঁধে আশ্র‍য় নিয়েছি। কিছুই বের করে আনতে পারিনি। ঘরের জিনিসপত্র, গরুছাগল সব ভেসে গিয়েছে।’’ এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ দু’টি স্পিডবোটে সুন্দরপুরে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা টিমের সদস্যরা। কিন্তু, জলের তোড়ে মাঝপথ থেকে তাঁদের ফিরে আসতে হয়। শেষে বিকাল ৪টে নাগাদ গ্রামে পৌঁছোতে সমর্থ হন তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন থুপসড়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মিরমাখন আলি। তিনি জানান, তিনটি পাকাবাড়ি ছাড়া গ্রামের চিহ্নমাত্র নেই।

এ দিন এলাকা পরিদর্শনে আসেন জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী, নানুরের বিধায়ক বিধানচন্দ্র মাঝি, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খান, বোলপুরের এসডিপিও অভিষেক রায়, বিডিও শৌভিক ঘোষাল প্রমুখ। বিডিও জানান, অন্তত ১০-১২টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। ৫০ হাজারের বেশি মানুষ দুর্গত। সব মিলিয়ে ৬৫০০ জনকে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে আনা হয়েছে। শুকনো খাবারের পাশাপাশি যেখানে সুযোগ রয়েছে, সেখানে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ দিন পরের দিকে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও এলাকা পরিদর্শন করেন। কিছু ত্রাণ সামগ্রী দেন।

অন্য দিকে, অজয়ের জল বাড়ায় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই নদ তীরবর্তী ইলামবাজারের ভুবনেশ্বর, নারায়ণপুর, সন্তোষপুর, ক্ষুদ্রপুর, উদয়পুর প্রভৃতি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বহু বাড়ি ও দোকানঘরের
পাশাপাশি এলাকায় বিঘের পর বিঘে চাষের জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। চাষিরা ফসলে খুবই ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। ইলামবাজার ব্লক সহ কৃষি অধিকর্তা শুভজিৎ মজুমদার বলেন, ‘‘অজয় লাগোয়া গ্রামগুলি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন