গ্রামে মূর্তি দুলাল ও ত্রিলোচনের

ত্রিলোচনের দাদা বিবেক মাহাতো বলেন, ‘‘ভাইয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে আমরা বাড়ির সামনে ওর আবক্ষ মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

Advertisement

প্রশান্ত পাল 

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৯ ০৩:৩০
Share:

যে দিন ঝুলন্ত দেহ গাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল, এক বছর পরেই সেই দিনগুলিতেই গ্রামে তাঁদের মূর্তি বসানোর কথা জানাল ত্রিলোচন এবং দুলালের পরিবার।

Advertisement

গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের ফল বেরনোর পরে, ৩০ মে বলরামপুরের সুপুরডি গ্রামে বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতোর দেহ উদ্ধার হয়। গাছ থেকে ঝুলছিল দেহটি। সঙ্গে মেলে চিরকুট। তাতে লেখা, ‘বিজেপি করার ফল’। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২ জুন বলরামপুরের আর এক প্রান্তে, ডাভা গ্রামের বিজেপি কর্মী দুলাল কুমারের দেহ মেলে বিদ্যুতের হাইটেনশন তারের খুঁটিতে ঝুলন্ত অবস্থায়। দু’টি ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দেয়।

ঘটনার প্রায় বছর পার হতে চলল। ত্রিলোচনের দাদা বিবেক মাহাতো বলেন, ‘‘ভাইয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে আমরা বাড়ির সামনে ওর আবক্ষ মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আদ্রার এক শিল্পীকে মূর্তি তৈরি করতে দেওয়া হয়েছে। যে দিন ওর দেহ মিলেছিল, সে দিনই মূর্তি বসবে। অনুষ্ঠান হবে।’’ তিনি জানান, মূর্তি তৈরির কাজ বেশ কিছুটা এগিয়েও গিয়েছে। দুলালের ভাই কৃষ্ণ কুমার বলেন, ‘‘দাদার মৃত্যুদিনে গ্রামে ওর মূর্তি বসানো হবে বলে আমরা ঠিক করেছি। মূর্তি তৈরির অর্ডারও দেওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

দুই পরিবারেরই দাবি, তাঁরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে মূর্তি স্থাপন করছেন। বিবেক বলেন, ‘‘৩০ মে দিনভর অনুষ্ঠান হবে গ্রামে। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জেলা নেতৃত্বও আসবেন। তাঁদের কেউ আবরণ উন্মোচন করবেন।’’ কৃষ্ণ বলেন, ‘‘দলকে কিছু জানাইনি। ভোটটা পেরিয়ে যাক। তার পরে জানাব। নিজেরাই খরচটা দিয়ে দেব।’’ তবে বিজেপির বলরামপুর ব্লকের সাধারণ সম্পাদক গোপাল কাটারুকা বলেন, ‘‘দলই সব খরচ বহন করবে। ওঁরা দু’জনেই বিজেপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা শহিদ পরিবারের পাশে সব সময়ে রয়েছি।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গত পঞ্চায়েত ভোটে বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির ২০টি আসনের মধ্যে ১৭টিতে জয়ী হয় বিজেপি। বলরামপুর থেকে পরাজিত হন জেলা পরিষদে তৃণমূলের বিদায়ী সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। বিজেপি অভিযোগ তোলে, রাজনৈতিক আক্রোশে খুন করা হয়েছে তাঁদের কর্মীদের। বর্তমানে সিআইডি দু’টি ঘটনার তদন্ত করছে। সিবিআই তদন্তের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে বিজেপি। দুলাল-কাণ্ডে কেউ গ্রেফতার না হলেও ত্রিলোচন-কাণ্ডে সিআইডি প্রথমে পাঞ্জাবি মাহাতো নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। ওই মামলাতেই পরে গ্রেফতার হন সৃষ্টিধর মাহাতোর বড় ছেলে সন্দীপ-সহ আরও দু’জন।

ত্রিলোচন এবং দুলালের ঘটনা বিজেপির লোকসভা ভোটের প্রচারে উঠে আসছে। সম্প্রতি আড়শার সেনাবনা গ্রামে বিজেপি কর্মী শিশুপাল সহিসের দেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘটনাকেও একটি সূত্রে গেঁথে শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছে গেরুয়া শিবির। তবে তৃণমূলের বলরামপুর ব্লকের কার্যকরী সভাপতি সুভাষ দাসের বক্তব্য, ‘‘ত্রিলোচন, দুলাল এবং শিশুপালের মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখের। কিন্তু মৃত্যু নিয়ে টানা রাজনীতি করে চলেছে বিজেপি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন