পাখিদের নিয়ে দোকানে সংসার

দোকানের কাউন্টারের সামনে এসে হাজির এক ঝাঁক পায়রা। গমের দানা তুলে নিতেই উড়ে এসে অমরনাথবাবুর হাতে জুড়ে বসল দু’টি। ভয়ডরের বালাই নেই। প্রৌঢ় বলেন, ‘‘চার দশকের পুরনো খাবারের দোকান। মাঝেমধ্যেই পায়রা-কুকুর-ছাগল চলে আসত। কর্মচারীরা তাড়িয়ে দিতেন। খারাপ লাগত।’’ 

Advertisement

সমীর দত্ত

পুঞ্চা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:০০
Share:

হাতে চড়ে। নিজস্ব চিত্র

মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়। কিন্তু পুঞ্চার ডাঙা বাজারের এক চিলতে মিষ্টির দোকানে যেন অন্য কবিতার দেশ। ভিড় যখন পাতলা হয়ে আসে, দোকানে নেমে আসে পায়রার ঝাঁক। গুটিগুটি পায়ে হাজির হয় ক’টা ছাগল। ভীতু নেড়ি। এদের নিয়েই দিব্যি আছেন অমরনাথ হালদার।

Advertisement

এরই মধ্যে এক দিন দোকানটিতে গিয়ে সাক্ষাৎ হল অমরনাথবাবুর সঙ্গে। আকাশের অর্ধেকেরও বেশি পার করে চলে এসেছে সূর্য। ঘড়ির কাঁটা বলছে— আড়াইটে বাজে। দোকানের কাউন্টারের সামনে এসে হাজির এক ঝাঁক পায়রা। গমের দানা তুলে নিতেই উড়ে এসে অমরনাথবাবুর হাতে জুড়ে বসল দু’টি। ভয়ডরের বালাই নেই। প্রৌঢ় বলেন, ‘‘চার দশকের পুরনো খাবারের দোকান। মাঝেমধ্যেই পায়রা-কুকুর-ছাগল চলে আসত। কর্মচারীরা তাড়িয়ে দিতেন। খারাপ লাগত।’’

কিন্তু কতগুলো কুকুর নাছোড়বান্দা। দিনান্তে তাদের জুটত বেঁচে যাওয়া সিঙাড়া, মিষ্টি। অমরনাথবাবু বলেন, ‘‘মাস দশেক আগে এক দিন হঠাৎ কী মনে হল, দোকানে থাকা কিছু গম মুঠো করে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম।’’ সেই শুরু। তার পরে রোজই তিনি এমনটা করে চলেছেন। পুঞ্চার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মৃণালকান্তি দত্ত, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মী চিত্ত হালদারেরা বলেন, ‘‘অমরদাকে পায়রাগুলো এখন আর ভয় পায় না। দানা পেতে দেরি হলে গোটা কাউন্টার জুড়ে বসে পড়ে।’’ ক্রেতা এসে পড়লে তাঁদের মোবাইলে বন্দি হয় সেই দৃশ্য।

Advertisement

পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িও পুঞ্চায়। মিষ্টি আনতে মাঝে মধ্যে অমরবাবুর দোকানে ঢুঁ মারেন বলে জানাচ্ছেন তিনিও। বলছিলেন, ‘‘পায়রার দল অমরনাথের হাত থেকে খাবার খুঁটে খায়। বড্ড ভাল লাগে। ওই সময়টায় দোকানে গেলে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি।’’

পায়রার দল আসে দিনে দু’বার। এক বার সকাল ৭টা নাগাদ। আবার আড়াইটের পরে। সেই সংসারে রয়েছে গোটা ছয়েক নেড়ি। গোটা চারেক ছাগল। সবার মধ্যেই সদ্ভাব। কুকুরেরা মোটেও পায়রাদের দিকে তেড়ে যায় না— জানাচ্ছেন অমরনাথবাবু। তিনি বলেন, ‘‘একটা ছাগল আছে, সে আবার মাটিতে খাবার পড়ে থাকলে খায় না। হাতে করে খাইয়ে দিতে হয়। ওর নাম অবলাকান্ত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন