বর্গাদারদের ‘বাধা’, পাত্রসায়রে ধৃত তিন

শরিকি জমির বর্গা আর মালিকানা-বদল নিয়ে পুরনো জটিলতায় ৩ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সোমবার পাত্রসায়রের ধগড়িয়া গ্রামের কাছে চক পাত্রসায়র মৌজার ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:১০
Share:

পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছে সদ্য-প্রাক্তন প্রধানকে। নিজস্ব চিত্র

শরিকি জমির বর্গা আর মালিকানা-বদল নিয়ে পুরনো জটিলতায় ৩ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সোমবার পাত্রসায়রের ধগড়িয়া গ্রামের কাছে চক পাত্রসায়র মৌজার ঘটনা। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস বলেন, ‘‘চাষে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁরা বাজিতপুর গ্রামের আসগার শেখ ও রফিক মল্লিক এবং ধগড়িয়া গ্রামের শেখ আসগার আলি।’’ সোমবার বিষ্ণুপুর আদালতে ধৃতদের তোলা হলে বিচারক ৩ দিন জেল হাজতের নির্দেশ দেন।

Advertisement

এ দিকে ধৃতেরা দাবি করেছেন, ওই জমি তাঁরা নগদ দামে কিনেছেন। তাঁদের মধ্যে আসগার হামিরপুর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের সদ্য-প্রাক্তন প্রধান। তাঁর দাবি, জমির রেজিস্ট্রি ও মিউটেশনের নথি রয়েছে। আসগারের ছেলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘‘বাবা জমির কাগজ দেখাতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে গেল।’’ তবে মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডলের দাবি, জমিটির নতুন করে মিউটেশন হয়নি। রেজিস্ট্রেশনের সময়েই গোলমাল ধরা পড়ে গিয়েছিল।

প্রশাসনের নথি অনুযায়ী ওই জমির মালিকদের মধ্যে অন্যতম তাপস দে। তিনি সোমবার ফোনে বলেন, ‘‘২০১৫ সালে আমরা জমিটা বিক্রি করি। তখন ভূমি দফতরের নথিতে কোনও বর্গাদার ছিল না। জমিতে চাষও হত না। এখন কোথা থেকে বর্গাদার আসছে আমরাও বুঝতে পারছি না।’’ তিনিও দাবি করছেন, নতুন মালিকদের নামে জমির রেজিস্ট্রেশন এবং মিউটেশন হয়ে গিয়েছিল।

Advertisement

তবে ওই জমির বর্গাদারদের নাম যে একটা সময়ে প্রশাসনের খাতায় ছিল, পরে উড়ে যায়— সেই কথা মেনে নিচ্ছেন পাত্রসায়র ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তাপস পাল। তাঁর দাবি, ডেটা এন্ট্রি অপারেটররা কম্পিউটারে তথ্য তোলার সময়ে গোলমাল পাকিয়েছেন। বাদ পড়ে গিয়েছিল বর্গাদারদের নাম। জানতে পুরো ব্যাপারটা খতিয়ে দেখে আবার সংশোধন করে নেওয়া হয়েছে।

চক পাত্রসায়র মৌজা। দাগ নম্বর জেএল ৪৮। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই জমির জনা তেইশ শরিক ছিলেন। আর দশ জন বর্গাদার। তাঁদের মধ্যে সুকুমার সোরেন, রূপচাঁদ সোরেন, সুকুমার হালদার, মন্টু হালদার, মঙ্গল রুইদাসরা বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে চাষ করছি। ২০১৭-র শেষে কিছু লোক বলে, জমিটা কিনে নিয়েছে। আমরা আর বর্গাদার নই। চাষ করতে পারবে না।’’ তাঁদের দাবি, শুধু মুখের কথা নয়, চাষ করতে গেলে বাধাও দেওয়া হয়। জমি ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন নিয়ে তাঁরা জেলাশাসকের দ্বারস্থ হন।

সোমবার রূপচাঁদ, সুকুমাররা ওই জমিতেই ধান রুয়েছেন। এদিন সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন রয়েছেন। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস, মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল, ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তাপস পালেরাও হাজির। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘বর্গাদারেরা এক বছর চাষে নামতে পারেননি। তাঁরা যাতে আবার চাষ শুরু করতে পারেন, সেটা দেখার জন্য জেলাশাসকের নির্দেশে আমরা এসেছি।’’ এর পরেই আসগারেরা চাষে বাধা দেন বলে অভিযোগ। গ্রেফতার করা হয় তাঁদের।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অগস্টের শেষে মহকুমাশাসকের অফিসে বর্গাদার, জমির মালিক এবং যাঁরা কিনেছেন বলে দাবি— সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসা হয়েছিল। সেখানে স্থির হয়, বর্গাদারদের চাষের সুযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু জমির হস্তান্তরের ব্যাপারে কোনও রফা হয়নি। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘প্রশাসনের নথি অনুযায়ী ওই জমি বিক্রি হয়নি। রেজিস্ট্রেশন আর মিউটেশন না থাকলে জমি কিনেছেন বলে কেউ দাবি করতে পারেন না।’’

এই পরিস্থিতিতে উচ্চ আদালতে মামলা করার কথা ভাবছেন বলে আসগারেরা জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন