প্রতীকী ছবি।
এক শিশুর মৃত্যুর পরে তারই ঠাকুমা এবং পিসি-ঠাকুমাকে ডাইনি অপবাদ দেওয়াকে ঘিরে মঙ্গলবার অশান্ত হয়েছিল আদ্রার গোঁসাইডাঙা গ্রাম। মৃত সেই শিশুর দেহ মর্গেই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের উপরে হামলার ঘটনায় শিশুটির মাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাবা পলাতক। এই অবস্থায় শিশুটির দেহ মর্গেই সংরক্ষণ করে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস। বুধবার রিয়া মাল নাম বছর আড়াইয়ের ওই শিশুকন্যার দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। পুলিশ সুপার এ দিন বলেন, ‘‘শিশুটির পরিবারের তরফে কেউ এখনও অবধি দেহ নেওয়ার আবেদন না জানানোয় মর্গেই রাখা হচ্ছে।’’ রিয়ার মা মালা মাল-সহ ধৃত সাত জনকে এ দিন রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে সকলেরই জেল হাজত হয়েছে।
অন্য দিকে, ডাইনি অপবাদে নিগৃহীত ওই দুই প্রৌঢ়াকে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালিত বৃদ্ধাবাসে রাখা হয়েছে। সঙ্গে আছেন এক প্রৌঢ়ার স্বামীও। তবে, সেই বন্দোবস্ত করাও খুব মসৃণ হয়নি পুলিশের পক্ষে। পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ ওই তিন জনের আসার খবর চাউর হতেই গোঁসাইডাঙার বেশ কিছু বাসিন্দা বৃদ্ধাবাসে উপস্থিত হয়ে তাঁদের কোনও ভাবেই গ্রামে রাখা চলবে না বলে দাবি তুলতে থাকেন। খবর পেয়ে যায় আদ্রা থানার পুলিশকর্মীরা গিয়ে গ্রামবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিছুটা নিমরাজি হয়েই কিছু সময়ের জন্য ওই তিন জনকে বৃদ্ধাবাসে রাখার ঘটনা গ্রামবাসীরা মেনে নিয়েছেন।
পরিস্থিতি বুঝে এখনই ওই তিন জনকে পাঠাতে চাইছে না প্রশাসন। তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে বৃদ্ধাবাসে পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আপাতত অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসাবে ওই তিন জনকে বৃদ্ধাবাসে রাখা হয়েছে। পুলিশকে ঘটনার বিশদ রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরেই জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
এ দিন বৃদ্ধাবাসে বসে ওই দুই প্রৌঢ়া বলেন, ‘‘সোমবার রাতে নাতনিকে বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছিল বৌমা ও পড়শিরা। আমরা ডাইনি নই বহুবার বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কেউ শুনতে রাজি হয়নি। উল্টে বেঁধে মারধর করেছিল আমাদের।” তাঁদের আশঙ্কা, গ্রামে ফিরলে ফিরলে হামলা হতে পারে তাঁদের উপরে। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই।
ফলে, গ্রামবাসীদের মন থেকে অন্ধবিশ্বাস দূর করে ওই তিন জনকে তাঁদের বাড়িতে ফেরানোই পুলিশ-প্রশাসনের কাছে মূল চ্যালেঞ্জ।