পিকনিকে গিয়ে চোট, কিশোরের মৃত্যু ঘিরে রহস্য

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত গৌরব গুপ্তের (১৭) বাড়ি বড়জোড়ায় সিপিএমের পার্টি অফিসের কাছে। সে বড়জোড়া হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বড়জোড়া শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩০
Share:

মৃত গৌরব গুপ্ত। —নিজস্ব চিত্র

পাঞ্চেতে পিকনিক করতে গিয়ে চোট পেয়ে মৃত্যু হল বড়জোড়ার এক স্কুলছাত্রের। কিন্তু, কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটল না।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত গৌরব গুপ্তের (১৭) বাড়ি বড়জোড়ায় সিপিএমের পার্টি অফিসের কাছে। সে বড়জোড়া হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। শুক্রবার গৌরবের দেহ বাঁকুড়া মেডিক্যালে ময়না-তদন্ত করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কী ভাবে ওই ছাত্রের মৃত্যু হল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বড়জোড়ার একটি কম্পিউটার কোচিং সেন্টার থেকে বৃহস্পতিবার পাঞ্চেত জলাধারে ছাত্রছাত্রীদের পিকনিক করতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই কোচিং সেন্টারের ছাত্র ছিল গৌরব। পুলিশ জানিয়েছে, পিকনিকে গিয়ে কোনও ভাবে উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চোট পায় সে। তবে কী ভাবে, কোথা থেকে সে পড়ে গেল, তা এ দিন পর্যন্ত পরিষ্কার ভাবে জানা যায়নি।

Advertisement

গৌরবের বাবা রঞ্জিত গুপ্ত পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ। কয়েক বছর আগে গৌরবের মা মারা যান। এক মাত্র ছেলে গৌরবকে নিয়েই থাকতেন রঞ্জিতবাবু। গৌরবের কাকা ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত এ দিন অভিযোগ করেন, ‘‘গৌরব কী করে চোট পেল বুঝতে পাচ্ছি না। যে শিক্ষক ওদের বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনিও প্রথমে নিজে থেকে কিছু জানাননি। দীর্ঘক্ষণ গৌরবের সঙ্গে যোগাযোগ না হওয়ায় দাদা ওকে ফোন করে। সেই ফোন ধরেন ওই কম্পিউটার শিক্ষক। তখনই তিনি জানান, পড়ে গিয়ে হাতে চোট পেয়েছে গৌরব।”

গৌরবের পরিবারের দাবি, কম্পিউটার শিক্ষক তাঁদের কাছে দাবি করেছেন, দুর্ঘটনার পরে স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। বাইরে থেকে দেখে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক গুরুতর কিছু অনুমান করতে পারেননি। পরে গৌরব আরও অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিকেলে তাকে বড়জোড়ায় এনে স্থানীয় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে দুর্গাপুরের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, সেখানকার চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে মৃত বলে জানান। সেখান থেকে গৌরবের দেহ বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ দিন চেষ্টা করেও ওই কম্পিউটার শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পিকনিকে যাওয়া গৌরবের সহপাঠীরাও ঘটনাটি নিয়ে কিছু বলতে চায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনা সম্পর্কে জানতে তাদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলা হবে।

এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমেছে এলাকায়। বড়জোড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় বলেন, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। শান্ত স্বভাবের বুদ্ধিমান ছেলে ছিল গৌরব। আমরা এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ।” ইন্দ্রজিৎবাবুর আক্ষেপ, “বৌদির মৃত্যুর পরে দাদা গৌরবকে আঁকড়ে ধরে ছিল। আমিও অবিবাহিত। আমাদের পুরো পরিবারের ভবিষ্যৎ বলতে কেবল গৌরবই ছিল। এই দুর্ঘটনা আমাদের সব কিছু কেড়ে নিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন