কলেজে পড়ার ইচ্ছে, কিন্তু দিশা নেই

বাবার মৃত্যুর তিন দিনের মধ্যেই শোক নিয়েই পরীক্ষায় বসতে হয়েছিল ঝালদা শহরের বিকে পাড়ার মেয়ে বৃষ্টি ঘোষকে। ঝালদা গার্লস হাইস্কুল থেকে সে ৯১ শতাংশ নম্বর পেয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ১৭:০০
Share:

বৃষ্টি ঘোষ, অজয় কর্মকার, নীলা মাহাতো

জেলার তিন প্রান্তে ওদের বাড়ি। কিন্তু ভাগ্য যেন এক সুতোয় বাঁধা। একজন শৈশবেই বাবাকে হারিয়েছে। অন্যজনের বাবা সদ্য মারা গিয়েছে। আর এক জনের বাবা গুরুতর অসুস্থ। এমন প্রতিকূলতাকে সামলেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে নজর কেড়েছে তিন দুঃস্থ মেধাবী।

Advertisement

বাবার মৃত্যুর তিন দিনের মধ্যেই শোক নিয়েই পরীক্ষায় বসতে হয়েছিল ঝালদা শহরের বিকে পাড়ার মেয়ে বৃষ্টি ঘোষকে। ঝালদা গার্লস হাইস্কুল থেকে সে ৯১ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। কিন্তু এই ফলে খুশির বদলে দুঃশ্চিন্তায় সে। বাবা লক্ষ্মীনারায়ণ ঘোষ ঝালদার একটি বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের দোকানে কাজ করতেন। বাস করতেন একটি মাত্র ঘুপচি ঘরে। কিন্তু মেয়েকে কখনও পড়াশোনায় নিরুৎসাহ করেননি। কিন্তু হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যুর পরে আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় বর্ষার কলেজে পড়া বড়সড় প্রশ্নের মুখে। বর্ষার মা শুভ্রাদেবীর কথায়, ‘‘স্বামীর ইচ্ছে ছিল, যতই অভাবের সংসার হোক, ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করবেন। ছেলে রাঁচির একটি কলেজে পড়ে। কিন্তু মেয়েকে কলেজে ভর্তি করব কী করে জানি না।’’

কাশীপুরের সুতাবই গ্রামে অজয় কর্মকার ছেলেবেলাতেই বাবাকে হারায়। মায়ের টিউশন পড়ানোর খরচে তাদের সংসার চলে। মাধ্যমিকে ৮২ শতাংশ নম্বর পেয়েও দারিদ্রের কারণে সে বিজ্ঞান নিতে পারেনি। তবে কলা বিভাগে পড়েই তালাজুড়ি শ্রীমতী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সে এ বার ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে। না হলে প্রাথমিক শিক্ষকতার প্রশিক্ষণে ভর্তি হব। তাহলে একটা চাকরি অন্তত জুটবে। সংসারে স্থানীয় আয়ের বড় প্রয়োজন।’’

Advertisement

পুরুলিয়া ১ ব্লকের চাষমোড় এলাকার বাসিন্দা নীলা মাহাতোর বাবা এমনই অসুস্থ যে কাজ করতে পারেন না। তাই তার মা পূর্ণিমাদেবী সংসার চালাতে চাষমোড়ে একটা সেলাইয়ের দোকান চালান। তাই রান্নাবান্না করা, অসুস্থ বাবাকে দেখা, ভাইকে স্কুলের জন্য তৈরি করে দেওয়া থেকে সব কাজ সামলে নীলা সিন্দরি-চাষরোড উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৯১ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। নীলার ইচ্ছে, ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষকতা করার। পাড়ার ছেলেমেয়েদের বিনা পারিশ্রমিকে সে ইতিমধ্যে পড়াশোনা করাচ্ছে। কিন্তু নিজের উচ্চশিক্ষার দিশা কোথায়, হাতড়াচ্ছে সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন