রাজনগর

প্রাচীন শহরে মেয়েদের মাত্র একটি স্কুল

বাংলার প্রান্তিক শহর ঝালদা একটি প্রাচীন জনপদ। নানা ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে ঝালদাকে। কিন্তু এত বছর হয়ে গেল নারীশিক্ষা আজও অবহেলিত ঝালদায়। এখানে মেয়েদের স্কুল একটিই। ওই একটি স্কুলের উপর শুধু ঝালদারই নয়, আশপাশের এলাকার ছাত্রীদেরও চাপ বাড়ছে। বাড়তে বাড়তে এমনই অবস্থা যে ছাত্রীর সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়ে এখন তিন হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৫ ০১:৩৯
Share:

সরু রাস্তা। তাও গিলেছে দোকান। বাসস্ট্যান্ড না থাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকছে গাড়ি। তাই যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি নেই। ছবি: প্রদীপ মাহাতো।

বাংলার প্রান্তিক শহর ঝালদা একটি প্রাচীন জনপদ। নানা ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে ঝালদাকে। কিন্তু এত বছর হয়ে গেল নারীশিক্ষা আজও অবহেলিত ঝালদায়। এখানে মেয়েদের স্কুল একটিই। ওই একটি স্কুলের উপর শুধু ঝালদারই নয়, আশপাশের এলাকার ছাত্রীদেরও চাপ বাড়ছে। বাড়তে বাড়তে এমনই অবস্থা যে ছাত্রীর সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়ে এখন তিন হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এই ঝালদা গার্লস স্কুলের ভবনও অনেক দিনের। তাই আগের তুলনায় এখন ছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় সবার বেঞ্চে জায়গা হয় না। অনেককে এখন মেঝেতে বসতে হয়। যে কোন জনপদকে এগোনোর জন্য শিক্ষার প্রয়োজন। আমার দাদু স্বর্গীয় রায়সাহেব প্রেমচাঁদ মোদক ঝালদা সত্যভামা উচ্চ বিদ্যালয় গড়ার জন্য জমি দান করেছিলেন। তিনি লটারিতে টাকা পেয়ে ১৭টি বাস কিনেছিলেন। শক্তি বাস সার্ভিস নামে সে সময় জেলার বিভিন্ন রুটে চলত এই বাসগুলি। জেলার ভাষা আন্দোলনে যুক্ত কর্মীদের এই বাসে চড়ার ফ্রি পাসও দেওয়া হতো। কিছুদিন আগে ঝালদার ইচাগে একটি মডেল স্কুল গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। সেখানেও আমরা জমি দিয়েছি। ঝালদার মানুষ ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এ বার এখানে মেয়েদের আর একটি বালিকা বিদ্যালয় গড়ে তোলা হোক। প্রয়োজনে আমাদের যেটুকু জমি রয়েছে তাও স্কুল গড়ার জন্য আমরা দিতে প্রস্তুত।

Advertisement

গোকুল মোদক, নামোপাড়া

Advertisement

নেই উন্নত যোগাযোগ

প্রাচীন শহর। কিন্তু এখনও ঝালদা থেকে সরাসরি কলকাতায় যাওয়ার কোনও ট্রেন নেই। সকালে অফিসের সময়ে জেলা সদর পুরুলিয়াতে পৌঁছনোরও কোন ট্রেন। তবে মন্দের ভাল পুরুলিয়া থেকে ঝালদায় আসার একটি ট্রেন কিছুদিন আগে দেওয়া হয়েছে। তাতে ঝালদায় যাঁরা আসতে চান তাঁদের পক্ষে সুবিধে হয়েছে। কিন্তু সকালে পুরুলিয়ায় গিয়ে সারাদিন কাজ করে বিকেলে ঝালদায় ফেরার কোনও ট্রেন নেই। ঝালদাবাসীর এই দাবি উপেক্ষিতই রয়ে গিয়েছে। অবহেলিত ঝালদার চিকিৎসা ব্যবস্থাও। শুধু ঝালদা পুরশহরই নয়, আশপাশের অনেক গ্রাম ঝালদার উপর নির্ভরশীল। তাই এই এলাকার অনেক মানুষ বাধ্য হয়ে ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচির উপরে বেশি নির্ভরশীল। আমাদের কথা ভেবে এখানে আরও ট্রেন যোগাযোগ ও একটি হাসপাতাল গড়ে তোলা হোক।

শীলা মোদক, চাটানি পাড়া

যানজট থেকে মুক্তি চাই

যানজট ঝালদার নিত্যদিনের সমস্যা। ইদানীং যানজটের এই সমস্যা ঝালদাবাসীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে সকালের দিকে যানজটে হাঁসফাঁস করতে হয়। পুরুলিয়া-রাঁচি মূল রাস্তা জুড়ে ঝালদা জনপদটির অনেকটা অংশ ছড়িয়ে রয়েছে। রাস্তার চারপাশে দোকান চালু হওয়ায় দিন দিন এই রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। একই অবস্থা বিভিন্ন ওয়ার্ডের রাস্তাঘাটগুলিরও। দুটো গাড়ি পাশাপাশি যেতে পারে না। তাছাড়া বাসস্ট্যান্ড নেই। ফলে রাস্তার উপরেই বাস দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে অন্য গাড়িও দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে যানজট আরও বাড়ে। এ দিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া চাই।

তপনকুমার হালদার, নামোপাড়া

খেলাধুলোয় নজর চাই

ঝালদার খেলাধুলোর দিকটি বর্তমানে বড়ই উপেক্ষিত। এক সময় ঝালদায় খেলাধূলোর প্রসার ছিল। বর্তমান প্রজন্ম মাঠ থেকে মুখ ফেরাচ্ছে। এখানে প্রতিভার অভাব নেই। শুধু দরকার তাঁদের সুযোগ দিয়ে তুলে আনার। জিমও গড়া প্রয়োজন। তাহলেই শরীরচর্চায় উৎসাহ বাড়বে। ঝালদায় সংস্কৃতি চর্চার মঞ্চও নেই। সংস্কৃতি চর্চা অত্যন্ত জরুরি। মঞ্চের অভাবে ভাল অনুষ্ঠান করা যায় না। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত নাট্যব্যক্তিত্ব শৈশবে কিছুদিন ঝালদায় তাঁর মাসির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। পাশাপাশি সত্যকিঙ্কর দত্তের মতো শহিদের স্মৃতিরক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

মলয় চৌধুরী, পোদ্দারপাড়া

সুবর্ণরেখা প্রকল্প চাই

ঝালদার পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। আজও সেই সমস্যা মিটল না। অযোধ্যা পাহাড়ের পাদদেশে মুরগুমা জলাধার থেকে নলবাহিত পানীয় জল ঝালদায় নিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পাইপলাইন থাকলেও সেখানে কলে জল পড়ে না। কোথাও জলের ধারা অত্যন্ত ক্ষীণ। অনেককাল ধরে শুনে আসছি সুবর্ণরেখা নদী থেকে ঝালদায় পানীয় জল নিয়ে আসা হবে। পুরুলিয়া শহরেও পানীয় জলের সমাধান হতে চলেছে বলে শুনেছি। কিন্তু কেন ঝালদা ব্রাত্য রয়ে গেল? পানীয় জলের মতো বিষয়ের সমাধান কেন হল না? কবে সুবর্ণরেখা প্রকল্প বাস্তবের মুখ দেখবে।

বিপ্রাশিস চট্টোপাধ্যায়, বিকে পাড়া

নির্মল হোক আমার শহর

এত্তা জঞ্জাল! এটাই ঝালদার পরিচিত চিত্র।— নিজস্ব চিত্র।

প্রকৃতির অকৃপণ দানে সাজানো ঝালদা। কিন্তু ঝালদার বেশ কিছু ওয়ার্ডে চোখে পড়বে নর্দমা বা ড্রেনের উপরে বসে শৌচকর্ম করার দৃশ্য। আমার মতে, বস্তি এলাকায় শৌচালয় গড়ার বিষয়টিতে দৃষ্টি দেওয়া হোক। সুলভ শৌচালয়ও চাই।

কাঞ্চন চট্টোপাধ্যায়, পোদ্দার পাড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন