সানন্দে: রেডিও বিলির মুহূর্তে। সাঁইথিয়ায়। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
স্মার্টফোনের যুগে সাবক রেডিও পেয়েই খুশি ওঁরা। এত দিন যে সেটাই ছিল না!
এঁদের কেউ দিনমজুর, কেউবা রিকশা চালান। সকলের সংসারেরই নুন আনতে পান্তা ফুরনোর হাল। রেডিও-র বেশি বিনোদন নাগালের বাইরে। কিন্তু, নিত্যনতুন বিনোদনের দাপটে ন্যূনতম ওই মাধ্যমটিও তাঁদের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল। এ নিয়ে আক্ষেপের অন্ত ছিল না। সোমবার মন্মথ দাসদের আক্ষেপ দূর করল সাঁইথিয়ার ‘সপ্তপ্রদীপ সংস্কৃতি সোসাইটি’।
টানা ৪০ বছর ধরে রেডিওতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান শুনে সময় কেটেছে স্থানীয় অমুয়া গ্রামের ৫৮ বছরের রবিন মাড্ডি, কাগজের ঠোঙা বিক্রেতা ৬৫ বছরের বেলারানি কুশারিদের।
তকিপুরের দিনমজুর মন্মথ বায়েন তো কাজ করতে যাওয়ার সময় মাঠেও রেডিও নিয়ে যেতেন। হরিশাড়া প্রতিবন্ধী ৪৬ বছরের দেবকর হাজরার সময় কাটানোর একমাত্র অবলম্বনই ছিল রেডিও। কিন্তু, বেশ কিছু দিন ধরে রেডিও বিকল হয়ে পড়ায় মনমরা হয়ে পড়েন তাঁরা।
কারও রেডিও ঠিক মতো বাজে না। আবার মেরামত করাতে গেলেও দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। কারণ, রেডিও মেরামতির দোকানগুলিই এখন টিভি, হোম থিয়েটার-সহ হাল আমলের বিনোদন যন্ত্র মেরামতির দোকান হয়ে উঠেছে। মিস্ত্রিরা রেডিও সারানোর বদলে ওই সব বিনোদন সামগ্রী সারানোতেই বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েছেন। অনেক দোকানে আবার রেডিও মেরামতের মিস্ত্রিটুকুও নেই। অন্য দিকে, নতুন রেডিও কেনার মতো আর্থিক সামর্থ্যও নেই মন্মথ দাসদের। তাই মন খারাপেই দিন কাটছিল তাঁদের।
সেই মন খারাপ দূর হল এত দিনে। সপ্তপ্রদীপ সংস্কৃতি সোসাইটির পক্ষ থেকে ২০ জন রেডিও-প্রেমীর হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি করে রেডিও। সেই রেডিও হাতে পেতেই খুশির ঝিলিক খেলে গেল রবীন মাড্ডিদের চোখেমুখে। তাঁদেরই অন্যতম ঠাকুরদাস বায়েন, যূথিকা শীলেরা বলেন, ‘‘৪০ বছরের বেশি সময় ধরে রেডিওতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান শুনে সময় কাটাতাম। কিন্তু, রেডিও বিকল হয়ে গিয়েছিল। সেই দিন আবার ফিরে পেলাম।’’
কী করে এল এই পরিকল্পনা?
সংস্থার সদস্যরা জানান, এ বার পুজোর আগে মহালয়া শোনার জন্য রেডিও মেরামত করতে গিয়ে নাকাল হতে হয় বহু রেডিও-প্রেমীকে। অনেকে রেডিওতে মহালয়া শুনতেও পাননি। সেই কথা শোনার পরই পরিকল্পনাটি মাথায় আসে। ওই পরিকল্পনার কথা শুনে অনেকে একটি করে রেডিও কিনে দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের অন্যতম পৌলমী চক্রবর্তী, নিভা মণ্ডল, সুকুমার মণ্ডল। তাঁরা বলছেন, ‘‘এমন একটা উদ্যোগের কথা শুনে হাত গুটিয়ে রাখতে পারিনি।’’
আয়োজক সংস্থার কর্ণধার সুব্রত ঘটক জানান, রেডিও ফেরাতে এরপর আমরা স্কুলে স্কুলে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রেডিও দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সাংস্কৃতিক কর্মী উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কাঞ্চন সরকার, আদিত্য মুখোপাধ্যায়, অতনু বর্মন, শম্ভুনাথ সেন প্রমুখ। তাঁরা জানান, এই রকম একটি উদ্যোগের কথা ভাবাই যায় না!