টেরাকোটা: স্টেশনপাড়া প্রাইভেট রোডের মণ্ডপ। ছবি: সুজিত মাহাতো
কোথাও মণ্ডপ দেখলে মনে হবে, সামনে টেরাকোটা মন্দির, কোথাও আবার মনে হবে আদিবাসী গ্রামের পুজোয় চলে এসেছেন। কেউ আবার পুজোর থিমে হাজির করেছে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পকে। কোনও মণ্ডপে উদ্যোক্তারা দেবীকে কল্পনা করেছেন হাজার ভূজা হিসেবেই। এমনই নানা ভাবনায় সেজে উঠেছে পুরুলিয়া শহরের কয়েকটি মণ্ডপ।
পুরুলিয়া জেলায় থিম বা বড় বাজেটের পুজো করায় বেশ কয়েক বছর ধরেই এগিয়ে রয়েছে রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকার কয়েকটি পুজো। তবে পিছিয়ে নেই পুরুলিয়া শহরের পুজো উদ্যোক্তারা। ‘বিগ বাজেট’-এর না হলেও ধীরে ধীরে শহরের পুজো কমিটিগুলি কিন্তু নিজেদের সাধ্যমতো খরচ করে থিমের দিকে ঝুঁকছে।
যেমন স্টেশন পাড়া সংলগ্ন পুরুলিয়া প্রাইভেট রোড মহিলা মণ্ডলের সম্পাদক সঙ্গীতা ভার্মা বলছেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর ধরেই থিম ধরে পুজো করার চেষ্টা করছি আমরা। পঞ্চকোট রাজবাড়ি, সাক্ষরতা, বাঁশ শিল্প-সহ নানা বিষয়ে ইতিপূর্বে আমরা উপস্থাপন করেছি। আমাদের এ বারের থিম: বাংলার টেরাকোটা।’’ তিনি জানান, বাংলার বিভিন্ন এলাকায় এক সময়ে টেরাকোটার অনেক মন্দির তৈরি হয়েছিল। সেই মন্দিরগুলি এখন দেশের সম্পদ। তেমনই একটি মন্দিরকে এ বার তাঁরা তুলে এনেছেন মণ্ডপে।
এই মণ্ডপ তৈরি করেছেন শিল্পী রাজু সেন। তিনি বলেন, ‘‘টেরাকোটার কাজ এখনও বাঁকুড়ার পাঁচমুড়া গ্রামে হয়। কিন্তু টেরাকোটার মন্দির কোথাও তৈরি করা হচ্ছে না। এ রকম একটি শিল্প কি তবে অবহেলায় হারিয়ে যাবে? এ বার পুজোয় এই বার্তাই আমরা দিতে চাইছি।’’ তিনি জানান, বাঁকুড়ার শ্যামরাই মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে।
শহরের রথতলা সর্বজনীনও কয়েক বছর ধরে বিশেষ কোনও একটি ভাবনাকে ধরে পুজো করার চেষ্টা করছে। এ বার আমরা একটি আদিবাসী গ্রামকেই আমাদের মণ্ডপে তুলে আনছি। পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা শ্রীমন সরকার বলেন, ‘‘শহরের প্রতিদিনের জীবনযাপনে গ্রামেরও ভূমিকা রয়েছে। সেই বার্তাই এ বারের পুজোয় আমরা দিতে চাইছি।’’ শিল্পী হাবলু বাউরি এখানে মণ্ডপ নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মণ্ডপে ঢুকলেই মনে হবে আপনি কোনও আদিবাসী গ্রামে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। খড়ের পালুই, ছড়ানো উঠোন, সামনে ইটের কুয়ো, মেঠো রাস্তা, উঠোনের এক কোণে গরুর গাড়িও রয়েছে। সেই গ্রামে প্রাচীন ঠাকুরদালানে দেবীর পুজো হচ্ছে।’’
পরিবেশকে আঁকড়েই এ বার থিম করেছে তেলকলপাড়া সর্বজনীন। আগে এই পুজো কমিটি কাশফুল, সামুদ্রিক পুঁতি ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করে ঠাকুর তৈরি করে দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে। উদ্যোক্তাদের অন্যতম অজিত মাহাতোর কথায়, ‘‘তালপাতা ব্যবহার করে দেবীমূর্তি তৈরি হচ্ছে। যেহেতু পরিবেশ বান্ধব বিষয়কেই আমরা এ বার থিম হিসেবে ভেবেছি। তাই গ্রামকে নির্মল রাখা কেন জরুরি, সেই বার্তাও রয়েছে। মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্প সার্থক ভাবে রূপায়িত হলে পরিবেশ কী ভাবে সুরক্ষিত হবে, সেই বার্তাও দিয়েছি আমরা।’’
নডিহা বারোয়ারির আকর্ষণ প্রতিমা। এই পুজো কমিটি এ বার হাজার ভূজা হিসেবেই দেবীকে হাজির করছে। কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা শম্ভু সরকার বলেন, ‘‘দিনদিন মানুষের জীবনে চাপ বেড়েই চলেছে। এ থেকে মুক্তির জন্য দেবী এখানে হাজার হাতে আশীর্বাদ করছেন।’’